পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSV রবীন্দ্র-রচনাবলী চাহনি ফিরে, কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া । ওগো অকরুণ, কী মায়া জান, মিলনছলে বিরহ আন । চলেছ পথিক আলোক-যানে আঁধারপানে, মন-ভুলানো মোহন তানে গান গাহিয়া । নটরাজ। এইবার কবির বিদায় গান। বাঁশি হবে নীরব। যদি কিছু থাকি সে থাকবে স্মরণের মধ্যে । আমার রাত পোহাল শারদ প্ৰাতে । বঁশি, তোমায় দিয়ে যােব কাহার হাতে । তোমার বুকে বাজল ধ্বনি বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে, ফায়ুনে শ্রাবণে, কত প্ৰভাতে রাতে। যে কথা রয় প্ৰাণের ভিতর অগোচরে গানে গানে নিয়েছিলে চুরি করে। সময় যে তার হল গত নিশিশেষের তারার মতো . তারে শেষ করে দাও শিউলি ফুলের মরণ সাথে । রাজা ৷৷ ও কী । একেবারে শেষ হয়ে গেল নাকি ? কেবল দুদণ্ডের জন্যে গান বাধা হল, গান সারা হল এত সাধনা, এত আয়োজন, এত উৎকণ্ঠা- তার পরে ? নটরাজ। তার পরে প্রশ্নের উত্তর নেই, সব চুপ। এই তো সৃষ্টির লীলা, এ তো কৃপণের পুঁজি নয়। যে আনন্দের অমিতব্যয় । মুকুল ধরেও যেমন ঝরেও তেমনি। বঁশিতে যদি গান বেজে থাকে সেই দে চরম । তার পরে ? কেউ চুপ করে শোনে, কেউ গলা ছেড়ে তর্ক করে। কেউ মনে রোখে, কেউ ভোরে কেউ ব্যঙ্গ করে । তাতে কী আসে যায় ? গান আমার যায় ভেসে যায়, চাস নে ফিরে দে তারে বিদায় । সে যে দখিন হাওয়ায় মুকুল ঝরা, ধুলার আঁচল হেলায় ভরা, সে যে শিশিরফোটার মালা গাথা বনের আঙিনায় । কঁাদন-হাসির আলোছায়া সারা অলস বেলা, মেঘের গায়ে রঙের মায়া খেলার পরে খেলা । ভুলে যাওয়ার বোঝাইভরি গেল চলে কতই তরী উজানবায়ে ফেরে যদি কে রয় সে আশায় । রাজা । উত্তম হয়েছে। রাজকবি । আরো অনেক উত্তম হতে পারত।