পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏙᏱᎶt8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ভরণপোষণের ভার নিজে লইয়া তাহাকে বাল্যাবস্থায় এই বামনহাটির কুঠিতে লইয়া আসেন। বালকের সঙ্গে কেবল তাহার স্নেহশীলা পিসি ছিলেন । ইহারা ভবানীচরণের প্রতিবেশীরূপে বাস করিতেন। মহামায়া রাজীবের বাল্যাসঙ্গিনী ছিল এবং রাজীবের পিসির সহিত মহামায়ার সুদৃঢ় স্নেহবন্ধন ছিল। । রাজীবের বয়স ক্রমে ক্ৰমে ষোলো, সতেরো, আঠারো, এমনকি, উনিশ হইয়া উঠিল, তথাপি পিসির বিস্তুর অনুরোধসত্ত্বেও সে বিবাহ করিতে চায় না। সাহেব বাঙালির ছেলের এরূপ অসামান্য সুবুদ্ধির পরিচয় পাইয়া ভারি খুশি হইলেন ; মনে করিলেন, ছেলেটি ঠাঁহাকেই আপনার জীবনের আদর্শস্থল করিয়াছে। সাহেব অবিবাহিত ছিলেন । ইতিমধ্যে পিসিরও মৃত্যু হইল। এদিকে সাধ্যাতীত ব্যয় ব্যতীত মহামায়ার জন্যও অনুরূপ কুলসম্পন্ন পাত্র জোটে না। তাহারও কুমারীবয়স ক্রমে বাড়িতে লাগিল। পাঠকদিগকে বলা বাহুল্য যে, পরিণয়বন্ধন যে-দেবতার কার্য তিনি যদিও এই নরনারীযুগলের প্রতি এযাবৎ বিশেষ অমনোযোগ প্রদর্শন করিয়া আসিতেছেন, কিন্তু প্ৰণয়বন্ধনের ভার র্যাহার প্রতি তিনি এতদিন সময় নষ্ট করেন নাই। বৃদ্ধ প্রজাপতি যখন ঢুলিতেছিলেন, যুবক কন্দৰ্প তখন সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় ছিলেন । ভগবান কন্দপের প্রভাব ভিন্ন লোকের উপর ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয় । রাজীব তাহার প্ররোচনায় দুটা-চারটে মনের কথা বলিবার অবসর খুঁজিয়া বেড়ায়, মহামায় তাহাকে সে অবসর দেয় না— তাহার নিস্তব্ধ গভীর দৃষ্টি রাজীবের ব্যাকুল হৃদয়ে একটা ভীতির সঞ্চার করিয়া তোলে। আজ শতবার মাথার দিব্য দিয়া রাজীব মহামায়াকে এই ভাঙা মন্দিরে আনিতে কৃতকার্য হইয়াছে। তাই মনে করিয়াছিল, যতকিছু বলিবার আছে আজ। সব বলিয়া লইবে, তাহার পরে হয় আমরণ সুখ নয়। আজীবন মৃত্যু। জীবনের এমন একটা সংকটের দিনে রাজীব কেবল কহিল, “চলে, তবে বিবাহ করা যাউক ৷” এবং তার পরে বিস্মৃতপাঠ ছাত্রের মতাে থতমত খাইয়া চুপ করিয়া রহিল। রাজীব যে এরূপ প্রস্তাব করবে মহামায়া যেন আশা করে নাই। অনেকক্ষণ তাই নীরব হইয়া রহিল। মধ্যাহ্নকালের অনেকগুলি অনির্দিষ্ট করুণধ্বনি আছে, সেইগুলি এই নিস্তব্ধতায় ফুটিয়া উঠিতে লাগিল । বাতাসে মন্দিরের অর্ধসংলগ্ন ভাঙা কবাট এক-একবার অত্যন্ত মৃদুমন্দ আর্তম্বর-সহকারে ধীরে ধীরে খুলিতে এবং বন্ধ হইতে লাগিল- মন্দিরের গবাক্ষে বসিয়া পায়রা বকম বকমা করিয়া ডাকে, বাহিরে শিমুলগাছের শাখায় বসিয়া কাঠঠোকরা একঘেয়ে ঠক ঠক শব্দ করে, শুষ্ক পত্ররাশির মধ্য দিয়া গিরগিটি সরসর শব্দে ছুটিয়া যায়, হঠাৎ একটা উষ্ণ বাতাস মাঠের দিক হইতে আসিয়া সমস্ত গাছের পাতার মধ্যে ঝরঝর করিয়া উঠে এবং হঠাৎ নদীর জল জাগিয়া উঠিয়া ভাঙা ঘাটের সোপানের উপর ছলাৎ ছিল।াৎ করিয়া আঘাত করিতে থাকে। এই সমস্ত আকস্মিক অলস শব্দের মধ্যে বহুদূর তরুতল হইতে একটি রাখলের বঁশিতে মেঠো সুর বাজিতেছে। রাজীব মহামায়ার মুখের দিকে চাহিতে সাহসী না হইয়া মন্দিরের ভিত্তির উপর ঠেস দিয়া দাড়াইয়া একপ্রকার শ্রান্ত স্বপ্নাবিক্টের মতো নদীর দিকে চাহিয়া আছে। কিছুক্ষণ পরে মুখ ফিরাইয়া লইয়া রাজীব আর-একবার ভিক্ষুকভাবে মহামায়ার মুখের দিকে চাহিল। মহামায়া মাথা নাড়িয়া কহিল, “না, সে হইতে পারে না ।” । মহামায়ার মাথা যেমনি নড়িল রাজীবের আশাও অমনি ভূমিসাৎ হইয়া গেল। কারণ, রাজীব সম্পূর্ণ জানিত, মহামায়ার মাথা মহামায়ার নিজের নিয়মানুসারেই নড়ে, আর-কাহারও সাধ্য নাই তাহাকে আপনি মতে বিচলিত করে। প্রবল কুলাভিমান মহামায়ার বংশে। কত কাল হইতে প্রবাহিত হইতেছে- সে কি কখনাে রাজীবের মতাে অকুলীন ব্রাহ্মণকে বিবাহ করিতে সম্মত হইতে পারে। ভালোবাসা এক এবং বিবাহ করা আর । যাহা হউক, মহামায়া বুঝিতে পারিল, তাহার নিজের বিবেচনাহীন ব্যবহারেই রাজীবের এতদূর স্পর্ধা বাড়িয়াছে; তৎক্ষণাৎ সে মন্দির ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত হইল। রাজীব অবস্থা বুঝিয়া তাড়াতাড়ি কহিল, “আমি কালই এদেশ হইতে চলিয়া যাইতেছি।” মহামায়া প্রথমে মনে করিয়াছিল যে ভাবটা দেখাইবে- সে খবরে আমার কী আবশ্যক। কিন্তু পারিল DS K DDBDB DD K DuB KS MBLBBD DB DBDBS SBBD S