পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় । সমস্ত বিশ্বব্যাপারের মধ্যেই একটা নিশ্বাস ও প্রশ্বাস, নিমেষ ও উন্মেষ, নিদ্রা ও জাগরণের পালা আছে; একবার ভিতরের দিকে একবার বাহিরের দিকে নাম উঠার ছন্দ নিয়তই চলিতেছে। থাম এবং চলার অবিরত যোগেই বিশ্বের গতিক্রিয়া সম্পাদিত। বিজ্ঞান বলে,বস্তুমাত্রই সছিদ্র, অর্থাৎ ‘আছে এবং “নাই” এই দুইয়ের সমষ্টিতেই তাহার অস্তিত্ব। এই আলোক ও অন্ধকার, প্রকাশ ও অপ্রকাশ এমনি ছন্দে ছন্দে যতি রাখিয়া চলিতেছে যে, তাহাতে সৃষ্টিকে বিচ্ছিন্ন করিতেছে না, তাহাকে তালে তালে অগ্রসর করিতেছে। ঘড়ির ফলকটার উপরে মিনিটের কাটা ও ঘন্টার কাঁটার দিকে তাকাইলে মনে হয় তাহা অবাধে একটানা চলিয়াছে কিংবা চলিতেছেইনা । কিন্তু সেকেন্ডের কঁটা লক্ষ্য করিলেই দেখা যায় তাহা টিকটিক করিয়া লাফ দিয়া দিয়া চলিতেছে। দোলানদণ্ডটা যে একবার বামে থামিয়া দক্ষিণে যায়, আবার দক্ষিণে থামিয়া বামে আসে তাহা ঐ সেকেন্ডের তালে লয়েই ধরা পড়ে। বিশ্বব্যাপারে আমরা ঐ মিনিটের কাটা ঘড়ির কাঁটাটাকেই দেখি কিন্তু যদি তাহার অণুপরিমাণ কালের সেকেন্ডের কাঁটাটাকে দেখিতে পাইতাম তবে দেখিতাম বিশ্ব নিমেষে নিমেষে থামিতেছে ও চলিতেছে- তাহার একটানা তানের মধ্যে পলিকে পলকে লয় পড়িতেছে। সৃষ্টির দ্বন্দ্বদোলকটির এক প্রান্তেই অন্য প্রান্তে না, এক প্রান্তে এক অন্য প্রান্তে দুই এক প্রান্তে আকর্ষণ অন্য প্রান্তে বিকর্ষণ, এক প্রান্তে কেন্দ্রের অভিমুখী ও অন্য প্রান্তে কেন্দ্রের প্রতিমুখী শক্তি। তর্কশাত্রে এই | বিরোধকে মিলাইবার জন্য আমরা কত মতবাদের অসাধ্য ব্যায়ামে প্রবৃত্ত, কিন্তু সৃষ্টিশান্ত্রে ইহারা সহজেই शिलिऊ श्शा विश्लक अनिदीश कब्रिश फूलि७छ। শক্তি জিনিসটা যদি একলা থাকে। তবে সে নিজের একক্টোকা জোরে কেবল একটা দীর্ঘ লাইন ধরিয়া ভীষণ উদ্ধতবেগে সোজা চলিতে থাকে, ডাইনে বীয়ে ভুক্ষেপমাত্র করে না ; কিন্তু শক্তিকে জগতে একাধিপত্য দেওয়া হয় নাই বলিয়াই, বরাবর তাহাকে জুড়িতে জোড়া হইয়াছে বলিয়াই দুইয়ের উলটাটানে বিশ্বের সকল জিনিসই নম্র হইয়া গোল হইয়া সুসম্পূর্ণ হইতে পারিয়াছে। সোজা লাইনের সমাপ্তিহীনতা, সােজা লাইনের অতি তীব্র তীরু কৃশতা বিশ্বপ্রকৃতির নহে; গােল আকারের সুন্দর পরিপুষ্ট পরিসমাপ্তিই বিশ্বের স্বভাবগত। এই এক শক্তির একাগ্র সোজা রেখায় সৃষ্টি হয় না- তাহা কেবল ভেদ করিতে পারে, কিন্তু কোনো কিছুতেই ধরিতে পারে না, বেড়িতে পারে না, তাহা একেবারে রিক্ত, তাহা প্রলয়েরই রেখা ; রুদ্রের প্রলয়পনাকের মতো তাঁহাতে কেবল একই সুর, তাহাতে সংগীত নাই; এইজন্য শক্তি একক হইয়া DBDD BD BDBB BDD DBDB SS BiDBu BD DDBD DBD DD BDSS BBDBB জগৎকাব্য মিত্ৰাক্ষর- পদে পদে তােহর জুড়িজুড়ি মিল। " বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এই ছন্দটি যত স্পষ্ট এবং বাধহীন, মানবপ্রকৃতির মধ্যে তেমন নহে। সেখানেও এই সংকোচন ও প্রসারণের তত্ত্বটি আছে- কিন্তু তাহার সামঞ্জস্যটিকে আমরা সহজে রাখিতে পারিনা। বিশ্বের গানে তালটি সহজ, মানুষের গানে তালটি বহু সাধনার সামগ্ৰী। আমরা অনেক সময়ে দ্বন্ধের এক প্রান্তে আসিয়া এমনি কুঁকিয়া পড়ি যে অন্য প্রান্তে ফিরিতে বিলম্ব হয় তখন তাল কাটিয়া যায়, প্ৰাণপণে ত্রুটি সারিয়া লইতে গলদঘর্ম হইয়া উঠিতে হয়। এক দিকে আত্ম এক দিকে পর, এক দিকে অর্জন এক দিকে বর্জন, এক দিকে সংযম একদিকে স্বাধীনতা, এক দিকে আচার একদিকে বিচার মানুষকে টানিতেছে; এই