পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QS রবীন্দ্র-রচনাবলী মল্লিকা। করলেও পাব না। নটী আমাকে খুব চেনৈ। রত্নাবলী। চুপ করে সহ্য কর কী করে বুঝতে পারি নে। ধৈর্য নিরুপায় ইতর লোকের অন্ত্র, রাজার 000 कीं । মল্লিকা। আমি জানি প্রতিকার আসন্ন, তাই শক্তির অপব্যয় করি নে। রত্নাবলী । নিশ্চিত জান ? মল্লিকা | নিশ্চিত । রত্নাবলী। গোপন কথা যদি হয় বোলো না। কেবল এইটুকু জানতে চাই ঐ নটী কি আজ সন্ধ্যাবেলায় পূজা করবে। আর রাজকন্যারা জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে ? মল্লিকা। না কিছুতেই না। আমি কথা দিচ্ছি। রত্নাবলী। রাজগৃহলক্ষ্মী তোমার বাণীকে সাৰ্থক করুন। शैिझ उक्क রাজেন্দ্যান লোকেশ্বরী ও মল্লিকা মল্লিকা। পুত্রের সঙ্গে তো দেখা হল মহারানী। তবে এখনাে কেন— লোকেশ্বরী । পুত্রের সঙ্গে ? পুত্র কোথায় ? এ যে মৃত্যুর চেয়ে বেশি। আগে বুঝতে পারি নি। মল্লিকা ৷ এমন কথা কেন বলছেন । লোকেশ্বরী । পুত্র যখন অপুত্র হয়ে মার কাছে আসে তার মতো দুঃখ আর নেই। কিরকম করে সে চাইলে আমার দিকে ! তার মা একেবারে লুপ্ত হয়ে গেছে— কোথাও কোনো তার চিহ্নও নেই! নিজের এতবড়ো নিঃশেষে সর্বনাশ কল্পনাও করতে পারতুম না। মল্লিক। রক্তমাংসের জন্মকে সম্পূর্ণ ঘুচিয়ে ফেলে এঁরা যে নির্মল নূতন জন্ম লাভ করেন। লোকেশ্বরী। হায় রে রক্তমাংস ! হায় রে অসহ্য ক্ষুধা, অসহ্য বেদনা ! রক্তমাংসের তপস্যা এদের এই শূন্যের তপস্যার চেয়ে কি কিছুমাত্র কম! মল্লিকা ৷ কিন্তু যাই বল দেবী, তাকে দেখলেম- সে কী রূপ ! আলো দিয়ে ধোওয়া যেন দেবমূৰ্তিখনি। লোকেশ্বরী। ঐ রূপ নিয়ে তার মাকে সেলজা দিয়ে গেল ! যে মায়ের প্রাণ আমার নাড়ীতে, যে মায়ের স্নেহ আমার হৃদয়ে, তাকে ঐ রূপ ধিক্কার দিলে! যে জন্ম তাকে দিয়েছি আমি, সে জন্মের সঙ্গে তার এ জন্মের কেবল যে বিচ্ছেদ তা নয়, বিরোধ। দেখ মল্লিকা, আজ খুব স্পষ্ট করে বুঝতে পারলেম এ ধর্ম পুরুষের তৈরি। এ ধর্মেমা ছেলের পক্ষে অনাবশ্যক; স্ত্রীকে স্বামীর প্রয়ােজন নেই। যারা না পুত্র, না স্বামী, না ভাই, সেই সব ঘরছাড়াদের একটুখানি ভিক্ষা দেবার জন্যে সমস্ত প্রাণকে শুকিয়ে ফেলে আমরা শূন্য ঘরে পড়ে থাকব ! মল্লিকা, এই পুরুষের ধর্ম আমাদের মেরেছে, আমরাও একে মারব। মল্লিকা। কিন্তু দেবী, দেখ নি ? মেয়েরাই যে দলে দলে চলেছে বুদ্ধকে পূজা দেবার জন্যে ! লোকেশ্বরী। মূঢ় ওরা, ভক্তি করবার ক্ষুধার ওদের অন্ত নেই। যা ওদের সব চেয়ে মারে তাকেই ওরা সব চেয়ে বেশি করে দেয়। এই মোহকে আমি প্রশ্ৰয় দিই নে । মল্লিকা। মুখে বলছি মহারানী, নিশ্চয় জানি, তোমার ঐ পুত্র আজ তোমার সেবকক্ষের দ্বার দিয়ে বেরিয়ে এসে তোমার পূজকক্ষের দ্বার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে। তোমার মানব-পুত্র কোল থেকে নেমে আজ দেবতা-পুত্র হয়ে তোমার হৃদয়ের পূজাবেদীতে চড়ে বসেছে।