পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

હર્ષ রবীন্দ্র-রচনাবলী লিতেছে তাহারই প্রথম অংশ এই কন্যাটি আজ লাভ করিল। এই অন্ন সমস্ত সমাজে মিলিয়া প্রস্তুত করিয়াছো-ক কোন দেশে কোন চাবা রৌদ্রবৃটিমাথায় করিয়াচাৰ করিয়াছে, কোনবাহক ইহা বহন করিয়াছে, কোন মহাজন ইহাকে হাট আনিয়ছে, কোন ক্রেতা ইহা জয় করিয়াছে, কোন পঢ়ক ইহা রন্ধন করিয়ছে। তারে এই কন্যার মুখে ইহা উঠিল। এই মেয়েটি আজ মানবসমাজে প্রথম আতিথ্য লইতে আসিয়াছে, এইজন্য সমােজ আপনার অন্ন ইহার মুখে তুলিয়া দিয়া অতিথিসৎকার করিল। এই অল্পটি ইহার মুখে তুলিয়া দেওয়ার মধ্যে মন্ত একটি কথা আছে। মানুষ ইহার দ্বারাই জানাইল আমার যাহা কিছু আছে তাহাতে তোমার অংশ আমি স্বীকার করিলাম। আমার জ্ঞানীরা যাহা জানিয়াছেন। তুমি তাহা জানিবে, আমার মহাপুরুষেরা যে তপস্যা করিয়াছেন তুমি তাহার ফল পাইবে, আমার বীরেরা যে জীবন দিয়াছেন তাঁহাতে তোমার জীবন পূর্ণ হইয়া উঠিবে, আমার কর্মীরা যে পথ নির্মাণ করিয়াছেন তাহাতে তোমার জীবনযাত্র অব্যাহত হইবে। এই শিশু কিছুই না জানিয়া আজ একটি মহৎ অধিকার লাভ করিল- আদ্যকার এই শুভদিনটি তাহার সমস্ত জীবনে চিরদিন সার্থক হইয়া উঠিতে থােক। অদ্য আমরা ইহাই অনুভব করিতেছি মানুষের জন্মক্ষেত্র কেবল একটিমাত্র নহে, তাহা কেবল প্রকৃতির ক্ষেত্ৰ নহে, তাহা মঙ্গলের ক্ষেত্র । তাহা কেবল জীবলোক নহে। তাহা স্নেহলোক, তাহা আনন্দলোক । প্রকৃতির ক্ষেত্রটিকে চােখে দেখিতে পাই, তাহা জলেস্থলে ফলেফুলে সর্বত্রই প্রত্যক্ষ- অথচ তাঁহাই মানুষের সর্বাপেক্ষা সত্য আশ্রয় নহে। যে জ্ঞান, যে প্রেম, যে কল্যাণ অদৃশ্য হইয়া আপনার বিপুল সৃষ্টিকে বিস্তার করিয়া চলিয়ছে- সেই জ্ঞানপ্রেম-কল্যাণের চিন্ময় আনন্দময় জগৎই মানুষের যথার্থ জগৎ । এই জগতের মধ্যেই মানুষ যথার্থ জন্মলাভ করে বলিয়াই সে একটি আশ্চৰ্য সত্তাকে আপনার পিতা বলিয়া অনুভব করিয়াছে, যে সত্তা অনির্বাচনীয়। এমন একটি সত্যকেই পরম সত্য বলিয়াছে যাহাকে চিন্তা করিতে গিয়া মন ফিরিয়া আসে। এইজন্যই এই শিশুর জন্মদিনে মানুষ জলস্থলঅগ্নিবায়ুর কাছে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করে নাই, জলস্থলঅগ্নিবায়ুর অন্তরে শক্তিরূপে বিনি অদৃশ্য বিরাজমান, তঁহকেই প্ৰণাম করিয়াছে। সেইজন্যই আজ এই শিশুর নামকরণের দিনে মানুষ মানবসমাজকে অর্ঘ্য সাজাইয়া পূজা করে নাই। কিন্তু যিনি মানবসমাজের অন্তরে শ্ৰীতিরূপে কল্যাণরূপে অধিষ্ঠিত তাহারই আশীৰ্বাদ সে প্রার্থনা করিতেছে। বড়ে আশ্চর্য মানুষের এই উপলব্ধি, এই পূজা, বড়ো আশ্চর্য মানুষের এই অধ্যাত্মলোকে জন্ম, বড়ো আশ্চর্য মানুষের এই দৃশ্য জগতের অন্তর্বর্তী অদৃশ্য নিকেতন। মানুষের ক্ষুধাতৃষ্ণা আশ্চর্য নহে, মানুষের ধনমন লইয়া কড়াকড়ি আশ্চর্য নহে, কিন্তু বড়ো আশ্চৰ্য- জন্ম হইতে মৃত্যু পৰ্যন্ত জীবনের পর্বে পর্বে মানুষের সেই অদৃশ্যকে পূজ্য বলিয়া প্ৰণাম, সেই অনন্তকে আপনি বলিয়া আহ্বান। অদ্য এই শিশুটিকে নাম দিবার বেলায় মানুষ সকল নােমরূপের আধার ও সকল নােমরূপের অতীতকে আপনার এই নিতান্ত ঘরের কাণ্ডে এমন করিয়া আমন্ত্ৰণ করিতে ভরসা পাইল ইহাতেই মানুষ সমস্ত জীবসমাজের মধ্যে কৃতকৃতাৰ্থ হইলধন্য হইল। এই কন্যাটি, এবং ধন্য হইলাম আমরা। SOSY সংসারের ব্যবহারে প্রতিদিন আমরা ছোটাে ছোটাে সীমার মধ্যে আপনাকে রুদ্ধ করিয়া থাকি। এমন অবস্থা মানুষ স্বার্থপরভাবে কাজ করে, গ্ৰাম্যভাবে চিন্তা করে, ও সংকীর্ণ সংস্কারের অনুসরণ করিয়া অত্য অনুদারভাবে নিজের রাগৱেষকে প্রচার করে। এইজনাই দিনের মধ্যে অন্তত একবার করিয়াও নিজে অসীমের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দেখিবার উপদেশ আছে। অন্তত একবার করিয়াও এ কথা বুঝিতে হই যে কোনো ভৌগোলিক ভূমিখণ্ডেই আমার চিরকালের দেশ নহে, সমস্ত ভূর্ক্সবঃ স্বঃ আমার বিরাট আশ্রয় অন্তত একবার করিয়াও অন্তরের মধ্যে এই কথাটিকে ধ্যান করিয়া লইতে হইবে যে, আমার ধীশক্তি আম