পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি هما S N একটা দেশব্যাপী ক্ষোভ জন্মিয়াছে, সেইজন্যই আমি বিরক্তি ও বিদ্রুপ উদ্রেকের আশঙ্কা পরিত্যাগ করিয়া আমার প্রস্তাবটি সকলের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি এবং আশ্বস্ত করিবার জন্য একটা ঐতিহাসিক নজিরও এখানে উদধূত করিতেছি। আমি যে বিবরণটি পাঠ করিতে উদ্যত হইয়াছি তাহা রুশীয় গবর্মেন্টের অধীনস্থ। বাহালীক প্রদেশীয়। ইহা কিছুকাল পূর্বে স্টেটসম্যান পত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল। সেই বাহালীক প্রদেশে জাঁজীয় আর্মানিগণ যে চেষ্টায় প্ৰবৃত্ত হইয়াছে তাহা যে কেন আমাদের পক্ষে দৃষ্টান্তস্বরূপ হইবে না। তাহা জানি না। সেখানে ‘সকারটাভেলিস্টি' নামধারী একটি জজীয় বিচারকদের দ্বারা গোপন বিচারশালা স্থাপন করিয়া রাজকীয় বিচারালয়কে নিম্প্রভ করিয়া দিয়াছেন— The peasants aver that these secret courts work with much greater expedition, accuracy and fairness than the Crown Courts, and that the Judges have the invaluable characteristic of incorruptibility. The Drozhakisti, or Armenian Nationalist party, had previously established a similar system of justice in the rural districts of the province of Erwan and more than that, they had practically supplanted the whole of the government system of rural administration and were employing agricultural experts, teachers and physicians of their own choosing. It has long been a matter of notoriety that ever since the suppression of Armenian schools by the Russian minister of Education, Delyanoff, who by the way was himself an Armenian, the Armenian population of the CaucasuS has maintained clandestine national Schools of its own. আমি কেবল এই বৃত্তান্তটি উদাহরণস্বরূপে উদধূত করিয়াছি— অর্থাৎ ইহার মধ্যে এইটুকুই দ্রষ্টব্য যে, স্বদেশের কর্মভার দেশের লোকের নিজেদের গ্রহণ করিবার চেষ্টা একটা পাগলামি নহে- বস্তুত, দেশের হিতেচ্ছ ব্যক্তিদের এইরূপ চেষ্টাই একমাত্র স্বাভাবিক। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষিতলোক যে গবৰ্মেন্টের চাকরিতে মাথা বিকাইয়া রাখিয়াছেন, ইহার শোচনীয়তা কি আমরা চিন্তা করিব না ? কেবল চাকরির পথ আরো প্ৰশস্ত করিয়া দিবার জন্য প্রার্থনা করিব ? চাকরির খাতিরে আমাদের দুর্বলতা কতদূর বাড়িতেছে তাহা কি আমরা জানি না ? আমরা মনিবকে খুশি করিবার জন্য গুপ্তচরের কাজ করিতেছি, মাতৃভূমির বিরুদ্ধে হাত তুলিতেছি এবং যে মনিব আমাদের প্রতি অশ্রদ্ধা করে তাহার পৌরুষক্ষয়কর অপমানজনক আদেশও প্ৰফুল্লমুখে পালন করিতেছি— এই চাকরি আরো বিস্তার করিতে হইবে ? দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করিতে হইবে ? আমরা যদি স্বদেশের কর্মভার নিজে গ্রহণ করিতাম। তবে গবর্মেন্টের আপিস রাক্ষসের মতো আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকদিগকে কি এমন নিঃশেষে গ্ৰাস করিত ? যাহাতে আমাদের ডাক্তার, আমাদের শিক্ষক, আমাদের এঞ্জিনিয়ারগণ দেশের অধীন থাকিয়া দেশের কাজেই আপনার যোগ্যতার স্মৃর্তিসাধন করিতে পারেন আমাদিগকে তাহার ব্যবস্থা করিতেই হইবে। নতুবা আমাদের যে কী শক্তি আছে তাহার পরিচয়ই আমরা পাইব না। তা ছাড়া, এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে যে, সেবার অভ্যাসের দ্বারাই প্রীতির উপচয় হয় ; যদি আমরা শিক্ষিতগণ এমন কোথাও কাজ করিতাম যেখানে দেশের কাজ করিতেছি। এই ধারণা সর্বদা স্পষ্টরূপে জাগ্ৰত থাকিত, তবে দেশকে ভালোবাসো— এ কথা নীতিশাস্ত্রের সাহায্যে উপদেশ দিতে হইত না। তবে এক দিকে যোগ্যতার অভিমান করা, অন্য দিকে প্ৰত্যেক অভাবের জন্য পরের সাহায্যের প্রার্থী হওয়া, এমনতরো অদ্ভূত অশ্রদ্ধাকর আচরণে আমাদিগকে প্রবৃত্ত হইতে হইত না— দেশের শিক্ষা স্বাধীন হইত এবং শিক্ষিতসমাজের শক্তি বন্ধনমুক্ত হইত। জজীয়গণ, আর্মানিগণ প্রবল জাতি নহে- ইহার যে-সকল কাজ প্রতিকূল অবস্থাতেও নিজে করিতেছে আমরা কি সেই-সকল কাজেরই জন্য দরবার করিতে দৌড়াই না ? কৃষিতত্ত্বপারদশীদের