পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छौदनन्यूठि 88: চাটুর্জের হাতে দিলে তিনি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারিতেন। কিন্তু আমার উপর বিশেষ ভার দেওয়াই তাহার উদেশ্য ছিল। ডাকবাংলায় পেঁহিয়া একদিন বাক্সটি তাহার হাতে না দিয়া ঘরের টেবিলের উপর রাখিয়া দিয়াছিলাম, ইহাতে তিনি আমাকে ভৎসনা করিয়ছিলেন। ডাকবাংলায় পৌঁছিলে পিতৃদেব বাংলার বহিরে টােকি লইয়া বসিতেন। সন্ধ্যা হইয়া আসিলে পর্বতের স্বচ্ছ আকাশে তারাগুলি আশ্চর্য সুস্পষ্ট হইয়া উঠিত এবং পিতা আমাকে গ্ৰহতারকা চিনাইয়া দিয়া জ্যোতিষ্ক সম্বন্ধে আলোচনা করিতেন। বক্রেটায় আমাদের বাসা একটি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিল। যদিও তখন বৈশাখ মাস, কিন্তু শীত অত্যন্ত প্রবল। এমনকি, পথের যে-অংশে রৌদ্র পড়িত না সেখানে তখনো বরফ গলে নাই । এখানেও কোনো বিপদ আশঙ্কা করিয়া আপন ইচ্ছায় পাহাড়ে ভ্ৰমণ করিতে পিতা একদিনও আমাকে বাধা দেন নাই । ] আমাদের বাসার নিম্নবর্তী এক অধিত্যকায় বিস্তীর্ণ কেলুবন ছিল। সেই বনে আমি একলা আমার লৌহফলকবিশিষ্ট লাঠি লইয়া প্ৰায় বেড়াইতে যাইতাম । বনস্পতিগুলা প্ৰকাণ্ড দৈত্যের মতো মন্ত মস্ত ছায়া লইয়া দাড়াইয়া আছে; তাহদের কত শত বৎসরের বিপুল প্ৰাণ ! কিন্তু এই সেদিনকার অতি ক্ষুদ্র একটি মানুষের শিশু অসংকোচে তাহাদের গা ঘেঁবিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, তাহারা একটি কথাও বলিতে পারে না ! বনের ছায়ার মধ্যে প্রবেশ করিবামােত্রই যেন তাহার একটা বিশেষ স্পর্শ পাইতাম। যেন সরীসৃপের গাত্রের মতো একটি ঘন শীতলতা, এবং বনতলের শুষ্ক পত্ররাশির উপরে ছায়া-আলোকের পর্যায় যেন প্ৰকাণ্ড একটা আদিম সরীসৃপের গাত্রের বিচিত্র রেখাবলী। আমার শোবার ঘর ছিল একটা প্ৰান্তের ঘর। রাত্রে বিছানায় শুইয়া কাচের জানালার ভিতর দিয়া নক্ষত্ৰলোকের অস্পষ্টতায় পর্বতচূড়ার পাণ্ডুরবর্ণ তুষারদীপ্তি দেখিতে পাইতাম। এক-একদিন, জানি না কতরাত্রে, দেখিতাম, পিতা গায়ে একখানি লাল শাল পরিয়া হতে একটি মোমবাতির সেজ লইয়া নিঃশব্দসঞ্চারণে চলিয়াছেন। কাচের আবরণে ঘেরা বাহিরের বারান্দায় বসিয়া উপাসনা করিতে যাইতেছেন। তাহার পর আর-এক ঘুমের পরে হঠাৎ দেখিতাম, পিতা আমাকে ঠেলিয়া জাগাইয়া দিতেছেন। তখনো রাত্রির অন্ধকার সম্পূর্ণ দূর হয় নাই। উপক্ৰমণিকা হইতে নরঃ নরেী নারাঃ মুখস্থ করিবার জন্য আমার সেই সময় নির্দিষ্ট ছিল। শীতের কম্বলরাশির তপ্ত বেষ্টন হইতে বড়ো দুঃখের এই উদবোধন। সূর্যোদয়কালে যখন পিতৃদেব তাহার প্রভাতের উপাসনা-অন্তে একবাটি দুধ খাওয়া শেষ করিতেন, তখন আমাকে পাশে লইয়া দাড়াইয়া উপনিষদের মন্ত্রপাঠ দ্বারা আর-একবার উপাসনা করিতেন। তাহার পরে আমাকে লইয়া বেড়াইতে বাহির হইতেন। তঁহার সঙ্গে বেড়াইতে আমি পারিব কেন । অনেক বয়স্ক লোকেরও সে সাধ্য ছিল না। আমি পথিমধ্যেই কোনো একটা জায়গায় ভঙ্গ দিয়া পায়ে-চলা পথ বাহিয়া উঠিয়া আমাদের বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইতাম । পিতা ফিরিয়া আসিলে ঘণ্টাখানেক ইংরেজি পড়া চলিত। তাহার পর দশটার সময় বরফগলা ঠাণ্ডাজলে । স্নান । ইহা হইতে কোনোমতেই অব্যাহতি ছিল না ; তঁহর আদেশের বিরুদ্ধে ঘড়ায় গরমজল মিশাইতেও তৃত্যেরা কেহ সাহস করিত না। যৌবনকালে তিনি নিজে কিরূপ দুঃসাহসীতল জলে স্নান করিয়াছেন, আমাকে উৎসাহ দিবার জন্য সেই গল্প করিতেন । দুধ খাওয়া আমার আর-এক তপস্যা ছিল। আমার পিতা প্রচুর পরিমাণে দুধ খাইতেন। আমি এই পৈতৃক দুগ্ধপানশক্তির অধিকারী হইতে পরিতাম কি না নিশ্চয় বলা যায় না। কিন্তু পূর্বেই জানাইয়াছি কী কারণে আমার পানাহারের অভ্যাস সম্পূর্ণ উলটাদিকে চলিয়াছিল। তঁহার সঙ্গে বরাবর আমাকে দুধ খাইতে ইত। ভৃত্যদের শরণাপন্ন হইলাম। তাহারা আমার প্রতি দয়া করিয়া বা নিজের প্রতি মমতাবশত বাটিতে বুধের অপেক্ষা ফেনার পরিমাণ বেশি করিয়া দিত। ১ কিশোরীনাথ চট্টোপাধ্যায়, দেবেন্দ্রনাথের অনুচর SDDuB DBDB BB DBLB BDD DBDBD DD BDBDLLS iTi S