পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻欧3阅 ৩৫৩ পঞ্জিকা মিলাইয়া খুব একটা শুভলগ্নে বিবাহ হইয়া গেল । বোবা মেয়েকে পরের হস্তে সমর্পণ করিয়া বাপ-মা দেশে চলিয়া গেল- তাহদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল । বর পশ্চিমে কাজ করে । বিবাহের, অনতিবিলম্বে স্ত্রীকে পশ্চিমে লইয়া গেল । সপ্তাহখানেকের মধ্যে সকলেই বুঝিল, নবরধূ বোবা । তা কেহ বুঝিল না, সেটা তাহার দোষ নহে। সে । কাহাকেও প্রতারণা করে নাই। তাহার দুটি চক্ষু সকল কথাই বলিয়াছিল, কিন্তু কেহ তাহা বুঝিতে পারে নাই। সে চারি দিকে চায়- ভাষা পায় না, যাহারা বােবার ভাষা বুঝিত সেই আজন্মপরিচিত মুখগুলি দেখিতে পায় না- বালিকার চিরনীরব হৃদয়ের মধ্যে একটা অসীম অব্যক্ত ক্ৰন্দন বাজিতে লাগিল- “ অন্তর্যামী ছাড়া আর-কেহ তাহা শুনিতে পাইল না। এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কৰ্ণেন্দ্ৰিয়ের দ্বারা পরীক্ষা করিয়া এক ভাষাবিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল । r > Ridd মহামায়া প্রথম পরিচ্ছেদ মহামায়া এবং রাজীবলোচন উভয়ে নদীর ধারে একটা ভাঙা মন্দিরে সাক্ষাৎ করিল। মহামায়া কোনো কথা না বলিয়া তাহার স্বাভাবিক গভীর দৃষ্টি ঈষৎ ভৎসনার ভাবে রাজীবের প্রতি নিক্ষেপ করিল। তাহার মর্ম এই, তুমি কী সাহসে আজ অসময়ে আমাকে এখানে আহবান করিয়া আনিয়াছ। আমি এ পর্যন্ত তোমার সকল কথা শুনিয়া আসিতেছি বলিয়াই তোমার এতদূর স্পর্ধা বাড়িয়া উঠিয়াছে ? রাজীব একে মহামায়াকে বরাবর ঈষৎ ভয় করিয়া চলে, তাহাতে এই দৃষ্টিপাতে তাহাকে ভারি বিচলিত করিয়া দিল— দুটাে কথা গুছাইয়া বলিবে মনে করিয়াছিল, সে আশায় তৎক্ষণাৎ জলাঞ্জলি দিতে হইল। অথচ অবিলম্বে এই মিলনের একটা-কোনাে-কিছু কারণ না দেখাইলেও চলে না, তাই দ্রুত বলিয়া ফেলিল, “আমি প্ৰস্তাব করিতেছি, এখান হইতে পালাইয়া গিয়া আমরা দুজনে বিবাহ করি।” রাজীবের যে-কথাটা বলিবার উদ্দেশ্য ছিল সে-কথাটা ঠিক বলা হইল বটে, কিন্তু যে-ভূমিকাটি মনে মনে স্থির করিয়া আসিয়াছিল তাহার কিছুই হইল না। কথাটা নিতান্ত নীরস নিরলংকার, এমনকি, অদ্ভুত শুনিতে হইল। নিজে বলিয়া নিজে থিতামত খাইয়া গেল-আরো দুটাে-পাঁচটা কথা জুড়িয়া ওটাকে যে বেশ-একটু নরম করিয়া আনিবে, তাহার সামর্থ্য রহিল না। ভাঙা মন্দিরে নদীর ধারে এই মধ্যাহ্নকালে মহামায়াকে ডাকিয়া আনিয়া নির্বোিধ লোকটা সুদ্ধ কেবল বলিল, “চলো, আমরা বিবাহ করিগে!” মহামায়া কুলীনের ঘরের কুমারী। বয়স চব্বিশ বৎসর। যেমন পরিপূৰ্ণবয়স, তেমনি পরিপূর্ণ সৌন্দর্য। যেন শরৎকালের রৌদ্রের মতো কঁচাসোনার প্রতিমা— সেই রৌদ্রের মতোই দীপ্ত এবং নীরব, এবং তাহার यूष्ट्रि दिालाकन्न नाश ७यूख् 4दर निउँक । তাহার বাপ নাই, বড়ো ভাই আছেন- তাহার নাম ভবানীচরণ চট্টোপাধ্যায়। ভাইবোন প্রায় এক প্রকৃতির লোক। মুখে কথাটি নাই। কিন্তু এমনি একটা তেজ আছে যে, দিবা দ্বিপ্রহরের মতো নিঃশব্দে দহন করে । লোকে ভবানীচরণকে অকারণে ভয় করিত। রাজীব লোকটি বিদেশী। এখানকার রেশমের কুঠির বড়োসাহেব তাহাকে নিজের সঙ্গে লইয়া আসিয়াছে। রাজীবের বাপ এই সাহেবের কর্মচারী ছিলেন, তাহার মৃত্যু হইলে সাহেব তাহার অল্পবয়স্ক পুত্রের