পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€9እb” রবীন্দ্র-রচনাবলী বিপিনবিহারী হাতে কাজ লইয়াই দেখিলেন তাহার বাপ বিস্তর ব্ৰাহ্মণকে জমি বিনা খাজনায় ছাড়িয়া দিয়াছেন এবং খাজনা যে কত লোককে কমি দিয়াছেন তাহার আর সংখ্যা নাই। তাহার কাছে কেহ কািল এখন আঁচল ধ্বনিতান্ত পূৰ্ণৰ দিয়া করে পরিক্ত ক-টাে উত্তর কোঁ দুৰ্জয় বিপিনবিহারী কহিলেন, এ কখনোই হইতে পারে না ; অর্ধেক জমিদারি। আমি লাখেরাজ ছাড়িয়া দিতে পারি না। তাহার মনে নিম্নলিখিত দুই যুক্তির উদয় হইল। - প্রথমত, যে-সকল অকৰ্মণ্য লোক ঘরে বসিয়া এই সব জমির উপস্বত্ব ভোগ করিয়া স্ফীত হইতেছে তাহারা অধিকাংশই অপদাৰ্থ এবং দয়ার অযোগ্য। এরাপ দানে দেশে কেবল আলস্যের প্রশ্ৰয় দেওয়া হয় । দ্বিতীয়ত, র্তাহার পিতৃ-পিতামহের সময়ের অপেক্ষা এখন জীবিকা অত্যন্ত দুর্লভ এবং দুর্মুল্য হইয়া পড়িয়াছে। অভাব অনেক বাড়িয়া গিয়াছে। এখন একজন ভদ্রলোকের আত্মসন্ত্রম রক্ষা করিয়া চলিতে পূর্বাপেক্ষা চারগুণ খরচ পড়ে। অতএব তাহার পিতা যেরূপ নিশ্চিন্তমনে দুই হন্তে সমস্ত বিলাইয়া ছড়াইয়া গিয়াছেন এখন আর তাহা করিলে চলিবে না, বরঞ্চ সেগুলি কুড়াইয়া বাড়াইয়া আবার ঘরে আনিবার চেষ্টা করা কর্তব্য । কর্তব্য বুদ্ধি তাঁহাকে যাহা বলিল তিনি তাঁহাই করিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি একটা প্রিন্সিপল ধরিয়া চলিতে লাগিলেন । ঘর হইতে যাহা বাহির হইয়াছিল, আবার তাহা অল্পে অল্পে ঘরে ফিরিতে লাগিল। পিতার অতি অল্প দানই তিনি বহাল রাখিলেন, এবং যাহা রাখিলেন তাহাও যাহাতে চিরস্থায়ী দানের স্বরূপে গণ্য না হয় এমন উপায় করিলেন । কৃষ্ণগোপাল কাশীতে থাকিয়া পত্ৰযোগে প্রজাদিগের ক্ৰন্দন শুনিতে পাইলেন- এমনকি, কেহ কেহ র্তাহার নিকটে গিয়াও কঁদিয়া পড়িল। কৃষ্ণগোপাল বিপিনবিহারীকে পত্র লিখিলেন যে, কাজটা গৰ্হিত হইতেছে । , বিপিনবিহারী উত্তরে লিখিলেন যে, পূর্বে যেমন দান করা যাইত তেমনি পাওনা নানাপ্রকারের ছিল তখন জমিদার এবং প্রজা উভয় পক্ষের মধ্যেই দানপ্রতিদান ছিল। সম্প্রতি নূতন নূতন আইন হইয়া ন্যান্য খাজনা ছাড়া অন্য পাচরকম পাওনা একেবারে বন্ধ হইয়াছে এবং কেবলমাত্র খাজনা আদায় করা ছাড় জমিদারের অন্যান্য গৌরবজনক অধিকারও উঠিয়া গিয়াছে- অতএব এখনকার দিনে যদি আমি আমার ন্যায্য পাওনার দিকে কঠিন দৃষ্টি না রাখি। তবে আর থাকে কী। এখন প্রজাও আমাকে অতিরিক্ত কিছু দিয়ে না, আমিও তাঁহাকে অতিরিক্ত কিছু দিব না- এখন আমাদের মধ্যে কেবলমাত্র দেনাপাওনার সম্পর্ক দানখয়রাত করিতে গেলে ফতুর হইতে হইবে, বিষয় রক্ষা এবং কুলসন্ত্রম রক্ষা করা দুরূহ হইয়া পড়িবে। কৃষ্ণগোপাল সময়ের এতাধিক পরিবর্তনে অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া উঠিতেন এবং ভাবিতেন এখনকার ছেলেরা এখনকার কালের উপযোগী কাজ করিতেছে, আমাদের সেকালের নিয়ম এখন খাটিবে না। আ:ি দূরে বসিয়া ইহাতে হস্তক্ষেপ করিতে গেলে তাহারা বলিবে, তবে তোমার বিষয় তুমি ফিরিয়া লও, আমর ইহা রাখিতে পারিব না। কাজ কী বাপু, এ কয়েকটা দিন কোনোমতে হরিনাম করিয়া কাটাইয়া দিতে পারিয়ে ਨੇ | Վ. এইভাবে কাজ চলিতে লাগিল। অনেক মকদ্দমা মামলা হাঙ্গামা ফেসাদ করিয়া বিপিনবিহারী সমস্ত প্ৰায় একপ্রকার মনের মতো গুছাইয়া লইলেন । । অনেক প্রজাই ভয়ক্রমে বশ্যতা স্বীকার করিল, কেবল মির্জা বিবির পুত্র অছিমদি বিশ্বাস কিছুতেই বা মানিল, না । r