পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brこbr রবীন্দ্র-রচনাবলী তুলিয়া ব্রিটিশ সরকারকে আশীর্বাদ করিব না । বােঝা যাইতেছে, কর্তৃপক্ষের তরফ হইতে আমাদের দেশটাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেওয়াটা 4-5 matter of great importance &T if:TC2 কর্তৃপক্ষ বলিতেছেন, আমরা নিতান্তই চাষীদের উপকার করিতে চাই। হয়তাে চান, কিন্তু কমিটিও যে বিশুদ্ধভাবে সেই উদ্দেশ্যসাধনের প্রতিই লক্ষ রাখিয়াছেন সে কথাটা বিশ্বাস করা সহজ হইত যদি দেখিতাম কর্তৃপক্ষের স্বদেশেও তঁহাদের স্বজাতীয় চাষীদের এই প্ৰণালীতে উপকার করা হইয়া থাকে | ইংরেজের দেশেও চাষা যথেষ্ট আছে এবং সেখানে যে ভাষায় পাঠ্যগ্রন্থ লেখা হয় তাহা সকল চাষার মধ্যে প্রচলিত নহে । ল্যাঙ্কাশিয়রের উপভাষায় ল্যাঙ্কাশিয়রের চাষীদের বিশেষ উপকারের জন্য পাঠ্যপুস্তকপ্রণয়ন হইতেছে না । স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, ইংল্যান্ডে চাষীদের শিক্ষা সুগম করা যদিও নিশ্চয়ই matter of great importance, তথাপি ইংলন্ডের সর্বত্র ইংরেজিভাষার ঐক্য রক্ষা করা matter of greater importance । কিন্তু সে দেশে চাষীদের উপকার ও ভাষার অখণ্ডতা রক্ষণ উভয়ই এক স্বার্থের অন্তর্গত, এ সম্বন্ধে কোনো পক্ষ ভেদ নাই- সুতরাং সেখানে ভাষাকে চার টুকরা করিয়া চাষীদের কিঞ্চিৎ ক্লেশলাঘব করার কল্পনামাত্রও কোনো পাঁচজন বুদ্ধিমানের একত্র সম্মিলিত মাথার মধ্যে উদয় হইতেই পারে না - জনসাধারণের শিক্ষার উপসৰ্গ লইয়াই হউক বা যে উপলক্ষেই হউক, দেশের উপভাষার অনৈক্যকে প্ৰণালীবদ্ধ উপায়ে ক্রমশ পাকা করিয়া তুলিলে তাহাতে যে দেশের সাধারণ মঙ্গলের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়, তাহা নিশ্চয়ই আমাদের পাশ্চাত্য কর্তৃপক্ষেরা, এমন-কি, তাহদের বিশ্বস্ত বাঙালীসদস্য, আমাদের চেয়ে বরঞ্চ ভালোই বোঝেন । --বঙ্গদর্শন । চৈত্র ১৩১১, পৃ. ৬২২- ২৮ বাংলা ‘সাহিত্যভাষা বড়ো বেশি সংস্কৃতায়িত’, এই কারণ দেখাইয়া কর্তৃপক্ষ উহাকে ‘কৃষিপল্লীর পাঠশালা হইতে নির্বাসিত করিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন । তাহার উত্তরে রবীন্দ্রনাথ (6(2न्-- আমাদের দেশে প্রাচীন ভাষার সহিত আধুনিক প্রাকৃত ভাষাগুলির - আকস্মিক সম্বন্ধ নহে, বরাবর সংস্কৃত ভাষার সহিত ইহার নাড়ীর যোগ রহিয়া গেছে। অন্য কারণ ছাড়িয়া দিলেও ইহা দেখিতে হইবে, আমাদের দেশের ধর্মসাহিত্যের একমাত্র প্রস্রবণ সংস্কৃত । পুরাণপাঠ, কীর্তন, পৌরাণিক যাত্রা, কথকতা, তর্জা, কবির লড়াই প্রভৃতি যাহা-কিছু আমাদের সাধারণ লোকের উপদেশ ও আমোদের উপকরণ, সমস্তই স্বভাবতই সংস্কৃতকথাকে দেশের সর্বত্ৰ সঞ্চারিত করিয়া দিতেছে ; দেশের পণ্ডিতমণ্ডলীর সহিত দেশের সাধারণের এই জ্ঞানসম্বন্ধের ভাবসম্বন্ধের পথ চিরদিন অবারিত আছে । বর্তমানকালেও দেশের বিদ্বানেরা যে ভাষার মধ্যে তাহদের জ্ঞান, সঞ্চয় করিয়া রাখিতেছেন, যে ভাষায় দেশের সমস্ত ভদ্রসম্প্রদায় তাহদের বীক্ষণাশক্তি মননশক্তি পরীক্ষণাশক্তির সমস্ত ফলকে বিস্তীর্ণ দেশ ও বিস্তীর্ণ কালের জন্য স্থায়িত্ব দিতে চেষ্টা করিতেছেন, সেই ভাষার সহিত নিম্নসাধারণের চিত্তের যোগ কৃত্রিম বাধার দ্বারা বিচ্ছিন্ন করিয়া দেওয়া সরকারের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় হইয়াছে, এ কথা বলিলে অবশ্য আমাদিগকে বিশ্বাস করিতেই হইবে।— কিন্তু চাষীদের মঙ্গলের পক্ষেও ইহা প্রয়োজনীয়, এ কথা স্বয়ং কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত মহাশয় বলিলেও বিশ্বাস করিব না । —বঙ্গদর্শন । চৈত্র ১৩১১, পৃ. ৬২৯ কর্তৃপক্ষের এই চারিটি উপভাষা চালাইবার সংকল্প বন্ধ হওয়াতে, বঙ্গদর্শনে মুদ্রিত ‘সফলতার সদুপায় প্রবন্ধের উপরিলিখিত অংশ ও তৎকালোপযোগী অন্যান্য অংশ আত্মশক্তি গ্রন্থে আদৌ সংকলন করা হয় নাই ।