পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ Y©ሕሕ বিপিনবিহারীর আক্রোশও তাহার উপরে সব চেয়ে বেশি। ব্ৰাহ্মণের ব্ৰহ্মাত্রর একটা অর্থ বোঝা যায় কিন্তু এই মুসলমান-সন্তান যে কী হিসাবে এতটা জমি নিষ্কর ও স্বল্প-করে উপভোগ করে বুঝা যায় না। একটা সামান্য যবন বিধবার ছেলে গ্রামের ছাত্রবৃত্তি স্কুলে দুই হত্র লিখিতে পড়িতে শিখিয়াছে কিন্তু আপনার সৌভাগ্যগর্বে সে যেন কাহাকেও গ্রাহ্য করে না। r অনুগ্রহ পাইয়া আসিতেছে। কিন্তু এ অনুগ্রহের কোনো বিশেষ কারণ তাহারা নির্ণয় করিতে পারে না। বােধ করি অন্যথা বিধবা নিজ দুঃখ জানাইয়া কর্তার দয়া উদ্রেক করিয়াছিল। ካ፡ কিন্তু বিপিনের নিকট এই অনুগ্রহ সর্বাপেক্ষা অযোগ্য বলিয়া প্রতিভাত হইল। বিশেষত ইহাদের পূর্বকার দরিদ্র অবস্থা বিপিন দেখেন নাই, এখন ইহাদের সচ্ছলতার বাড়াবাড়ি এবং অপর্যাপ্ত দম্ভ দেখিয়া श्ता एश्लील ल ल ल ल ल ले করিয়া আছিমদিও উদ্ধত প্রকৃতির যুবক। সে বলিল, প্ৰাণ যাইবে তবু আমার অধিকারের এক তিল ছাড়িয়া দির না। উভয় পক্ষে ভারি যুদ্ধ বাধিয়া উঠিল। আছিমদির বিধবা মাতা ছেলেকে বার বার করিয়া বুঝাইল, জমিদারের সহিত কাজিয়া করিয়া কাজ নাই, এতদিন যাহার অনুগ্রহে জীবন কাটিল, তাহার অনুগ্রহের পরে নির্ভর করাই কর্তব্য, জমিদারের প্রার্থনামত किकू छgिशा (Gग्रा शाक। আছিমদি কহিল, “মা, তুমি এ সকল বিষয় কিছুই বােঝা না।” । মকদ্দমায় আছিমদি একে একে হারিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু যতই হার হইতে লাগিল, ততই তাহার জিদ বাড়িয়া উঠিল। তাহার সর্বশ্বের জন্য সে সর্বস্বই পণ করিয়া বসিল । - মির্জা বিবি একদিন বৈকালে বাগানের তরিতরকারি কিঞ্চিৎ উপহার লইয়া গোপনে বিপিনবাবুর সহিত সাক্ষাৎ করিল। বৃদ্ধ যেন তাহার সকরুণ মাতৃদৃষ্টির দ্বারা সস্নেহে বিপিনের সর্বঙ্গে হাত বুলাইয়া কহিল, “তুমি আমার বাপ, আল্লা তোমার ভালো করুন। বাবা, অছিমকে তুমি নষ্ট করিয়ো না, ইহাতে তোমার ধর্ম হইবে না । তাহাকে আমি তোমার হস্তেই সমৰ্পণ করিলাম- তাহাকে নিতান্তই অবশ্যপ্রতিপাল্য একটি অকৰ্মণ্য ছোটাে ভাইয়ের মতো গ্রহণ করে- সে তোমার অসীম ঐশ্বর্যের ক্ষুদ্র এককণা পাইয়াছে বলিয়া ক্ষুন্ন হইয়ো না বাপ ।” অধিক বয়সের স্বাভাবিক প্ৰগলভতাবশত বুড়ি তাহার সহিত ঘরকন্না পাতাইতে আসিয়াছে দেখিয়া বিপিন ভারি বিরক্ত হইয়া উঠিল। কহিল, “তুমি মেয়েমানুষ, এ-সমস্ত কথা বােঝে না। যদি কিছু জানাইবার থাকে তোমার ছেলেকে পঠাইয়া দিয়ে ।” মির্জা বিবি নিজের ছেলে এবং পরের ছেলে উভয়ের কাছেই শুনিল, সে এ বিষয়ে কিছুই বোঝে না। আল্লার নাম স্মরণ করিয়া চোেখ মুছিতে মুছতে বিধবা ঘরে ফিরিয়া গৈল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ মকদ্দমা ফৌজদারি হইতে দেওয়ানি, দেওয়ানি হইতে জেলা-আদালত, জেলা-আদালত হইতে হাইকোর্ট পর্যন্ত চলিল। বৎসর দেড়েক এমনি করিয়া কাটিয়া গেল। অছিমন্দি যখন দেনার মধ্যে আকণ্ঠ নিমগ্ন ইয়াছে তখন আপিল-আদালতে তাহার আংশিক জয় সাব্যস্ত হইল । কিন্তু ডাঙার বাঘের মুখ হইতে যেটুকু বঁচিল জলের কুমির তাহার প্রতি আক্রমণ করিল। মহাজন সময় বুঝিয়া ডিক্রিজারি করিল। অছিমদির যথাসর্বস্ব নিলাম হইবার দিন স্থির হইল। সেদিন সোমবার, হাটের দিন। ছােটাে একটা নদীর ধারে হাট। বর্ষাকালে নদী পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। কতক নীেকায় এবং কতক ডাঙায় কেনাবেচা চলিতেছে, কলরবের অন্ত নাই। পণ্যদ্রব্যের মধ্যে এই আষাঢ়