পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sのも রবীন্দ্র-রচনাবলী পরিষদ। মহারাজ, আমি ওঁদের দেশের পরিচয় জানি । ওঁদের হেঁয়ালি বরঞ্চ বোঝা যায়। কিন্তু যখন ব্যাখ্যা করতে বসেন তখন একেবারেই হল ছেড়ে দিতে হয় । রাজকবি । যেন দ্ৰৌপদীর বন্ত্রহরণ, টানলে আরো বাড়তে থাকে। নটরাজ। বোঝবার কঠিন চেষ্টা করবেন না মহারাজ, তা হলেই সহজে বুঝবেন। জুই ফুলকে ছিড়ে দেখলে বোঝা যায় না, চেয়ে দেখলে বোঝা যায়। আদেশ করুন। এখন বর্ষাকে ডাকি । রাজা । রোসো রোসো। বর্ষাকে ডাকা কী রকম ? বৰ্ষা তো নিজেই ডাক দিয়ে আসে । নটরাজ। সে তো আসে বাইরের আকাশে। অন্তরের আকাশে তাকে গান গেয়ে ডেকে আনতে হয়। রাজা । গানের সুরগুলো কি কবিশেখরের নিজেরই বাধা ? নটরাজ | ই মহারাজ । রাজা । এই আর এক বিপদ । রাজকবি। নিজের অধিকারে পেয়ে কাব্যরসের হাতে কবি রাগিণীর দুৰ্গতি ঘটাবেন। এখন রাজার কর্তব্য গীতসরস্বতীকে কাব্যপীড়ার হাত থেকে রক্ষা করা। মহারাজ, ভোজপুরের গন্ধৰ্বদলকে খবর দিন-না। দুই পক্ষের লড়াই বাধুক তা হলে কবির পক্ষে ‘শেষ বর্ষণ নামটা সার্থক হবে। নটরাজ। রাগিণী যতদিন কুমারী ততদিন তিনি স্বতন্ত্রা, কাব্যরসের সঙ্গে পরিণয় ঘটলেই তখন ভাবের রসকেই পতিব্ৰতা মেনে চলে। উলটে, রাগিণীর হুকুমে ভাব যদি পায়ে পায়ে নাকে খত দিয়ে চলতে থাকে সেই স্ত্ৰৈণতা অসহ্য । অন্তত আমার দেশের চাল এরকম নয় । রাজা। ওহে নটরাজ, রস জিনিসটা স্পষ্ট নয়, রাগিণী জিনিসটা স্পষ্ট। রসের নাগাল যদি বা না পাই রাগিণীটা বুঝি। তােমাদের কবি কাব্যশাসনে তাকেও যদি বেঁধে ফেলেন তা হলে তো আমার মতো লোকের মুশকিল। নটরাজ । মহারাজ, গাঠছড়ার বাধন কি বাধন ? সেই বাধনেই মিলন । তাতে উভয়েই উভয়কে বঁধে । কথায় সুরে হয় একাত্মা | পরিষদ। অলমতিবিস্তরেণ । তোমাদের ধর্মে যা বলে তাই করে, আমরা বীরের মতো সহ্য করব। নটরাজ। (গায়কগায়িকাদের প্রতি) ঘনমেঘে তার চরণ পড়েছে। শ্রাবণের ধারায় তার বাণী, কদম্বের বনে তঁর গন্ধের অদৃশ্য উত্তরীয়। গানের আসনে তঁকে বসাও, সুরে তিনি রূপ ধরুন, হৃদয়ে তার সভা জমুক। ডাকো এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্নান নব্যধারাজিলে । দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ, পরো দেহ ঘোরি মেঘনীল বেশ 3. কাজল নয়নে যুখীমালা গলে এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে । আজি ক্ষণে ক্ষণে হাসিখনি,সখি, অধরে নয়নে উঠুক চমকি । মল্লারগানে তব মধুস্বরে দিক বাণী আনি বনমর্মরে । ঘন বরিষনে জল-কলকলে এসো নীপবনে ছায়াবীথিতালে। নটরাজ। মহারাজ, এখন একবার ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখুন, রজনী শাঙন ঘন, ঘন দেয়া গরজন, রিমঝিম শবদে বরিযে। রাজা। ভিতরের দিকে ? সেই দিকের পথই তো সব চেয়ে দুৰ্গম।