পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

· 9y R রবীন্দ্র-রচনাবলী পিঞ্জরের সংকীর্ণতা এবং সুশৃঙ্খল শ্রেণীবিন্যস্ত লীেহশালাকাগুলাই অনুভব করা যায়- পাখি উড়িয়াছে কি মরিয়াছে কি জীবস্মৃত হইয়া আছে, তাহা কে বলিতে পারে। আশ্চর্যন্তব্ধতা এবং শান্তি । পরিপূর্ণ স্বন্তি এবং সন্তোষ। পথে ঘাটে গৃহে সকলই সুসংহত, সুবিহিতশব্দ নাই, দ্বন্দ্ব নাই, উৎসাহ নাই, আগ্রহ নাই- কেবল নিত্যনৈমিত্তিক ক্ষুদ্র কাজ এবং ক্ষুদ্র বিশ্রাম। সমুদ্র অবিশ্রাম একতািনশব্দপূর্বক তািটর উপর সহস্ৰ ফেনশুত্র কোমল করতলের আঘাত করিয়া সমস্ত দিগদিগন্তের শান্তিরক্ষা করিতেছে। অতিদূর পরপরে গাঢ় নীল রেখার মতো বিদেশের আভাস দেখা যায়সেখান হইতে রাগদ্বেষের দ্বন্দ্বকোলাহল ।সমূদ্র পার হইয়া আসিতে পারে না। R সেই পরপারে, সেই বিদেশে এক দুয়ারানীর ছেলে এক রাজপুত্র বাস করে। সে তাহার নির্বাসিত মাতার সহিত সমুদ্রতীরে আপনমনে বাল্যকাল যাপন করিতে থাকে। সে একা বসিয়া বসিয়া মনে মনে এক অত্যন্ত বৃহৎ অভিলাষের জাল বুনিতেছে। সেই জাল নিগদিগন্তরে নিক্ষেপ করিয়া কল্পনায় বিশ্বজগতের নব নব রহস্যরাশি সংগ্ৰহ করিয়া আপনার দ্বারের কাছে টানিয়া তুলিতেছে। তাহার অশান্ত চিত্ত সমুদ্রের তীরে আকাশের সীমায় ঐ দিগন্তরোধী নীল গিরিমালার পরপারে সর্বদা সঞ্চরণ করিয়া ফিরিতেছে- খুঁজতে চায় কোথায় পক্ষীরাজ ঘোড়া, সাপের মাথার মানিক, পারিজাত পুষ্প, সোনার কাঠি, রুপার কাঠি পাওয়া যায়, কোথায় সাত সমূদ্র তেরো নদীর পারে দুর্গম দৈত্যভবনে স্বপ্নসম্ভবা অলোকসুন্দরী রাজকুমারী ঘুমাইয়া রহিয়াছেন। রাজপুত্র পাঠশালে পড়তে যায়, সেখানে পাঠান্তে সদাগরের পুত্রের কাছে দেশ-বিদেশের কথা এবং কোটালের পুত্রের কাছে তাল-বেতালের কাহিনী শোনে। ঝুপ ঝুপ করিয়া বৃষ্টি পড়ে, মেঘে অন্ধকার হইয়া থাকে— গৃহদ্বারে মায়ের কাছে বসিয়া সমুদ্রের দিকে চাহিয়া রাজপুত্র বলে, মা, একটা খুব দূর দেশের গল্প বলে। মা অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহার বাল্যশ্রাত এক অপূর্ব দেশের অপূর্ব গল্প বলিতেন— বৃষ্টির ঝরঝর শব্দের মধ্যে সেই গল্প শুনিয়া রাজপুত্রের হৃদয় উদাস হইয়া যাইত । একদিন সদাগরের পুত্ৰ আসিয়া রাজপুত্রকে কহিল, সাঙােত, পড়াশুনা তো সাঙ্গ করিয়াছি, এখন একবার দেশভ্রমণে বাহির হইব। তাই বিদায় লইতে আসিলাম । রাজার পুত্ৰ কহিল, আমিও তোমার সঙ্গে যাইব । কোটালের পুত্ৰ কহিল, আমাকে কি একা ফেলিয়া যাইবে ; আমিও তোমাদের সঙ্গী । রাজপুত্র দুঃখিনী মাকে গিয়া বলিল, মা, আমি ভ্রমণে বাহির হইতেছে- এবার তোমার দুঃখমোচনের উপায় করিয়া আসিব । তিন বন্ধুতে বাহির হইয়া পড়িল । \9 সমুদ্রে সদাগরের দ্বাদশতয়ী প্রস্তুত ছিল— তিন বন্ধু চড়িয়া বসিল। দক্ষিণের বাতাসে পাল ভরিয়া উঠিল- নীেকাগুলা রাজপুত্রের হৃদয়বাসনার মতো চুটিয়া চলিল। " শঙ্খ দ্বীপে গিয়া একনীেকা শঙ্খ, চন্দনদ্বীপে গিয়া একনীেক চন্দন, প্রবালদ্বীপে গিয়া একনীেকা প্রবাল (तादोष्ट्र झंश्ल । * তাহার পর আর চারি বৎসরে গজদন্ত মৃগনাভি লবঙ্গ জায়ফলে যখন আর চারটি নীেকা পূর্ণ হইল, তখন সহসা একটা বিপর্যয় ঝড় আসিল। সব-কটা নৌকা ডুবিল, কেবল একটি নীেকা তিন বন্ধুকে একটা দ্বীপে আছাড়িয়া ফেলিয়া খান খান হইয়া গেল ।