পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻欧g冈 轴 ৩৭৩ ৷ যোলো-আনা আছে ; এইজন্য প্রাণপণে সেয়ানা হইবার চেষ্টা করে । তাহার ফল হয় এই যে, সেই (भरुकाब्लोंफ्नै छैहक, किङ् दिख्द्र आफुक्ष्न्न कदिशा छै0क । ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়ো না, তাহা হইলে মিথ্যা জবাব শুনিতে হইবে না।” বালক সেইটি বােঝে, সে কোনাে প্রশ্ন করে না। এইজন্য রূপকথার সুন্দর মিথ্যটুকু শিশুর মতো উলঙ্গ, সত্যের মতো সরল, সদ্য-উৎসারিত উৎসের মতো স্বচ্ছ; আর এখনকার দিনের সুচতুর মিথ্যা মুখোশ-পরা মিথ্যা। কোথাও যদি তিলমাত্র ছিদ্র থাকে অমনি ভিতর হইতে সমস্ত ফাকি ধরা পড়ে, পাঠক বিমুখ হয়, লেখক পালাইবার পথ পায় না । w শিশুকালে আমরা যথার্থ রসজ্ঞ ছিলাম, এইজন্য যখন গল্প শুনিতে বসিয়াছি তখন জ্ঞানলাভ করিবার জন্য আমাদের তিলমাত্র আগ্রহ উপস্থিত হইত না এবং অশিক্ষিত সরল হৃদয়টি ঠিক বুঝিত আসল কথাটা কোনটুকু। আর এখনকার দিনে এত বাহুল্য কথাও বকিতে হয়, এত অনাবশ্যক কথারও আবশ্যক হইয়া পড়ে। কিন্তু সবশেষে সেই আসল কথাটিতে গিয়া দাঁড়ায়- এক যে ছিল রাজা । বেশ মনে আছে সেদিন সন্ধাবেল ঝড়বৃষ্টি হইতেছিল। কলিকাতা শহর একেবারে ভাসিয়া গিয়াছিল। গুলির মধ্যে একহাঁটু জল। মনে একান্ত আশা ছিল, আজ আর মাস্টার আসিবে না। কিন্তু তবুর্তাহার আসার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভীতচিত্তে পথের দিকে চাহিয়া বারান্দায় চৌকি লইয়া বসিয়া আছি। যদি বৃষ্টি একটু ধরিয়া আসিবার উপক্রম হয় তবে একাগ্রচিত্তে প্রার্থনা করি, হে দেবতা, আর একটুখানি, কোনোমতে সন্ধ্যা সাড়ে-সাতটা পার করিয়া দাও । তখন মনে হইত। পৃথিবীতে বৃষ্টির আর কোনো আবশ্যক নাই, কেবল একটিমাত্র সন্ধ্যায় নগরপ্রান্তের একটিমাত্র ব্যাকুল বালককে মাস্টারের করােল হস্ত হইতে রক্ষা করা ছাড়া। পুরাকালে কোনাে একটি নির্বাসিত যক্ষও তো মনে করিয়াছিল, আষাঢ়ে মেঘের বড়ো একটা কোনো কাজ নাই, অতএব রামগিরিশিখরে একটিমাত্র বিরহীর দুঃখকথা বিশ্ব পাের হইয়া অলকার সীেধবাতায়নের কোনো একটি বিরহিণীর কাছে লইয়া যাওয়া তাহার পক্ষে কিছুমাত্র গুরুতর নহে, বিশেষত পথটি যখন এমন সুরমা এবং তাহার হৃদয়বেদনা এমন দুঃসহ। বালকের প্রার্থনামতে না হউক, ধূম-জ্যোতিঃসলিল-মরুতের বিশেষ কোনাে নিয়মানুসারে বৃষ্টি ছাড়িল না । কিন্তু হয়, মাস্টােরও ছাড়িল না । গলির মোড়ে ঠিক সময়ে একটি পরিচিত ছাতা দেখা দিল, সমস্ত আশাবাষ্প এক মুহূর্তে ফাটিয়া বাহির হইয়া আমার বুকটি যেন পঞ্জরের মধ্যে মিলাইয়া গেল । পরপীড়ন-পাপের যদি যথোপযুক্ত শাস্তি থাকে। তবে নিশ্চয় পরজন্মে আমি মাস্টার হইয়া এবং আমার মাস্টােরমহাশয় ছাত্র হইয়া জন্মিবেন । তাহার বিরুদ্ধে কেবল একটি আপত্তি এই যে, আমাকে মাস্টােরমহাশয়ের মাস্টার হইতে গেলে অতিশয় অকালে ইহসংসার হইতে বিদায় লইতে হয়, অতএব আমি ছাতাটি দেখিবামাত্র চুটিয়া অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলাম। মা তখন দিদিমার সহিত মুখােমুখি বসিয়া । প্ৰদীপালোকে বিন্তি খেলিতেছিলেন। ঝুপ করিয়া একপাশে শুইয়া পড়িলাম। মা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী হইয়াছে।” আমি মুখ হাঁড়ির মতো করিয়া কহিলাম, “আমার অসুখ করিয়াছে, আজ আর আমি মাস্টারের কাছে পড়িতে যাইব না।” আশা করি, অপ্রাপ্তবয়স্ক কেহ আমার এ লেখা পড়বে না, এবং স্কুলের কোনো সিলেকশন-বাহিতে আমার এ লেখা উদ্ধৃত হইবে না। কারণ, আমি যে কাজ করিয়াছিলাম তাহা নীতিবিরুদ্ধ এবং সেজন্য কোনো শাস্তিও পাই নাই। বরঞ্চ আমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল। মা চাকরকে বলিয়া দিলেন, “আজ তবে থাক, মাস্টারকে যেতে বলে দে।” কিন্তু তিনি যেরূপ নিরুদবিগ্নভাবে বিন্তি খেলিতে লাগিলেন, তাহাতে বেশ বােঝা গেল যে মা তঁহার পুত্রের অসুখের উৎকট লক্ষণগুলি মিলাইয়া দেখিয় মনে মনে হাসিলেন। আমিও মনের সুখে বালিশের মধ্যে মুখ গুজিয়া খুব হাসিলাম- আমাদের উভয়ের মন উভয়ের কাছে অগােচর রহিল না। কিন্তু সকলেই জানেন, এ প্রকারের অসুখ অধিকক্ষণ স্থায়ী করিয়া রাখা রোগীর পক্ষে বড়োই দুষ্কর।