পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ዓo রবীন্দ্র-রচনাবলী যখন আমরা পাহাড় পর্বত সূৰ্য চন্দ্ৰ দেখি তখন আমাদের সহজেই মনে হয় বাইরে যা আছে আমরা তাই দেখছি। যেন আমার মন আয়নামাত্র। কিন্তু আমার মন আয়না নয়, তা সৃষ্টির প্রধান উপকরণ। আমি যে মুহূর্তে দেখছি সেই মুহুর্তে সেই দেখার যোগে সৃষ্টি হচ্ছে। যতগুলি মন ততগুলি সৃষ্টি। অন্য কোনো অবস্থায় মনের প্রকৃতি যদি অন্য রকম হয় তবে সৃষ্টিও অন্য রকম হবে। আমার মন ইন্দ্ৰিয়যোগে ঘন দেশের জিনিসকে একরকম দেখে, ব্যাপক দেশের জিনিসকে অন্যরকম দেখে, দ্রুতকালের গতিতে একরকম দেখে, মন্দকালের গতিতে অন্যরকম দেখে- এই প্রভেদ অনুসারে সৃষ্টির বিচিত্ৰতা । আকাশে লক্ষকোটি ক্রোশ পরিমাণ দেশকে যখন সে এক হাত আধ হাতের মধ্যে দেখে তখন দেখে তারাগুলি কাছাকাছি এবং স্থির। আমার মন কেবল যে আকাশের তারাগুলিকে দেখছে তা নয়, লোহার পরমাণুকে নিবিড় এবং স্থির দেখছে- যদি লোহাকে সে ব্যাপ্ত আকাশে দেখত তা হলে দেখত তার পরমাণুগুলি স্বতন্ত্র হয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই বিচিত্র দেশকালের ভিতর দিয়ে দেখাই হচ্ছে সৃষ্টির লীলা দেখা | সেইজন্যেই লোহা হচ্ছে লোহা, জল হচ্ছে জল, মেঘ হচ্ছে মেঘ | কিন্তু বিজ্ঞান ঘড়ির কাটার কাল এবং গজকাঠির মাপ দিয়ে সমস্তকে দেখতে চায়। দেশকালের এক আদর্শ দিয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে সে বিচার করে। কিন্তু এই এক আদর্শ সৃষ্টির আদৰ্শই নয়। সুতরাং বিজ্ঞান সৃষ্টিকে বিশ্লিষ্ট করে ফেলে। অবশেষে অণু-পরমাণুর ভিতর দিয়ে এমন একটা জায়গায় গিয়ে পীেছােয় যেখানে সৃষ্টিই নেই। কারণ সৃষ্টি তো অণু-পরমাণু নয়- দেশকালের বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে আমাদের মন যা দেখছে তাই সৃষ্টি। ঈথর পদার্থের কম্পনমাত্র সৃষ্টি নয়, আলোকের অনুভূতিই সৃষ্টি। আমার বােধকে বাদ দিয়ে যুক্তি-দ্বারা যা দেখছি তাই প্ৰলয়, আর বােধের দ্বারা যা দেখছি তাই সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক বন্ধু তাড়া করে এলেন বলে। তিনি বলবেন, বিজ্ঞান থেকে আমরা বহুকষ্ট বােধকে খেদিয়ে রাখি- কারণ আমার বোধ এক কথা বলে, তোমার বোধ আর-এক কথা বলে । আমার বোধ এখন এক কথা বলে, তখন আর-এক কথা বলে। ኣ আমি বলি, ঐ তো হল সৃষ্টিতত্ত্ব। সৃষ্টি তো কলের সৃষ্টি নয়, সে যে মনের সৃষ্টি। মনকে বাদ দিয়ে সৃষ্টিতত্ত্ব আলোচনা, আর রামকে বাদ দিয়ে রামায়ণ গান একই কথা। বৈজ্ঞানিক বলবেন- এক-এক মন এক-এক রকমের সৃষ্টি যদি করে বসে তা হলে সেটা যে অনাসৃষ্টি হয়ে দাড়ায় । আমি বলি, তা তো হয় নি। হাজার লক্ষ মনের যোগে হাজার লক্ষ সৃষ্টি কিন্তু তবুও তো দেখি সেই বৈচিত্র্যসত্ত্বেও তাদের পরস্পরের যোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। তাই তো তোমার কথা আমি বুঝি, আমার কথা তুমি বোকা । তার কারণ হচ্ছে, আমার একটুকরো মন যদি বস্তুত কেবল আমারই হত তা হলে মনের সঙ্গে মনের কোনো যোগই থাকত না । মন পদার্থটা জগদব্যাপী। আমার মধ্যে সেটা বন্ধ হয়েছে বলেই যে সেটা খণ্ডিত তা নয়। সেইজন্যেই সকল মনের ভিতর দিয়েই একটা ঐক্যতত্ত্ব আছে। তা না হলে মানুষের সমাজ গড়ত না, মানুষের ইতিহাসের কোনো অর্থ থাকত না। বৈজ্ঞানিক জিজ্ঞাসা করছেন, এই মন পদার্থটা কী শুনি । আমি উত্তর করি যে, তোমার ঈথর-পদার্থের চেয়ে কম আশ্চর্য এবং অনির্বাচনীয় নয়। অসীম যেখানে সীমাকে গ্ৰহণ করেছেন সেইটো হল মনের দিক। সেই দিকেই দেশকাল ; সেই দিকেই রূপরসগন্ধ ; সেই एिकई दश्। (नई निष्क३ ॐान थकाश। বৈজ্ঞানিক বলেন, অসীমের সীমা এসব কথা কবি যখন আলোচনা করেন তখন কি কবিরাজ ডাকা আবশ্যক হয় না ? আমার উত্তর এই যে, এ আলোচনা নতুন নয়। পুরাতন নজির আছে। খ্যাপার বংশ সনাতনকাল থেকে চলে আসছে। তাই পুরাতন ঋষি বলছেন অন্ধং তমঃপ্রবিশন্তি ষেধবিদ্যামুপাসতে। ততো ভূয় ইব তে তমো যা উ বিদ্যায়াং রতঃ।