পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

धैदानशूख्रि 8 SG ইয়া হঠাৎ একসময়ে ধা করিয়া ডুব পাড়িত ; কেহ বা উপরের সিঁড়ি হইতেই বিনা ভূমিকায় সশব্দে জলের মধ্যে ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া আত্মসমর্পণ করিত; কেহ বা জলের মধ্যে নামিতে নামিতে এক নিশ্বাসে কতকগুলি শ্লোক আওড়াইয়া লাইত; কেহ বা ব্যস্ত, কোনােমতে স্নান সারিয়া লইয়া বাড়ি যাইবার জন্য উৎসুক ; কাহারও-বা ব্যস্ততা লেশমাত্র নাই, ধীরেসুস্থে স্নান করিয়া, গা মুছিয়া, কাপড় ছাড়িয়া, কেঁচােটা দুই-তিনবার ঝাড়িয়া, বাগান হইতে কিছু বা ফুল তুলিয়া, মৃদুমন্দ দোদুলগীতিতে স্নানগ্নিগ্ধ শরীরের আরামটিকে বায়ুতে বিকীর্ণ করিতে করিতে বাড়ির দিকে তাহার যাত্রা। এমনি করিয়া দুপুর বাজিয়া যায়, বেলা একটা হয়। ক্রমে পুকুরের ঘাট জনশূন্য, নিন্তব্ধ। কেবল রাজহাঁস ও পাতিহাসগুলা সারাবেল ডুব দিয়া গুগলি তুলিয়া খায় এবং চঞ্চচালনা করিয়া ব্যতিব্যস্তভাবে পিঠের পালক সাফ করিতে থাকে। । পুষ্করিণী নির্জন হইয়া গেলে সেই বটগাছের তলাটা আমার সমস্ত মনকে অধিকার করিয়া লইত। তাহার গুড়ির চারিধারে অনেকগুলা বুরি নামিয়া একটা অন্ধকারময় জটিলতার সৃষ্টি করিয়াছিল। সেই কুহকের মধ্যে, বিশ্বের সেই একটা অস্পষ্ট কোণে যেন ভ্ৰমব্রুমে বিশ্বের নিয়ম ঠেকিয়া গেছে। দৈবাৎ সেখানে যেন স্বপ্নযুগের একটা অসম্ভবের রাজত্ব বিধাতার চােখ এড়াইয়া আজও দিনের আলোর মাঝখানে রহিয়া গিয়াছে। মনের চক্ষে সেখানে যে কাহাদের দেখিতাম এবং তাহদের ক্রিয়াকলাপ যে কী রকম, আজ তাহা স্পষ্ট ভাষায় বলা অসম্ভব। এই বটকেই উদ্দেশ করিয়া একদিন লিখিয়ছিলাম নিশিদিশি দাঁড়িয়ে আছ মাথায় লয়ে জট, ছোটাে ছেলেটি মনোকি পড়ে, ওগো প্রাচীন বট ।” কিন্তু হায়, সে-বট এখন কোথায়! যে পুকুরটি এই বনস্পতির অধিষ্ঠাত্রীদেবতার দর্পণ ছিল তাহাও এখন নাই ; যাহারা স্নান করিত তাহারাও অনেকেই এই অন্তহিঁত বটগাছের ছায়ারই অনুসরণ করিয়াছে। আর, সেই বালক আজ বাড়িয়া উঠিয়া নিজের চারিদিক হইতে নানাপ্রকারের বুরিনামাইয়া দিয়া বিপুল জটিলতার মধ্যে সুদিনদুর্দিনের ছায়ারেন্দ্রপাত গণনা করিতেছে। বাড়ির বাহিরে আমাদের যাওয়া বারণ ছিল, এমনকি, বাড়ির ভিতরেও আমরা সর্বত্র যেমন-খুশি যাওয়া-আসা করিতে পারিতাম না। সেইজন্য বিশ্বপ্রকৃতিকে আড়াল-আবড়াল হইতে দেখিতাম। বাহির বলিয়া একটি অনন্ত-প্রসারিত পদার্থছিল যাহা আমার অতীত, অথচ যাহার রূপ শব্দ গন্ধ দ্বার-জানলার নানা ফাক-ফুকর দিয়া এদিক-ওদিক হইতে আমাকে চকিতে ছুইয়া যাইত। সে যেন গরাদের ব্যবধান দিয়া নানা ইশারায় আমার সঙ্গে খেলা করিবার নানা চেষ্টা করিত। সে ছিল মুক্ত, আমি ছিলাম বদ্ধ-মিলনের উপায় ছিল না, সেইজন্য প্রণয়ের আকর্ষণ ছিল প্রবল। আজ সেই খড়ির গণ্ডি মুছিয়া গেছে, কিন্তু গণ্ডি তুবু ঘোচে নাই। দূর এখনাে দূরে, বাহির এখনাে বাহিরেই। বড়ো হইয়া যে কবিতাটি লিখিয়াছিলাম তাঁহাই মনে Cy খাচার পাখিছিল সোনার খাচাটিতে, বনের পাখিছিল বনে । একদা কী করিয়া মিলন হল দোহে, , কী ছিল বিধাতার মনে । বনের পাখি বলে, “খাচার পাখি, আয়, বনেতে যাই দোহেমিলে ।” খাচার পাখি বলে, “বনের পাখি, আয়, খাচায় থাকি নিরিবিলে ।” ১ দ্র। “পুরোনো বট, শিশু, রচনাবলী ৯ ২ দ্র। দুই পাখি, সোনার তরী, রচনাবলী ৩