পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

औदनठि 8) বিলাত এইরূপে আমেদাবাদে ও বোম্বাইয়ে মাস ছয়েক কাটাইয়া আমরা বিলাতে যাত্রা করিলাম।” অশুভক্ষণে বিলাতযাত্রার পত্র প্রথমে আখীয়দিগকে ও পরে ভারতীতে পাঠাইতে আরম্ভ করিয়ছিলাম। এখন আর এগুলিকে বিলুপ্ত করা আমার সায্যের মধ্যে নাই। এই চিঠিগুলির অধিকাংশই বাল্যবয়সের বাহাদুরি। অশ্রদ্ধা প্রকাশ করিয়া, আঘাত করিয়া, তর্ক করিয়া রচনার আতশবাজি করিবার এই প্ৰয়াস। শ্ৰদ্ধা করিবার, গ্রহণ করিবার, প্রবেশ লাভ করিবার শক্তিই যে সকলের চেয়ে মহৎশক্তি এবং বিনয়ের দ্বারাই যে সকলের চেয়ে বড়ো করিয়া অধিকার বিস্তার করা যায়- কাচাবয়সে এ কথা মন বুঝিতে চায় না। ভালোলাগা, প্রশংসা করা, যেন একটা পরাভব- সে যেন দুর্বলতা- এইজন্য কেবলই খোচা দিয়া আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করিবার এই চেষ্টা আমার কাছে আজ হাস্যকর হইতে পারিত যদি ইহার ঔদ্ধত্য ও অন্সরলতা আমার কাছে কষ্টকর না হইত । ছেলেবেলা হইতে বাহিরের পৃথিবীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ছিল না বলিলেই হয়। এমন সময় হঠাৎ সতেরোবছর বয়সে বিলাতের জনসমুদ্রের মধ্যে ভাসিয়া পড়িলে খুব একচেটি হাবুডুবু খাইবার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু আমার মেজেবিউঠাকরুন তখন ছেলেদের লইয়া ব্ৰাইটনে” বাস করিতেছিলেন- তাহার আশ্রয়ে গিয়া বিদেশের প্রথম ধাক্কাটা আর গায়ে লাগিল না । তখন শীত আসিয়া পড়িয়ছে। একদিন রাত্রে ঘরে বসিয়া আগুনের ধারে গল্প করিতেছি, ছেলেরা উত্তেজিত হইয়া আসিয়া কহিল, বরফ পড়িতেছে।” বাহিরে গিয়া দেখিলাম, কনকনে শীত, আকাশে শুভ্র জ্যোৎস্না এবং পৃথিবী সাদা বরফে ঢাকিয়া গিয়াছে। চিরদিন পৃথিবীর যে-মূর্তি দেখিয়ছি। এ সে-মূর্তিই নয়- এ যেন একটা স্বপ্ন, যেন আর কিছু- সমস্ত কাছের জিনিস যেন দূরে গিয়া পড়িয়ছে, শুভ্রকায় নিশ্চল তপস্বী যেন গভীর ধ্যানের আবরণে আবৃত। অকস্মাৎ ঘরের বাহির হইয়াই এমন আশ্চৰ্য বিরাট সৌন্দৰ্য আর-কখনো দেখি নাই । বউঠাকুরানীর যত্নে এবং ছেলেদের বিচিত্র উৎপাত উপদ্রবের আনন্দে দিন বেশ কাটিতে লাগিল। ছেলেরা আমার অদ্ভুত ইংরেজি উচ্চারণে ভারি আমোদ বােধ করিল। তাঁহাদের আর সকলরকম খেলায় আমার কোনো বাধা ছিল না, কেবল তাঁহাদের এই আমোদটাতে আমি সম্পূর্ণমনে যোগ দিতে পারিতাম না। Warm শব্দে a-র উচ্চারণ o-র মতো এবং worm শব্দে o-র উচ্চারণ a-র মতে- এটা যে কোনোমতেই সহজজ্ঞানে জানিবার বিষয় নহে, সেটা আমি শিশুদিগকে বুঝাইব কী করিয়া । মন্দভাগ্য আমি, তাহদের হাসিটা আমার উপর দিয়াই গেল, কিন্তু হাসিটা সম্পূর্ণ পাওনা ছিল ইংরেজি উচ্চারণবিধির। এই দুটি ছোটাে ছেলের মন ভোলাইবার, তাহাদিগকে হাসাইবার, আমোদ দিবার নানাপ্রকার উপায় আমি প্রতিদিন উদভাবন । করিতাম। ছেলে ভোলাইবার সেই উদভাবনী শক্তি খাটাইবার প্রয়োজন তাহার পরে আরো অনেকবার ঘটয়াছে- এখনো সে-প্রয়োজন যায় নাই। কিন্তু সে শক্তির আর সে অজস্র প্রাচুর্য অনুভব করি না। শিশুদের কাছে হৃদয়কে দান করিবার অবকাশ সেই আমার জীবনে প্রথম ঘটিয়াছিল- দানের আয়োজন তাই এমন বিচিত্ৰভাবে পূর্ণ হইয়া প্ৰকাশ পাইয়াছিল। কিন্তু সমুদ্রের এপারের ঘর হইতে বাহির হইয়া সমুদ্রের ওপরের ঘরে প্রবেশ করিবার জন্য তো আমি যাত্রা করি নাই। কথা ছিল, পড়াশুনা করিব, ব্যারিস্টর হইয়া দেশে ফিরিব । তাই একদিন ব্রাইটনে একটি ১, ২০ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৮, ‘পুনা স্টিমারে যাত্রা। মী য়ুরোপ-প্ৰবাসীর পত্র, প্রথম- রবীন্দ্র-রচনাবলী ১ ২। ঐ যুরোপ-যাত্রী কোন বদীয় যুবকের পত্র, ভারতী, বৈশাখ-পীেৰ, ফাল্গুন, ১২৮৬ বৈশাখ শ্ৰাবণ ১২৮৭৷৷ যুরোপ-প্রবাসীর পত্র, রবীন্দ্র-রচনাবলী ১ : 9 Brighton, Sussex | ZZ GRIM"-erro PR, vö 8 ঐ বরফ পড়া বালক, অধিন ১২৯২

  • Gar e A