পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQy রবীন্দ্র-রচনাবলী BDuB BB BDB DDB BDB S DDDD DDS DDD DDD BiDB DBDBDB BDB BDS প্রেরণা। যে কৰ্ম আমার স্বাভাবিক সেই কর্মেই আমি আপনার সত্য পরিচয় দিই। : কিন্তু এখানে আমরা যথেষ্ট ভুল করিয়া থাকি। এই ঠিক আপনটিকে পাওয়া যে কাহাকে বলে তাহা বুঝা শক্ত। যখন মনে করিতেছি। অমুক কাজটা আমি আপনি করিতেছি অন্তর্যামী দেখিতেছেন তাহা অন্যের নকল করিয়া করিতেছি- কিংবা কোনাে বাহিরের বিষয়ের প্রবল আকর্ষণ একক্টোকা প্রবৃত্তির জোরে করিতেছি। এই যে বাহিরের টানে প্রবৃত্তির জোরে কাজ করাইহাও মানুষের সত্যতম স্বভাবনহে । বস্তুত ইহা জড়ের ধর্ম। যেমন নীচের টানে পাথর আপনাকে ধরিয়া রাখিতে পারে না, সে প্রবল বেগে গড়াইয়া পড়ে ইহাও সেইরূপ। এই জড়ধর্মকে খাটাইয়া প্রকৃতি আপনার কাজ চালাইয়া লইতেছে। এই জড়ধর্মের জোরে অগ্নি জ্বলিতেছে, সূর্য তাপ দিতেছে, বায়ু বহিতেছে, কোথাও তাহার। আর নিকৃতি নাই। ইহা শাসনের কাজ । ভয়দিন্দ্ৰশ্চ বায়ুশ্চ মৃত্যুৰ্ধাবতি পঞ্চমঃ। অগ্নিকে জ্বলিতেই হইবে, মেঘকে বর্ষণ করিতেই হইবে, বায়ুকে বহিতেই হইবে এবং মৃত্যুকে পৃথিবীসুদ্ধ লোকে মিলিয়া গালি দিলেও তাহার কাজ তাহকে শেষ করিতেই হইবে। মানুষের প্রবৃত্তির মধ্যে এইরূপ জড়ধর্ম আছে। মানুষকে সে কানে ধরিয়া কাজ করাইয়া লয়। মানুষকে প্রকৃতি এইখানে তাহার অন্যান্য জড়বস্তুর শামিল করিয়া লইয়া জোর করিয়া আপন প্রয়ােজন আদায় করিয়া থাকে । কিন্তু মানুষ যদি সম্পূর্ণই জড় হইত। তাহা হইলে কোথাও তাহার বাধিত না, সে পাথরের মতো অগত্যা গড়াইত, জলের মতো অগত্যা বহিয়া যাইত— এ সম্বন্ধে কোনো নালিশটিও করিত না। মানুষ কিন্তু নালিশ করে। প্রবৃত্তি যে তাঁহাকে কনে ধরিয়া সংসারক্ষেত্রে খাটাইয়া লয় ইহার বিরুদ্ধে তাহার আপত্তি আজও থামিল না । সে আজও কঁদিতেছে তারা, কোন অপরাধে দীর্ঘ মেয়াদে সংসার-গারদে থাকি বল! ) সে ভিতরে ভিতরে এই কথাটা অনুভব করিতেছে যে, আমি যে কাজ করিতেছি। সে গারদের মধ্যে কয়েদির কাজ- প্রবৃত্তিপেয়াদার তাড়নায় খাটিয়া মরিতেছি। কিন্তু সে ভিতরে জানে এমন করিয়া অভাবের তাড়নায় প্রবৃত্তির প্রেরণায় কাজ করাই তাহার চরম ধর্ম নহে। তাহার মধ্যে এমন কিছু একটা আছে যাহা মুক্ত, যাহা আপনার আনন্দেই আপনাতে পর্যাপ্ত, দেশকলের দ্বারা যাহার পরিমাপ হয় না, জরামৃত্যুর দ্বারা যাহা অভিভূত হয় না। আপনার সেই সত্য পরিচয় সেই নিত্য পরিচয়টি লাভ করিবার জন্যই তাহার চরম বেদনা। পূর্বেই আমি বলিয়ছি, কবি আপন কবিত্বশক্তির মধ্যে, কমী আপন কর্মশক্তির মধ্যে সমস্তের মূলগত আপনাকে লাভ করিতে চেষ্টা করিতেছে। সেই ভিতরকার। আপনাকে যতই সে লাভ করে ততই কবির কাব্য অমর হইয়া উঠে ; সে তখন বহিরের অক্ষরগনা কাব্য হয় না ; ততই কর্মীয় কর্ম অমর হইয়া উঠে, সে তখন যন্ত্রচালিতবৎ কর্ম হয় না। কারণ প্রত্যেকের এই আপন পদার্থটি আনন্দময়- এইখানেই স্বত-উৎসারিত যাহা-কিছু পরবশ তাহাইদুখ যাহা-কিছু আত্মবিশ তাহাই সুখ।