পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় ԵrՀV») নিঠুর পীড়নে নিঙাড়ি বক্ষ দলিত দ্রাক্ষাসমা । কত যে বরন কত যে গন্ধ কত যে রাগিণী কত যে ছন্দ গাথিয়া গাথিয়া করেছি বয়ন বাসরশয়ন তব তোমার ক্ষণিক খেলার লাগিয়া মুরতি নিত্যনব । আশ্চর্য এই যে, আমি হইয়া উঠিতেছি, আমি প্ৰকাশ পাইতেছি ! আমার মধ্যে কী অনন্ত মাধুর্য আছে যেজন্য আমি অসীম ব্ৰহ্মাণ্ডের অগণ্য সূর্যচন্দ্ৰগ্ৰহতারকার সমস্ত শক্তি-দ্বারা লালিত হইয়া এই আলোকের মধ্যে, আকাশের মধ্যে, চোখ মেলিয়া দাড়াইয়াছি- আমাকে কেহ ত্যাগ করিতেছে না। মনে কেবল এই প্রশ্ন উঠে, আমি আমার এই আশ্চর্য অস্তিত্বের অধিকার কেমন করিয়া রক্ষা করিতেছি- আমার উপরে যে প্ৰেম, যে আনন্দ অশ্রাস্ত রহিয়াছে, যাহা না থাকিলে আমার থাকিবার কোনো শক্তিই থাকিত না, আমি তাহাকে কি কিছুই দিতেছি না ?-- আপনি বরিয়া লয়েছিলে মোরে না জানি কিসের আশে ! লেগেছে কি ভালো, হে জীবননাথ, আমার নাম, আমার কর্ম তোমার বিজন বাসে ! বরষা-শরতে বসন্তে শীতে ধ্বনিয়াছে হিয়া যত সংগীতে শুনেছ কি তাহা একেলা বসিয়া আপন সিংহাসনে ? মানসকুসুম তুলি অঞ্চলে গেথেছ কি মালা, পরেছ কি গলে— আপনার মনে করেছ ভ্ৰমণ মম যৌবনবনে ? কী দেখিছ, বঁধু, মরমীমাঝারে রাখিয়া নয়ন দুটি ! করেছ কি ক্ষমা যতেক আমার স্থলন পতন ত্রুটি । কত বারবার ফিরে গেছে নাথ— অৰ্ঘ্যকুসুম ঝরে পড়ে গেছে বিজন বিপিনে ফুটি ।