পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী আবৰ্তিয়া ঋতুমাল্য করে জাপ, করে আরাধন । দিন গুনে গুনে । সাৰ্থক হল যে তার বিরহের বিচিত্ৰ সাধন মধুর ফাল্গুনে । হেরিনু উত্তরী তব, হে তরুণ, অরুশ আকাশে, শুনি নুচরণকানি দক্ষিণের বাতাসে বাতাসে, মিলনমাঙ্গল্য-হােম প্ৰজ্বলিত পলাশে পলাশে, রক্তিম আগুনে । তাই আজি ধরিত্রীর যত কর্ম যত প্রয়োজন হন অবসান । বৃক্ষশাখা রিক্তভার, ফলে তার নিরাসক্ত মন, ক্ষেতে নাই ধান । বকুলে বকুলে শুধু মধুরকার উঠিছে গুজরি, অকারণ আন্দোলনে চঞ্চলিছে। অশোকমঞ্জরী, কিশলয়ে কিশলয়ে নৃত্য উঠে দিবসশর্বরী বনে জাগে গান । হে বসন্ত, হে সুন্দর, হায় হয়, তোমার করুণা ক্ষণকাল তারে । মিলাইবে এ উৎসব, এই হাসি, এই দেখাশুনা . শূন্য নীলাম্বরে। নিকুঞ্জের বর্ণািছটা একদিন বিচ্ছেদবেলায় ভেসে যাবে বৎসরান্তে রক্তসন্ধ্যাস্বপ্নের ভেলায়, বনের মঞ্জীরধ্বনি অবসন্ন হবে নিরালায় । শ্রান্তিক্লান্তিভারে । তোমারে করিবে বন্দী নিত্যকাল মৃত্তিকাশূঙ্খলে শক্তি আছে কাির ? ইচ্ছায় বন্ধন লও, সে বন্ধন ইন্দ্ৰজালিবলে কর অলংকার। সে বন্ধন দোলরজু, স্বর্গেমর্তে দোলে ছন্দভরে, সে বন্ধন শ্বেতপদ্ম বাণীর মানসসরোবরে, , সে বন্ধন বীণাতন্ত্র, সুরে সুরে সংগীতনিৰ্ব্বরে বধিছে ঝংকার । নন্দনে আনন্দ তুমি, এই মর্তে, হেমর্তের প্রিয় , নিত্য নাই হলে । সুদূরমাধুর্যপানে তব স্পর্শ অনির্বাচনীয়, দ্বার যদি খোলে, ক্ষণে ক্ষণে সেথা আসি নিস্তবন্ধ দাড়াবে বসুন্ধরা, লাগিবে মন্দাররেণু শিরে তার উৰ্ব্বহুতে ঝরা, মাটির বিচ্ছেদপত্র স্বর্গের উচ্চাস্যরসে ভরা রবে তার কোলে ।