পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ( उदा:- সুকুমারী। ওগো, শুনিছ ? তোমার সামনে আমাকে এমনি করে অপমান করে*? নিজের মুখে বললে কিনা খোকাকে গলা টিপে মারবে ? ও মা, কী হবে গে। আমি কালসাপকে নিজের হাতে দুধকলা দিয়ে পুষেছি। সতীশ । দুধকলা আমারও ঘরে ছিল- সে দুধকলায় আমার রক্ত বিষ হয়ে উঠত না- তা থেকে চিরকালের মতো বঞ্চিত করে তুমি যে-দুধকলা আমাকে খাইয়েছ, তাতে আমার বিষ জমে উঠেছে। সত্যকথাই বলছি, এখন আমাকে ভয় করাই চাই- এখন আমি দংশন করতে পারি। বিধুমুখীর প্রবেশ বিধুমুখী। কী সতীশ, কী হয়েছে, তোকে দেখে যে ভয় হয়। অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন। আমাকে চিনতে পারছিস নে ? আমি তোর মা, সতীশ ? ' সতীশ । মা, তোমাকে মা বলব কোন মুখে | মা হয়ে কেন তুমি আমাকে জেল থেকে ফিরিয়ে আনলে । সে কি মাসির ঘরের চেয়ে ভয়ানক । শশধর । আঃ সতীশ । চলো চলো- কী বকছ থামো | সুকুমারী। নাও, তােমরা বােঝাপড়া করে- আমার কাজ আছে। [প্ৰস্থান শশধর । সতীশ, একটু ঠাণ্ডা হও । তোমার প্রতি অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে, সে কি আমি জানি নে । তোমার মাসি রাগের মুখে কী বলছেন, সে কি অমন করে মনে নিতে আছে। দেখো, গোড়ায় যা ভুল হয়েছে তা এখন যতটা সম্ভব প্রতিকার করা যাবে, তুমি নিশ্চিন্ত থাকে। সতীশ । মেসোমশায়, প্ৰতিকারের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। মাসিমার সঙ্গে আমার এখন যেরূপ সম্পর্ক দাড়িয়েছে, তাতে তোমার ঘরের অন্ন আমার গলা দিয়ে আর গলবে না। এতদিন তোমাদের যা খরচ করিয়েছি তা যদি শেষ কড়িটি পর্যন্ত শোধ করে দিতে না পারি। তবে আমার মরেও শান্তি নেই। প্রতিকার যদি কিছু থাকে তো সে আমার হাতে, তুমি কী প্রতিকার করবে। শশধর । না, শোনো সতীশ- একটু স্থির হও । তোমার যা কর্তব্য সে তুমি পরে ভেবো ; তোমার সম্বন্ধে আমরা যে-অন্যায় করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত তো আমাকেই করতে হবে। দেখাে, আমার বিষয়ের এক অংশ আমি তোমাকে লিখে দেব, সেটাকে তুমি দান মনে কোরো না, সে তোমার প্রাপ্য। আমি সমস্ত ঠিক করে রেখেছি- পরশু শুক্রবারে রেজেষ্টি করে দেব | সতীশ । (শশধরের পায়ের ধূলা লইয়া) মেসোেমশায়, কী আর বলব- তোমার এই স্নেহে— শশধর । আচ্ছা, থাক থাকা! ও-সব স্নেহ-ফ্লোহ আমি কিছু বুঝি নে, রস-কস আমার কিছুই নেই। যা কর্তব্য তা কোনোরকমে পালন করতেই হবে, এই বুঝি। সাড়ে-আটটা বাজল, তুমি আজ কোরিন্থিয়ানে যাবে বলেছিলে, যাও - সতীশ, একটা কথা তোমাকে বলে রাখি। দানপত্ৰখানা আমি মিস্টার লাহিড়িকে দিয়েই লিখিয়ে নিয়েছি। ভাবে বোধ হল, তিনি এই ব্যাপারে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন- তোমার প্রতি যে টান নেই এমন তো, দেখা গেল না । এমন-কি, আমি চলে আসবার সময় তিনি আমাকে বললেন, সতীশ আজকাল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে না কেন । আরো-একটা সুখবর আছে সতীশ, তোমাকে যে-আপিসে কাজ করিয়ে দিয়েছি। সেখানকার বড়োসাহেব তোমার খুব সুখ্যাতি করছিলেন । , সতীশ । সে আমার গুণে নয় | তোমাকে ভক্তি করেন বলেই আমাকে এত বিশ্বাস করেন । [প্ৰস্থান শশধর । ওরে রামচরণ, তোর মাঠাকুরানীকে একবার ডেকে দে তো । সুকুমারীর প্রবেশ সুকুমারী। কী স্থির করলে। শশধর । একটা চমৎকার প্ল্যান ঠাউরেছি।