পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি V8S মধ্যে আনিবার পক্ষে সহায়তা করিয়াছেন— মনস্তত্ত্বকেও যে তিনি কোনো-একদিন ইহাদের এক কোঠায় আনিয়া দাড় করাইবেন না। তাহা বলিতে পারি না। এই ঐক্যসাধনই ভারতবর্ষীয় প্ৰতিভার প্রধান কাজ। ভারতবর্ষ কাহাকেও ত্যাগ করিবার, কাহাকেও দূরে রাখিবার পক্ষে নহে- ভারতবর্ষ সকলকেই স্বীকার করিবার, গ্ৰহণ করিবার, বিরাট একের মধ্যে সকলেরই স্বস্বপ্রধান প্ৰতিষ্ঠা উপলব্ধি করিবার পন্থা এই বিবাদনিরত ব্যবধানসংকুল পৃথিবীর সম্মুখে একদিন নির্দেশ করিয়া দিবে। সেই সুমহৎ দিন আসিবার পূর্বে— ‘‘একবার তোরা মা বলিয়া ডাকি!” যে একমাত্র মা দেশের প্রত্যেককে কাছে টানিবার, অনৈক্য ঘুচাইবার, রক্ষা করিবার জন্য নিয়ত ব্যাপৃত রহিয়াছেন, যিনি আপন ভাণ্ডারের চিরসঞ্চিত জ্ঞানধর্ম নানা আকারে নানা উপলক্ষে আমাদের প্রত্যেকেরই অন্তঃকরণের মধ্যে অশ্রান্তভাবে সঞ্চার করিয়া আমাদের চিত্তকে সুদীর্ঘ পরাধীনতার নিশীথরাত্রে করিয়া দিবার জন্য প্রাণপণ চীৎকার না করিয়া দেশের মধ্যস্থলে সন্তানপরিবৃত যজ্ঞশালায় তাহাকে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করো। আমরা কি এই জননীর জীর্ণ গৃহ সংস্কার করিতে পারিব না ? পাছে সাহেবের এইজন্যই, আমাদের যে মাতা একদিন অন্নপূর্ণা ছিলেন। পরের পাকশালার দ্বারে তাহারই অন্নের ব্যবস্থা করিতে হইবে ? আমাদের দেশ তো একদিন ধনকে তুচ্ছ করিতে জানিত, একদিন দারিদ্র্যকেও শোভন ও মহিমান্বিত করিতে শিখিয়াছিল— আজ আমরা কি টাকার কাছে সাষ্টাঙ্গে ধূল্যবলুষ্ঠিত হইয়া আমাদের সনাতন স্বধৰ্মকে অপমানিত করিব ? আজ আবার আমরা সেই শুচিশুদ্ধ, সেই মিতসংযত, সেই স্বল্পোপকরণ জীবনযাত্ৰা গ্ৰহণ করিয়া আমাদের তপস্বিনী জননীর সেবায় নিযুক্ত হইতে পারিব না ? আমাদের দেশে কলার পাতায় খাওয়া তো কোনোদিন লজ্জাকর ছিল না, একলা খাওয়াই লজাকার ; সেই লজা কি আমরা আর ফিরিয়া পাইব না ? আমরা কি আজ সমস্ত দেশকে পরিবেশন করিতে প্ৰস্তুত হইবার জন্য নিজের কোনো আরাম কোনো আড়ম্বর পরিত্যাগ করিতে পারিব না ? একদিন যাহা আমাদের পক্ষে নিতান্তই সহজ ছিল তাহা কি আমাদের পক্ষে আজ একবোরেই অসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে ? কখনোই নহে। নিরতিশয় দুঃসময়েও ভারতবর্ষের নিঃশব্দ প্ৰকাণ্ড প্রভাব ধীরভাবে নিগৃঢ়ভাবে আপনাকে জয়ী করিয়া তুলিয়াছে। আমি নিশ্চয় জানি, আমাদের দুই-চারি দিনের এই ইস্কুলের মুখস্থবিদ্যা সেই চিরন্তন প্রভাবকে লঙঘন করিতে পরিবে না। আমি নিশ্চয় জানি, ভারতবর্ষের সুগম্ভীর আহবান প্ৰতি মুহুর্তে আমাদের বক্ষঃকুহরে ধ্বনিত হইয়া উঠিতেছে ; এবং আমরা নিজের অলক্ষ্যে শনৈঃশনৈ সেই ভারতবর্ষের দিকেই চলিয়ােিছ। আজ যেখানে পথটি আমাদের মঙ্গলদীপোজল গৃহের দিকে চলিয়া গেছে, সেইখানে, আমাদের গৃহযাত্রারম্ভের অভিমুখে দাড়াইয়া ‘একবার তোরা মা বলিয়া ডাক!’ একবার স্বীকার করো, মাতার সেবা স্বহস্তে করিবার জন্য অদ্য আমরা প্ৰস্তুত হইলাম ; একবার স্বীকার করো যে, দেশের উদ্দেশে প্রত্যহ আমরা পূজার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিব ; একবার প্রতিজ্ঞা করো, জন্মভূমির সমস্ত মঙ্গল আমরা পরের কাছে নিঃশেষে বিকাইয়া দিয়া নিজেরা অত্যন্ত নিশ্চিন্তচিত্তে পদাহত অকালকুম্মাণ্ডের ন্যায় অধঃপাতের সোপান হইতে সোপানান্তরে গড়াইতে গড়াইতে চরম লাঞ্ছনার তলদেশে আসিয়া উত্তীর্ণ হইব না। No iЈИ У 5, S S. ܠܹ ݂8 | | ܓ