পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহপ্ৰবেশ dà) অখিল । সে কী কথা, কাকি ! মাসি। থােক, ভোলাবার কোনো দরকার নেই। ভালোই করেছ। জানি, আমার সম্পত্তিতে তোমাদেরই অধিকার বলে তোমরা বরাবরই তার পরে দৃষ্টিপাত করেছ— । অখিল ৷ ছি:৷ ছি, এমন কথা- ৷ মাসি। তাতে দোষ কী ছিল বলে। তোমরা আমার ছেলেরই মতো তো বটে। তোমাদেরই সব দিতুম | কিন্তু আমরা দুই বোন ছিলুম। বাবা দিদির উপরে রাগ করে একলা আমাকেই তার সম্পত্তি দিয়ে গেলেন। সে রাগ পড়ে যাবার আগেই তঁর মৃত্যু হল। স্বৰ্গে আছেন তিনি, আজ তঁর সেই রাগ নেই। সেইজনেই বাবার সম্পত্তি তীরই দৌহিত্রের ভোগে ঢেলে দিয়েছি। লক্ষ্মীর কৃপায় তোমাদের তো কোনো অভাব নেই। অখিল । তা নিয়ে তোমাকে কি কোনো কথা বলেছি কোনোদিন । মাসি। বুদ্ধি থাকলে কথা বলবার তো দরকার হয় না। বাড়ি তৈরির নেশায় যতীনকে ধরলে। সে নেশার ভিতরে যে কত অসহ্য দুঃখ তা তোরা পকাবুদ্ধি আইনওয়ালারা বুঝবি নে। আমি মেয়েমানুষ, ওর মাসি, আমার বুক ফাটতে লাগল। ধারা পাব কোথায়। তোরই কাছে যেতে হল। তুই এক ফাঁকা। মক্কেল খাড়া করে হিমির প্রবেশ হিমি। মাসি, বামুনঠাকরুন। এসেছেন। মাসি। লক্ষ্মী মেয়ে, তুই তাকে একটু বসতে বল, আমি এখনই আসছি। অখিল । কাকি, তোমার এই বোনবির কত বয়স হবে। মাসি। সতেরো সবে পেরিয়েছে। এই বছরেই আই এ, দেবে। অখিল । গলাটি ভারি মিষ্টি, বাইরে থেকে ওঁর গান শুনেছি। মাসি। ওরা দুই ভাইবােনে একই জাতের। দাদা বাড়ি করছেন, ইনি গান করছেন, দুটােতেই একই সুরের খেলা । অখিল । বিয়ের সম্বন্ধ মাসি। না, ওর দাদার অসুখ হয়ে অবধি সে কথা কাউকে মুখে আনতে দেয় না-পড়াশুনো সব ছেড়ে এইখানেই পড়ে আছে। অখিল। কিন্তু ভালো পাত্র খুঁজে দিতে পারি। কাকি, যদি কখনো মাসি। যেমন তুই মক্কেল খুঁজে দিয়েছিলি সেইরকমই না? অখিল। না কাকি, ঠাট্ট না- আমি ভাবছি, ওঁকে যদি একটা হার্মেনিয়ম পাঠিয়ে দিই, তাতে কি (WEATMK---- মাসি । কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু ও তো হার্মেনিয়ম ভালোবাসে না । অখিল । গানের সঙ্গে ? মাসি | গানের সঙ্গে এসরাজ বাজায় । অখিল । আচ্ছা, তা হলে এসরাজই নাহয় মাসি। ওর তো আছে। এসরাজ । অখিল। নাহয় আরো একটা হল। সম্পত্তি বাড়িয়ে তোলাকেই তো বলে শ্ৰীবৃদ্ধি। মাসি। আচ্ছা, দিস। এসরাজ। এখন আমার কথাটা শোন। এতকাল তোর সেই মক্কেলকে সুদ দিয়ে এসেছি আমারই পৈতৃক গয়না বেচে । মাঝে মাঝে মক্কেল যখনই তিন দিনের মধ্যে শোধ নেবার কড়া দাবি করে চিঠি দিয়েছে, তখনই সুদ চড়িয়ে চড়িয়ে আজ আমার আর কিছু নেই। কাজেই কাকির সম্পত্তি দেওরপোর সিন্ধুকেই গেছে। প্রেতলোকে আমার শ্বশুরের তৃপ্তি হয়েছে- কিন্তু আমার বাবা, যতীনের মা- পরলোকে তাদের যদি চোখের জল পড়ে [হিমির প্রস্থান