পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

औदनष्ठि seo ইস্কুল, আয় অল্প, ইস্কুলের অধ্যক্ষ’ আমাদের একটি সদগুণে মুগ্ধ ছিলেন- আমরা মাসে মাসে নিয়মিত বেতন চুকাইয়া দিতাম। এইজন্য ল্যাটিন ব্যাকরণ আমাদের পক্ষে দুঃসহ হইয়া উঠে নাই এবং পাঠচর্চার। গুরুতর ক্রটিতেও আমাদের পৃষ্ঠদেশ অনাহত ছিল। বোধ করি বিদ্যালয়ের যিনি অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি এ-সম্বন্ধে শিক্ষকদিগকে নিষেধ করিয়া দিয়াছিলেন- আমাদের প্রতি মমতাই তাহার কারণ নহে। এই ইস্কুলে উৎপাত কিছুই ছিল না, তবু হাজার হইলেও ইহা ইস্কুল। ইহার ঘরগুলা নির্মম, ইহার দেয়ালগুলা পাহারাওয়ালার মতে- ইহার মধ্যে বাড়ির ভাব কিছুই নাই, ইহা খোপওয়ালা একটা বড়ো বাক্স । কোথাও কোনো সজা নাই, ছবি নাই, রঙ নাই, ছেলেদের হৃদয়কে আকর্ষণ করিবার লেশমাত্র চেষ্টা নাই। ছেলেদের যে ভালো মন্দ লােগ বলিয়া একটা খুব মন্ত জিনিস আছে, বিদ্যালয় হইতে সে-চিন্তা একেবারে নিঃশেষে নির্বাসিত । সেইজন্য বিদ্যালয়ের দেউড়ি পার হইয়া তাহার সংকীর্ণ আঙিনার মধ্যে পা দিব্যমাত্র তৎক্ষণাৎ সমস্ত মন বিমর্ষ হইয়া যাইত-অতএব, ইস্কুলের সঙ্গে আমার সেই পালাইবার সম্পর্ক ठा धूलि ना | পলায়নের একটি সহায় পাইয়াছিলাম। দাদারা একজনের কাছে ফারসি পড়িতেন- তাহাকে সকলে মুনশি। বলিত- নামটা কী ভুলিয়ছি। লোকটি প্রৌঢ়- অহিচর্মসার। তঁহার কঙ্কালটার্কে যেন একখানা কালো মোমজমা দিয়া মুড়িয়া দেওয়া হইয়াছে; তাহতে রস নাই, চর্বিনাই। ফারসি হয়তো তিনি ভালোই জানিতেন, এবং ইংরেজিও তার চলনসই রকম জানা ছিল, কিন্তু সে-ক্ষেত্রে যশোলাভ করিবার চেষ্টা তাহার কিছুমাত্র ছিল না। র্তাহার বিশ্বাস ছিল, লাঠিখেলীয় তাহার যেমন আশ্চর্য নৈপূণ্য সংগীতবিদ্যায় সেইরূপ অসামান্য পারদর্শিতা। আমাদের উঠানে রৌদ্রে দাঁড়াইয়া তিনি নানা অদ্ভুত ভঙ্গিতে লাঠি খেলতেননিজের ছায়া ছিল তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী , বলা বাহুল্য, তাহার ছায়া কোনোদিন তাহার সঙ্গে জিতিতে পারিত। না- এবং হুহুংকারে তাহার উপরে বাড়ি মারিয়া যখন তিনি জয়গর্বে ঈষৎ হাস্য করতেন তখন স্নান হইয়া র্তাহার পায়ের কাছে নীরবে পড়িয়া থাকিত। তাহার নাকী বেসুরের গান প্রেতলোকের রাগিণীর মতো শুনাইত— তাহা প্ৰলাপে বিলাপে মিশ্রিত একটা বিভীষিকা ছিল। আমাদের গায়ক বিষ্ণু মাঝে মাঝে র্তাহাকে বলিতেন, “মুনশিজি, আপনি আমার রুটি মরিলেন।”- কোনো উত্তর না দিয়া তিনি অত্যন্ত অবজ্ঞা করিয়া হাসিতেন । ইহা হইতে বুঝিতে পরিবেন, মুনশিকে খুশি করা শক্ত ছিল না। আমরা তঁহাকে ধরিলেই, তিনি আমাদের ছুটির প্রয়োজন জানাইয়াইস্কুলের অধ্যাক্ষের নিকট পত্র লিখিয়া দিতেন। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এরূপ পত্র লইয়া অধিক বিচারবিতর্ক করিতেন না- কারণ, তাহার নিশ্চয় জানা ছিল যে আমরা ইস্কুলে যাইবা না যাই, তাহাতে বিদ্যাশিক্ষা সম্বন্ধে আমাদের কিছুমাত্র ইতারবিশেষ ঘটবে না। এখন, আমার নিজের একটি স্কুল” আছে এবং সেখানে ছাত্রেরা নানাপ্রকার অপরাধ করিয়া থাকেকারণ, অপরাধ করা ছাত্রদের এবং ক্ষমা না করা শিক্ষকদের ধর্ম। যদি আমাদের কেহ তাহদের ব্যবহারে ক্রুদ্ধ ও ভীত হইয়া বিদ্যালয়ের অমঙ্গল আশঙ্কায় অসহিষ্ণু হন ও তাহাদিগকে সদ্যই কঠিন শক্তি দিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠেন, তখন আমার নিজের ছাত্র-অবস্থার সমস্ত পাপ সারি সারি দাঁড়াইয়া আমার মুখের দিকে । তাকাইয়া হাসিতে থাকে । , আমি বেশ বুঝিতে পারি, ছেলেদের অপরাধকে আমরা বড়োদের মাপকাঠিতে মপিয়া থাকি, ভুলিয়া যাই যে ছোটাে ছেলেরা নির্বােরর মতো বেগে চলে- সে জলে দোষ যদি স্পর্শ করে তবে হতাশ হইবার কারণ নাই, কেননা সচলতার মধ্যে সকল দোষের সহজ প্রতিকার আছে, বেগ যেখানে থামিয়াছে সেইখনেই বিপদ- সেইখনেই সাবধান হওয়া চাই। এইজন্য শিক্ষকদের অপরাধকে যত ভয় করিতে হয় ছাত্রদের তত FCR || ১ ডিকরজি সাহেব ২ দ্র। মুনশী, গল্পসল্প ৩ শক্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম। ১৯০১ খ্রীস্টাব্দে স্থাপিত