পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ। Գ ֆ (; তাহার সকল দিকেই বাধে, আত্মরক্ষার জন্য যেমন-তেমন করিয়া ব্ৰাহ্মণকে সংগ্ৰহ করিয়া রাখা চাই। আধুনিক ইতিহাসে এমনও দেখা যায়, কোনো কোনো স্থানে বিশেষ-প্রয়োজন-বশত রাজা পইতা দিয়া একদল ব্ৰাহ্মণ তৈরি করিয়াও লইয়াছেন। বাংলাদেশে যখন ব্ৰাহ্মণের আচারে ব্যবহারে বিদ্যাবুদ্ধিতে ব্ৰাহ্মণত্ব হারাইয়াছিলেন তখন রাজা বিদেশ হইতে ব্ৰাহ্মণ আনাইয়া সমাজের কাজ চালাইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এই ব্ৰাহ্মণ যখন চারি দিকের প্রভাবে নত হইয়া পড়িতেছিল তখন রাজা কৃত্রিম উপায়ে কৌলীন্য স্থাপন করিয়া ব্ৰাহ্মণের নির্বাণোন্মুখ মর্যাদাকে খোচা দিয়া জাগাইতেছিলেন। অপর পক্ষে, কৌলীনো বিবাহসম্বন্ধে যেরূপ বর্বরতার সৃষ্টি করিল। তাহাতে এই কৌলীন্যই বর্ণমিশ্রণের এক গোপন উপায় হইয়া উঠিয়াছিল। ব্ৰাহ্মণকে স্বতন্ত্রভাবে নির্দিষ্ট করিয়া রাখিতে বাধ্য হইয়াছিল। ক্ষত্ৰিয়-বৈশ্যাদিগকে সেরূপ বিশেষভাবে তাহাদের পূর্বতন আচার কাঠিন্যের মধ্যে বদ্ধ করিবার কোনো অত্যাবশ্যকতা বাংলাসমাজে ছিল না। যে খুশি যুদ্ধ করুক, বাণিজ্য করুক, তাহাতে সমাজের বিশেষ কিছু আসিত যাইত না— এবং যাহারা যুদ্ধ বাণিজ্য কৃষি শিল্পে নিযুক্ত থাকিবে তাহাদিগকে বিশেষ চিহ্নের দ্বারা পৃথক করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন ছিল না। ব্যবসায় লোকে নিজের গরজেই করে, কোনো বিশেষ ব্যবস্থার অপেক্ষা রাখে। না— ধর্মসম্বন্ধে সে বিধি নহে; তাহা প্ৰাচীন নিয়মে আবদ্ধ, তাহার আয়োজন রীতিপদ্ধতি আমাদের স্বেচ্ছাবিহিত নহে। অতএব জড়ত্বপ্রাপ্ত সমাজের শৈথিল্যবশতই এক সময়ে ক্ষত্ৰিয়-বৈশ্য আপন অধিকার হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়া একাকার হইয়া গেছে। তাহারা যদি সচেতন হন, যদি তাহারা নিজের অধিকার যথার্থভাবে গ্রহণ করিবার জন্য অগ্রসর হন, নিজের গৌরব যথার্থভাবে প্ৰমাণ করিবার জন্য উদ্যত হন, তবে তাহাতে সমস্ত সমাজের পক্ষে মঙ্গল, ব্ৰাহ্মণদের পক্ষে মঙ্গল । ব্ৰাহ্মণদিগকে নিজের যথার্থ গৌরব লাভ করিবার জন্য যেমন প্ৰাচীন আদর্শের দিকে যাইতে হইবে, সমস্ত সমাজকেও তেমনি যাইতে হইবে ; ব্ৰাহ্মণ কেবল একলা যাইবে এবং আর-সকলে যে যেখানে আছে সে সেইখানেই পড়িয়া থাকিবে, ইহা হইতেই পারে না। সমস্ত সমাজের এক দিকে গতি না হইলে তাহার কোনো এক অংশ সিদ্ধিলাভ করিতে পারে না। যখন দেখিব আমাদের দেশের কায়স্থ ও বণিকগণ আপনাদিগকে প্রাচীন ক্ষত্ৰিয় ও বৈশ্য -সমাজের সহিত যুক্ত করিয়া বৃহৎ হইবার, বহু পুরাতনের সহিত এক হইবার চেষ্টা করিতেছেন এবং প্রাচীন ভারতের সহিত আধুনিক ভারতকে আধুনিক ব্ৰাহ্মণও প্রাচীন ব্ৰাহ্মণের সহিত মিলিত হইয়া ভারতবষীয় সমাজকে সজীবভাবে যথার্থভাবে অখণ্ডভাবে এক করিবার কার্যে সফল হইবেন । নহিলে কেবল স্থানীয় কলহবিবাদ দলাদলি লইয়া বিদেশী প্ৰভাবের সাংঘাতিক অভিঘাত হইতে সমাজকে রক্ষা করা অসম্ভব হইবে, নহিলে ব্ৰাহ্মণের সম্মান অর্থাৎ আমাদের সমস্ত সমাজের সম্মান ক্রমে তুচ্ছ হইতে তুচ্ছতম হইয়া আসিবে। আমাদের সমস্ত সমাজ প্রধানতই দ্বিজসমাজ ; ইহা যদি না হয়, সমাজ যদি শূদ্ৰসমাজ হয়, তবে কয়েকজনমাত্ৰ ব্ৰাহ্মণকে লইয়া এ সমাজ যুরোপীয় আদর্শেও খর্ব হইবে, ভারতবষীয় আদর্শেও খর্ব হইবে। সমস্ত উন্নত সমাজই সমাজস্থ লোকের নিকট প্ৰাণের দাবি করিয়া থাকে, আপনাকে নিকৃষ্ট বলিয়া স্বীকার করিয়া আরামে জড়ত্বসুখভোগে যে সমােজ আপনার অধিকাংশ লোককে প্রশ্রয় দিয়া থাকে সে সমাজ মরে, এবং না”ও যদি মরে তবে তাহার। মরাই ভালো । যুরোপ কর্মের উত্তেজনায়, প্রবৃত্তির উত্তেজনায় সর্বদাই প্ৰাণ দিতে প্ৰস্তুত— আমরা যদি ধর্মের জন্য প্ৰাণ দিতে প্ৰস্তুত না হই তবে সে প্ৰাণ অপমানিত হইতে থাকিলে অভিমান প্ৰকাশ করা TSANK GSMS o Ni | যুরোপীয় সৈন্য যুদ্ধানুরাগের উত্তেজনায় ও বেতনের লোভে ও গৌরবের আশ্বাসে প্ৰাণ দেয়,