পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外呜页 ova তখন উভয়ে মিলিয়া তাঁহাই প্রমাণ করিয়া দিতে কৃতসংকল্প হইল। কাদাখোচা নদীতীরে লাফ দিয়া, পৃথিবীর কোমল কৰ্দমে অনবরতই চক্ষু বিদ্ধ করিয়া বসুন্ধরার জীৰ্ণতা নির্দেশ করিতে লাগিল এবং কাঠঠোকরা বনস্পতির কঠিন শাখায় বারংবার চঞ্চু আঘাত করিয়া অরণ্যের অন্তঃশূন্যতা প্রচার করিতে প্ৰবৃত্ত হইল । .' বিধিবিড়ম্বনায় উক্ত দুই অধ্যবসায়ী পক্ষী সংগীতবিদ্যায় বঞ্চিত। অতএব কোকিল। যখন ধরাতােল নব নব বসন্তসমাগম পঞ্চম স্বরে ঘোষণা করিতে লাগিল, এবং শ্যামা যখন অরণ্যে নব নব প্ৰভাতোদয় কীর্তন দুঃস্থত ছিল অত্র এই ই মূৰত অস্ত্ৰী ফু পক্ষী আৰু উৎসাহে আপৰ প্ৰতিজ্ঞা পালন করিতে এ গল্প তোমাদের ভালো লাগিল না ? ভালো লাগিবার কথা নহে। কিন্তু ইহার সর্বাপেক্ষা মহৎ গুণ এই যে, পাঁচ-সাত প্যারাগ্রাফেই সম্পূর্ণ। ’ এই গল্পটা যে পুরাতন তাহাও তোমাদের মনে হইতেছে না ? তাহার কারণ পৃথিবীর ভাগ্যদোষে এ গল্প অতিপুরাতন হইয়াও চিরকাল নূতন রহিয়া গেল। বহুদিন হইতেই অকৃতজ্ঞ কাঠঠোকরা পৃথিবীর দৃঢ় কঠিন । অমর মহত্ত্বের উপর ঠক ঠক শব্দে চঞ্চুপাত করিতেছে, এবং কাদাখোঁচা পৃথিবীর সরস উর্বর কোমলত্বের মধ্যে খচ খচ শব্দে চঞ্চ বিদ্ধ করিতেছে- আজও তাহার শেষ হইল না, মনের আক্ষেপ এখনো রহিয়া গেল । গল্পটার মধ্যে সুখদুঃখের কথা কী আছে জিজ্ঞাসা করিতেছ? ইহার মধ্যে দুঃখের কথাও আছে, সুখের কথাও আছে। দুঃখের কথা এই যে, পৃথিবী যতই উদার এবং অরণ্য যতই মহৎ হউক, ক্ষুদ্র চঞ্চ আপনার উপযুক্ত খাদ্য না পাইবামাত্র তাহাদিগকে আঘাত করিয়া আসিতেছে। এবং সুখের বিষয় এই যে, তথাপি শত সহস্ৰ বৎসর পৃথিবী নবীন এবং অরণ্য শ্যামল রহিয়াছে। যদি কেহ মরে তো সে ঐ দুটি বিদ্বেষবিষজর্জর হতভাগ্য বিহঙ্গ, এবং জগতে কেহ সে সংবাদ জানিতেও পায় না। তোমরা এ গল্পের মধ্যে মাথামুণ্ডু অর্থ কী আছে কিছু বুঝিতে পার নাই ? তাৎপর্য বিশেষ কিছুই জটিল । নহে, হয়তো কিঞ্চিৎ বয়সপ্রাপ্ত হইলেই বুঝিতে পরিবে। যাহাই হউক, সর্বসূদ্ধ জিনিসটা তোমাদের উপযুক্ত হয় নাই ? তাহার তো কোনো সন্দেহমাত্র নাই । उा ७७०० সমাপ্তি প্রথম পরিচ্ছেদ অপূর্বকৃষ্ণ বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন। নদীটি ক্ষুদ্র। বর্ষ অন্তে প্রায় শুকাইয়া যায়। এখন শ্রাবণের শেষে জলে ভরিয়া উঠিয়া একেবারে গ্রামের বেড়া ও বঁাশঝাড়ের তলদেশ চুম্বন করিয়া চলিয়াছে। +. বহুদিন ঘন বর্ষার পরে আজ মেঘমুক্ত আকাশে রৌদ্র দেখা দিয়াছে। নীেকায় আসীন অপূর্বকৃষ্ণের মনের ভিতরকার একখানি ছবি যদি দেখিতে পাইতাম তবে সেখানেও এই যুবকের মানস-নদী নববর্ষায় কুলে কুলে ভরিয়া আলোকে জ্বলজ্বল এবং বাতাসে ছলছল নীেকা যথাস্থানে ঘটে আসিয়া লাগিল। নদীতীর হইতে অপূর্বােদর বাড়ির পাকা ছাদ গাছের অন্তরাল দিয়া দেখা যাইতেছে। অপূর্বের আগমন সংবাদ বাড়ির কেহ জানিত না সেইজন্য ঘাটে লোক আসে নাই। মাবি