পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓi፪qog \9Wტ\9 এমন সময় পশ্চাৎ হইতে একটি পুরুষের কণ্ঠ গভীর আবেগভরে কম্পিত রুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিল, “রাজকুমারী।” ቁ রাজকন্যা সহসা ভয়ে চীৎকার করিয়া উঠিলেন। চারিদিক হইতে প্রহরী ছুটিয়া আসিয়া অপরাধীকে বন্দী করিল। রাজকন্যা তখন পুনরায় সসংজ্ঞা হইয়া দেখিলেন, সেনাপতি বন্দী হইয়াছেন। চতুর্থ পরিচ্ছেদ এ অপরাধে প্রাণদণ্ডই বিধান। কিন্তু পূর্বোপকার স্মরণ করিয়া রাজা ঠাঁহাকে নির্বাসিত করিয়া দিলেন সেনাপতি মনে মনে কহিলেন, “দেবী, তোমার নেত্রও যখন প্রতারণা করিতে পারে, তখন সত্য পৃথিবীতে কোথাও নাই। আজ হইতে আমি মানবের শত্ৰু।" একটি বৃহৎ দস্যদলের অধিপতি হইয়া ললিতসিংহ অরণ্যে বাস করিতে লাগিলেন । হে পাঠক, তোমার আমার মতো লোক এইরূপ ঘটনায় কী করিত। নিশ্চয় যেখানে নির্বাসিত হইত সেখানে আর-একটা চাকরির চেষ্টা দেখিত, কিংবা একটা নূতন খবরের কাগজ বাহির করিত। কিছু কষ্ট হইত সন্দেহ নাই- সে অন্নাভাবে। কিন্তু সেনাপতির মতো মহৎ লোক, যাহারা উপন্যাসে সুলভ এবং পৃথিবীতে দুর্লভ, তাহারা চাকরিও করে না, খবরের কাগজও চালায় না। তাহারা যখন সুখে থাকে তখন একনিশ্বাসে নিখিলজগতের উপকার করে এবং মনােবাঞ্ছা তিলমাত্র ব্যর্থ হইলেই আরক্তলোচনে বলে, “রাক্ষসী পৃথিবী, পিশাচ সমাজ, তােদের বুকে পা দিয়া আমি ইহার প্রতিশোধ লইব ।” বলিয়া তৎক্ষণাৎ দাসুব্যবসায় আরম্ভ করে। এইরূপ ইংরেজি কাব্যে পড়া যায় এবং অবশ্যই এ প্রথা রাজপুতদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। দস্যর উপদ্রবে। দেশের লোক ত্রস্ত হইয়া উঠিল। কিন্তু এই অসামান্য দস্যরা অনাথের সহায়, দরিদ্রের বন্ধু, দুর্বলের আশ্রয়, কেবল, ধনী উচ্চকুলজাত সম্রান্ত ব্যক্তি এবং রাজকর্মচারীদের পক্ষে কালান্তক যম। ঘোর অরণ্য, সূর্য অস্তপ্রায়। কিন্তু বনচ্ছায়ায় অকালরাত্রির আবির্ভাব হইয়াছে। তরুণ যুবক অপরিচিত পথে একাকী চলিতেছে! সুকুমার শরীর পথশ্রমে ক্লান্ত, কিন্তু তথাপি অধ্যবসায়ের বিরাম নাই। কটিদেশে যে তরবারি বদ্ধ রহিয়াছে, তাহারই ভার দুঃসহ বোধ হইতেছে। অরণ্যে লেশমাত্র শব্দ হইলেই ভয়প্রবণ হৃদয় হরিণের মতাে চকিত হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু তথাপি এই আসন্ন রাত্রি এবং অজ্ঞাত অরণ্যের মধ্যে দৃঢ় সংকল্পের সহিত অগ্রসর হইতেছে। দস্যরা আসিয়া দস্যপতিকে সংবাদ দিল, “মহারাজ, বৃহৎ শিকার মিলিয়াছে। মাথায় মুকুট, রাজবেশ, কটিদেশে তরবারি ” দাসুপতি কহিলেন, “তবে এ শিকার আমার । তোরা এখানেই থাক।” । পথিক চলিতে চলিতে সহসা একবার শুষ্ক পত্রের খসখস শব্দ শুনিতে পাইল। উৎকণ্ঠিত হইয়া চারি দিকে চাহিয়া দেখিল । সহসা বুকের মাঝখানে তীর আসিয়া বিঁধিল, পান্থ ‘মা বলিয়া ভূতলে পড়িয়া গেল। দস্যপতি নিকট আসিয়া জানুপাতিয়া নত হইয়া আহতের মুখের দিকে নিরীক্ষণ করিলেন। ভূতলশায়ী পথিক দস্যর হাত ধরিয়া কেবল একবার মৃদুস্বরে কহিল, “ললিত।” ; মুহূর্তে দসুর হৃদয় যেন সহস্র খণ্ডে ভাঙিয়া এক চীৎকার শব্দ বাহির হইল, “রাজকুমারী।” দস্যরা আসিয়া দেখিল শিকার এবং শিকারী উভয়েই অন্তিম আলিঙ্গনে বন্ধ হইয়া মৃত পড়িয়া আছে। রাজকুমারী একদিন সন্ধ্যাকালে তাহার অন্তঃপুরের উদ্যানে অজ্ঞানে ললিতের উপর রাজদণ্ড নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, ললিত আর-একদিন সন্ধ্যাকালে অরণ্যের মধ্যে অজ্ঞানে রাজকন্যার প্রতি শর নিক্ষেপ কুসুমাত্র বাইরে যদি কােথাও লিন ইয়া থাকে তাে আৰু উত্তরের অপর উভয়ে বােধ করি করিয়াছে। VSF-Offa ya llSS