পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSO রবীন্দ্র-রচনাবলী অক্ষয়। বল কী বিপিনবাবু? তা হলে চিরকুমার-সভাকে চিরজন্মের মতে কঁাদিয়ে এসেছ ? জেনেশুনে ? ইচ্ছাপূর্বক ? রসিক। না না, তুমি ভুল করছ অক্ষয়! অক্ষয়। আবার ভুল ? আজ কি সকলেরই ভুল করবার দিন হল না কি ?-- গান ভুলে ভুলে আজ ভুলময় ! ভুলের লতায় বাতাসের ভুলে ফুলে ফুলে হােক ফুলময় ! আনন্দ-ঢেউ ভুলের সাগরে উছলিয়া হােক কুলময়। রসিক। একি, বড়ো মা আসছেন যে ! অক্ষয়। আসবারই কথা। উনি তো কুমারটুলির ঠিকানায় যাবেন না। জগত্তারিণীর প্রবেশ শ্ৰীশ ও বিপিনের ভূমিষ্ঠ হইয়া প্ৰণাম। দুইজনকে দুই মোহর দিয়া জগত্তারিণীর আশীর্বাদ। জনান্তিকে অক্ষয়ের সহিত জগত্তারিণীর আলাপ । অক্ষয়। মা বলছেন, তোমাদের আজ ভালো করে খাওয়া হল না, সমস্তই পাতে পড়ে রইল। শ্ৰীশ। আমরা দুবার চেয়ে নিয়ে খেয়েছি। বিপিন। যেটা পাতে পড়ে আছে। ওটা তৃতীয় কিস্তি। শ্ৰীশ। ওটা না পড়ে থাকলে আমাদেরই পড়ে থাকতে হত । জগত্তারিণী। ( জনাস্তিকে ) তা হলে তোমরা ওঁদের বসিয়ে কথাবার্তা কও বাছা, আমি আসি । [প্ৰস্থান রসিক। না, এ ভারি অন্যায় হল । অক্ষয় । অন্যায়টা কী হল ? রসিক। আমি ওঁদের বারবার করে বলে এসেছি যে, ওঁরা কেবল আজ। আহারটি করেই ছুটি পাবেন, কোনোরকম বিধবন্ধনের আশঙ্কা নেই। কিন্তু শ্ৰীশ। ওর মধ্যে কিন্তুটা কোথায় রসিকবাবু, আপনি অত চিন্তিত হচ্ছেন কেন ? রসিক। বলেন কী শ্ৰীশবাবু, আপনাদের আমি কথা দিয়েছি। যখন— বিপিন। তা বেশ তো, এমনই কি মহাবিপদে ফেলেছেন! শ্ৰীশ। মা আমাদের যে আশীর্বাদ করে গেলেন আমরা যেন তার যোগ্য হই। রসিক। না না, শ্ৰীশবাবু, সে কোনো কাজের কথা নয়। আপনারা যে দায়ে পড়ে। ভদ্রতার খাতিরে বিপিন। রসিকবাবু, আপনি আমাদের প্রতি অবিচার করবেন না— দায়ে পড়ে— রসিক। দায় নয় তো কী মশায়! সে কিছুতেই হবে না। আমি বরঞ্চ সেই ছেলে দুটােকে বনমালীর হাত ছাড়িয়ে কুমারটুলি থেকে এখনো ফিরিয়ে আনব, তবু— শ্ৰীশ। আপনার কাছে কী অপরাধ করেছি। রসিকবাবু ? রসিক । না না, এ তো অপরাধের কথা হচ্ছে না। আপনারা ভদ্রলোক, কৌমাৰ্যব্রত অবলম্বন করেছেন, আমার অনুরোধে পড়ে পরের উপকার করতে এসে শেষকালে— বিপিন। শেষকালে নিজের উপকার করে ফেলব। এটুকু আপনি সহ্য করতে পারবেন না— এমনি হিতৈষী বন্ধু! শ্ৰীশ । আমরা যেটাকে সৌভাগ্য বলে স্বীকার করছি আপনি তার থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে চেষ্টা করছেন কেন ?