পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনস্মৃতি 89 VO কোনোদিন গাড়িও চড়ি নাই বাড়ির বাহিরও হই নাই, তাই সত্য যখন ইস্কুল-পথের ভ্রমণবৃত্তান্তটিকে অতিশয়ৌক্তি-অলংকারে প্রত্যহই আত্মজ্বল করিয়া তুলিতে লাগিল তখন ঘরে আর মন কিছুতেই টিকিতে চাহিল না। যিনি আমাদের শিক্ষক ছিলেন তিনি আমার মোহ বিনাশ করিবার জন্য প্রবল চপেটাঘাতসহ এই সারগর্ভ কথাটি বলিয়াছিলেন, “এখন ইস্কুলে যাবার জন্য যেমন কঁদিতেছ, না যাবার জন্য ইহার চেয়ে অনেক বেশি কঁদিতে হইবে।” সেই শিক্ষকের নামধাম আকৃতিপ্রকৃতি আমার কিছুই মনে নাই- কিন্তু সেই গুরুবাক্য ও গুরুতর চপেটাঘাত স্পষ্ট মনে জাগিতেছে। এতবড়ো অব্যৰ্থ ভবিষ্যদবাণী জীবনে আর-কোনোদিন কর্ণগোচর হয় নাই । কান্নার জোরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে* অকালে ভরতি হইলাম। সেখানে কী শিক্ষালাভ করিলাম মনে নাই। কিন্তু একটা শাসনপ্রণালীর কথা মনে আছে। পড়া বলিতে না পারিলে ছেলেকে বেঞ্চে দাঁড় করাইয়া তাহার দুই প্রসারিত হাতের উপর ক্লাসের অনেকগুলি প্লেট একত্র করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হইত। এরূপে ধারণাশক্তির অভ্যাস বাহির হইতে অন্তরে সঞ্চারিত হইতে পারে কি না তাহা মনস্তত্ত্ববিদ্যুদিগের আলোচ্য। এমনি করিয়া নিতান্ত শিশুবয়সেই আমার পড়া আরম্ভ হইল। চাকরদের মহলে যে-সকল বই প্রচলিত ছিল তাহা লইয়াই আমার সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয়। তাহার মধ্যে চাণক্যশ্লোকের বাংলা অনুবাদ ও কৃত্তিবাস রামায়ণই প্রধান। সেই রামায়ণ পড়ার একটা দিনের ছবি মনে স্পষ্ট জাগিতেছে। সেদিন মেঘলা করিয়াছে; বাহিরবাড়িতে রাস্তার ধারের লম্বা বারান্দাটাতে খেলিতেছি। মনে নাই সত্য কী কারণে আমাকে ভয় দেখাইবার জন্য হঠাৎ "পুলিসম্যান পুলিসম্যান করিয়া ডাকিতে লাগিল । পুলিসম্যানের কর্তব্য সম্বন্ধে অত্যন্ত মোটামুটি রকমের একটা ধারণা আমার ছিল। আমি জানিতাম, একটা লোককে অপরাধী বলিয়া তাহাদের হাতে দিবামাত্রই, কুমির যেমন খাঁজকাটা দাঁতের মধ্যে শিকারকে বিদ্ধ করিয়া জলের তলে অদৃশ্য হইয়া যায়, তেমনি করিয়া হতভাগ্যকে চাপিয়া ধরিয়া অতলস্পর্শ থানার মধ্যে অন্তৰ্হিত হওয়াই পুলিসকৰ্মচারীর স্বাভাবিক ধর্ম। এরূপ নির্মম শাসনবিধি হইতে নিরপরাধ বালকের পরিত্রাণ কোথায় তাহা ভাবিয়া না পাইয়া একেবারে অন্তঃপুরে দৌড় দিলাম ; পশ্চাতে তাহারা অনুসরণ করিতেছে এই অন্ধভয় আমার সমস্ত পৃষ্ঠদেশকে কুষ্ঠিত করিয়া তুলিল। মাকে গিয়া আমার আসন্ন বিপদের সংবাদ জানাইলাম ; তাহাতে র্তাহার বিশেষ উৎকণ্ঠার লক্ষণ প্রকাশ পাইল না। কিন্তু আমি বাহিরে যাওয়া নিরাপদ বােধ করিলাম না। দিদিমা, আমার মাতার কোনাে এক সম্পর্কে খুড়ি, যে কৃত্তিবাসের রামায়ণ পড়িতেন সেই মার্বোিলকাগজ-মণ্ডিত কোণছেড়া-মলাটওয়ালা মলিন বইখানি কোলে লইয়া মায়ের ঘরের দ্বারের কাছে পড়িতে বসিয়া গেলাম। সম্মুখে অন্তঃপুরের আঙিনা ঘেরিয়া চৌকোণ বারান্দা ; সেই বারান্দায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ হইতে অপরাহুের স্নান আলো আসিয়া পড়িয়াছে। রামায়ণের কোনো-একটা করুণ বৰ্ণনায় আমার চােখ দিয়া জল পড়তেছে দেখিয়া দিদিমা জোর করিয়া আমার হাত হইতে বইটা কাড়িয়া লইয়া গেলেন। ঘর ও বাহির আমাদের শিশুকালে ভোগবিলাসের আয়োজন ছিল না বলিলেই হয়। মোটের উপরে তখনকার জীবনযাত্রা এখনকার চেয়ে অনেক বেশি সাদাসিধা ছিল । তখনকার কালের ভদ্রলোকের মােনরক্ষার উপকরণ দেখিলে এখনকার কালা লজ্জায় তাহার সঙ্গে সকলপ্রকার সম্বন্ধ অস্বীকার করিতে চাহিবে। এই তো তখনকার ১ গীেরমোহন আঢ্যের বিদ্যালয় স্থাপিত ১৮২৩। বিদ্যালয়টি তখন “গরিানহাটায় গোরাচাঁদ বাশাকের বাটীতে” अरहिछ ञ्जि | ২। সারদাদেবী (১৮২৪-৭৫), বিবাহ ১৮২৯-৩০ ৷ মতান্তরে (রবীন্দ্ৰ কথা পৃ ১-৪) : সারদাদেবীর জন্ম, ইং

  • ५२७ ; दिवाश्, गाइन ४२8० [sv98]

৩ সারদাদেবীর “কাকার দ্বিতীয় পক্ষের বিধবা শ্ৰী”, “তিনি প্রায় মায়ের সারদাদেবীর সমবয়সী ছিলেন।”- éllSዒ