পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Eeo झशैक्ष-ब्रा5नादी ধর্ম ও সামাজিক ইতিহাসের নানা শাখা-প্ৰশাখায় উজানবাহিয়া মানুষের সন্ধান অবশেষে এক দূর গঙ্গোত্রীতে এক মূল প্রস্রবণের কাছে উপনীত হইতে লাগিল। এইরূপে জড়ে জীবে সর্বত্রই একের সঙ্গে আরের যোগ এমনি সুদূরবিস্তৃত এমনি বিচিত্র করিয়া প্রত্যহ প্রকাশ হইতেছে ; যেখানেই সেই যোগের সীমা আমরা স্থাপন করিতেছি। সেইখানেই সেই সীমা এমন করিয়া লুপ্ত হইয়া যাইতেছে যে, মানুষের সকল জ্ঞানকেই আজ পরস্পর তুলনার দ্বারা তীেল করিয়া দেখিবার উদযোগ প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। দেহগঠনের তুলনা, ভাষার তুলনা, সমাজের তুলনা, ধর্মের তুলনাসমস্তই তুলনা। সত্যের বিচারসভায় আজ জগৎ জুড়িয়া সাক্ষীর তলাব পড়িয়ছে ; আজ একের সংবাদ আরের মুখে না পাইলে প্রমাণ সংশয়াপন্ন হইতেছে ; নিজের পক্ষের কথা একমাত্র যে নিজের জবানিতেই বলে, যে বলে আমার শাস্ত্ৰ আমার মধ্যেই, আমার তত্ত্ব আমাতেই পরিসমাপ্ত, আমি আর কারও ধার ধারি না- তৎক্ষণাৎ তাহাকে অবিশ্বাস করিতে কেহ মুহূর্তকাল দ্বিধা করে না। : তবেই দেখা যাইতেছে মানুষ যেদিকটাতে অতি দীর্ঘকাল বাধা ছিল আজ যেন একেবারে তাহার বিপরীত দিকে আসিয়া পড়িয়ছে। এতদিন সে নিশ্চয় জানিত যে, সে ধাচার পাখি, আজ জানিতে পারিয়াছে সে আকাশের পাখি । এতকাল তাহার চিন্তা, ভাব ও জীবনযাত্রার সমস্ত ব্যবস্থাই ঐ খাচার লীেহশালাকাগুলার প্রতি লক্ষ করিয়াই রচিত হইয়াছিল। আজ তাহা লইয়া আর কাজ চলে না। সেই আগেকার মতো ভাবিতে গেলে সেই রকম করিয়া কাজ করিতে বসিলে সে আর সামঞ্জস্য খুঁজিয়া পায় না। অথচ অনেক দিনের অভ্যাস অস্থিমজ্জায়গাথা হইয়া রহিয়াছে। সেইজন্যই মানুষের মনকে ও ব্যবহারকে আজ বহুতর অসংগতি অত্যন্ত পীড়া দিতেছে। পুরাতনের আসরাবগুলা আজ তাহার পক্ষে বিষম বোঝা হইয়া উঠিয়াছে, অথচ এত দিন তাহাকে এত মূল্য দিয়া আসিয়াছে যে তাঁহাকে ফেলিতে মনসারিতেছে না ; সেগুলা যে অনাবশ্যক নহে, তাহারা যে চিরকালই সমান মূল্যবান এই কথাই প্রাণপণে নানাপ্রকার সুযুক্তি ও কুযুক্তির দ্বারা সে প্রমাণ যতদিন খাচায় ছিল ততদিন সে দৃঢ়রপেই জানিত তাহার বাসা চিরকালের জন্যই কোনাে এক বুদ্ধিমান পুরুষ বহুকাল হইল বাধিয়া দিয়াছে; আর কোনোপ্রকার বাসা একেবারে হইতে পারে না, নিজের শক্তিতে তো নহেই- সে জনিত তাহার প্রতি দিনের খাদ্য-পানীয় কোনাে একজন বুদ্ধিমান পুরুষ চিরকালের জন্য বরাদ্দ করিয়া দিয়াছে, অন্য আর কোনােপ্রকার খাদ্য সম্ভবপরই নহে, বিশেষত নিজের চেষ্টীয় স্বাধীনভাবে অন্নপানের সন্ধানের মতো নিষিদ্ধ তাহার পক্ষে আর কিছুই নাই। এই নির্দিষ্ট খাচার মধ্য দিয়া যেটুকু আকাশ দেখা যাইতেছে তাহার বাহিরেও যে বিধাতার সৃষ্টি আছে। এ কথা একেবারেই আশ্রদ্ধেয় এবং সীমাকে লঙ্ঘন করার চেষ্টমাত্রই গুরুতর অপরাধ । আধুনিক পৃথিবীতে সেই পুরাতন ধর্মের সহিত নূতন বােধের বিরোধ খুবই প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। সে এমন একটি ধর্মকে চাহিতেছে যাহা কোনাে একটি বিশেষ জাতির বিশেষ কালের বিশেষ ধর্ম নহে; যাহাকে কতকগুলি বাহ্য পূজাপদ্ধতির দ্বারা বিশেষ রূপের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া ফেলা হয় নাই ; মানুষের চিত্ত যতদূরই প্রসারিত হউক, যে ধর্ম কোনাে দিকেই তাহাকে বাধা দিবে না, বরঞ্চ সকল দিকেই তাহাকে মহানের দিকে অগ্রসর হইতে আহবান করবে। মানুষের জ্ঞান আজ যে মুক্তির ক্ষেত্রে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে সেইখানকার উপযোগী হৃদয়বোধকে এবং ধর্মকে না পাইলে তাহার জীবনসংগীতের সুর মিলিবে না, এবং আজ মানুষের জ্ঞানের সম্মুখে সমস্ত কাল জুড়িয়া, সমন্ত আকাশ জুড়িয়া একটি চিরধাবমান মহাযাত্রার কোনো জায়গাতেই স্থির হইয়া ঘুমাইয়া পড়ে নাই, এক মুহূর্ত তাহার বিরাম নাই, অপরিস্ফুটিত হইতে পরিস্ফুটিতার অভিমুখে কেবলই সে আপনার অগণ্য পাপড়িকে একটি একটি করিয়া খুলিয়া দিকে দিকে প্রসারিত করিয়া দিতেছে। এই পরমাশ্চৰ্যনিত্যবহমান প্রকাশব্যাপারে মানুষ যে কবে বাহির হইল তাহা কে জানে- সে যে কোন বাষ্পসমূদ্র পার হইয়া কোন প্রাণুগ্রহস্যের উপকূলে আসিয়া উত্তীর্ণ হইল তাহার ঠিকানা নাই। যুগে যুগোিবন্দরে বন্দরে তাহার তরী লাগিয়াছিল, সে কেবলই আপনার পণ্যের মূল্য বাড়াইয়