পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় tà DD DBD DDD DBDB BDBD DBDBB BB DDSDD DDDBDDBD DBBBB BDBB নিজের উদার আদর্শকে সমন্ত বিদ্যুপ ও বিরোধের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন- তাহারা স্বজাতির বাহিরে । নুতন একটা জাতির সৃষ্টি করিয়া নিশ্চিন্তু হইয়া বসেন নাই। তেমনি, জাতিভেদকে যদি হিন্দুসমাজের অনিষ্টকর বলিয়া জানি তবে তাহাকেই আমি অহিন্দু বলিয়া জানিব এবং হিন্দুসমাজের মাঝখানে থাকিয়াই তাহার সঙ্গে লড়াই করিব। ছেলেমেয়ের অসবৰ্ণবিবাহ দিতে আমি কুষ্ঠিত হইব না এবং তাহাকেই আমি নিজে হইতে অহিন্দুবিবাহ বলিব না- কারণ বস্তুত আমার মতানুসারে তাঁহাই হিন্দুবিবাহনীতির শ্রেষ্ঠ আদর্শ। যদি এমন হয় যে, হিন্দুসমাজের পক্ষে জাতিভেদ ভালেই, কেবলমাত্র আমাদের কয়েকজনের পক্ষেই তাহার অসুবিধা বা অনিষ্ট আছে। তবেই এই ক্ষেত্রে । আমার পক্ষে স্বতন্ত্র হওয়া শোভা পায় নতুবা কদাচ নহে। হিন্দুসমাজে কোনো কালেই অসবর্ণ বিবাহ ছিল না। এ কথা সত্য নহে, কোনো কালেই অসবর্ণ বিবাহ প্রচলিত হইতে পারে না ইহাও সত্য নহে- হিন্দুসমাজের সমস্ত অতীত-ভবিষ্যৎকে বাদ দিয়া যে সমাজ, সেই বর্তমান সমাজকেই একমাত্র সত্য বলিয়া তাহার। আশা ত্যাগ করিয়া তাহার সঙ্গে আত্মীয়তা অস্বীকার করিয়া দূরে চলিয়া যাওয়াকে আমি ধর্মসংগত বলিয়া কখনোই মনে করি না। অপর পক্ষ বলিবেন আচ্ছা বেশ, বর্তমানের কথাই ধরা যাক, আমি যদি জাতিভেদ না মানিতেই চাই তবে এ সমাজে কাজকর্ম করিব কাহার সঙ্গে ? উত্তর, এখনো যাহাদের সঙ্গে করিতেছ। অর্থাৎ যাহারা জাতিভেদ মানে না । তবেই তো সেই সূত্রে একটা স্বতন্ত্র সমাজ গড়িয়া উঠিল। না, ইহা স্বতন্ত্র সমাজ নহে। ইহা সম্প্রদায় মাত্র। পূর্বেই বলিয়াছি সমাজের স্থান সম্প্রদায় জুড়িতে পারে না। আমি হিন্দুসমাজে জন্মিয়ছি। এবং ব্ৰাহ্মসম্প্রদায়কে গ্রহণ করিয়াছি- ইচ্ছা করিলে আমি অন্য সম্প্রদায়ে যাইতে পারি। কিন্তু অন্য সমাজে যাইব কী করিয়া ? সে সমাজের ইতিহাস তো আমার নহে। গাছের ফল এক ঝাকা হইতে অন্য বঁাকায় যাইতে পারে। কিন্তু এক শাখা হইতে অন্য শাখায় ফলিবে কী করিয়া ? তবে কি মুসলমান অথবা খ্ৰীস্টান সম্প্রদায়ে যোগ দিলেও তুমি হিন্দু থাকিতে পার ? নিশ্চয়ই পারি। ইহার মধ্যে পারাপারির তর্কমাত্রই নাই। হিন্দুসমাজের লোকেরা কী বলে সে কথায় কান দিতে আমরা বাধ্য নই। কিন্তু ইহা সত্য যে কালীচরণ বাড়ুজ্যে মশায় হিন্দুখ্ৰীস্টান ছিলেন, তাহার পূর্বে জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর হিন্দুখ্রীস্টান ছিলেন, তাহারও পূর্বে কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দুখীস্টান ছিলেন। অর্থাৎ তাহারা জাতিতে হিন্দু ধর্মে খ্রীস্টান। খ্রীস্টােন তঁহাদের রঙ, হিন্দুই ঠাঁহাদের বস্তু। বাংলাদেশে হাজার হাজার মুসলমান আছে, হিন্দুরা অহৰ্নিশি তাহাদিগকে হিন্দু নও। হিন্দুনিও বলিয়াছে এবং তাহারাও নিজেদিগকে হিন্দু নাই হিন্দু নই শুনাইয়া আসিয়াছে কিন্তু তৎসত্ত্বেও তাহারা প্রকৃতই হিন্দুমুসলমান। কোনো হিন্দু পরিবারে এক ভাই খ্রীস্টান এক ভাই মুসলমান ও এক ভাই বৈষ্ণব এক পিতামাতার স্নেহে একত্র বাস করিতেছে, এই কথা কল্পনা করা কখনােই দুঃসাধ্য নহে বরঞ্চ ইহাই কল্পনা করা সহজ-কারণ ইহাই যথার্থসত্য, সুতরাং মঙ্গল এবং সুন্দর। এখন যে অবস্থাটা আছে তাহা সত্য নহোতাহা সত্যের বাধা-তাঁহাকেই আমি সমাজের দুঃস্বপ্ন বলিয়া মনে করি— এই কারণে তাহাই জটিল, তাহাই অদ্ভুত অসংগত, তাহাই মানবধর্মের বিরুদ্ধ। হিন্দু শব্দে এবং মুসলমান শব্দে একই পর্যায়ের পরিচয়কে বুঝায় না। মুসলমান একটি বিশেষ ধর্ম কিন্তু হিন্দু কোনাে বিশেষ ধর্ম নহে। হিন্দু ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি জাতিগত পরিণাম । ইহা মানুষের শরীর মন হৃদয়ের নানা বিচিত্র ব্যাপারকে বহু সুদূর শতাব্দী হইতে এক আকাশ, এক আলোক, এক ভৌগোলিক নদনদী অরণ্য-পর্বতের মধ্য দিয়া, অন্তর ও বাহিরের বহুবিধ ঘাতপ্রতিঘাত পরম্পরার একই ইতিহাসের ধারা দিয়া আজ আমাদের মধ্যে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছে। কালীচরণ বাড়ুজ্যে, জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় খ্রীস্টান হইয়াছিলেন বলিয়াই এই সুগভীর ধারা হইতে বিচ্ছিন্ন হইবেন কী করিয়া ? জাতি জিনিসটা মতের চেয়ে অনেক বড়ো এবং অনেক অন্তরতর ; মত পরিবর্তন হইলে জাতির পরিবর্তন হয় না। ব্ৰহ্মাণ্ডের উৎপত্তিসম্বন্ধে কোনো একটা পৌরাণিক মতকে যখন আমি বিশ্বাস করতাম তখনো আমি যে জাতি ছিলাম, তৎসম্বন্ধে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মত যখন বিশ্বাস করি তখনাে আমি সেই জাতি। যদিচ্চ আজ