পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় ዪ9Oዓ একঝাকা রকম বড় বাড়িয়া একটা অদ্ভুত সৃষ্টি ঘটিতে পারে। । . এখনকার কালের যে দীক্ষা তাহাতে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সকল জাতিরই যোগ আছে। কেবল নিজের শাস্ত্ৰ পডিয়া পণ্ডিত হইবার আশা কেহ করিতে পারে না। অন্তত এই দিকেই মানুষের চেষ্টার গতি দেখা যাইতেছে ; বিদ্যা এখন জ্ঞানের একটি বিশ্বযজ্ঞ হইয়া উঠিতেছে- সে সমস্ত মানুষের চিত্তসম্মিলনের ক্ষেত্র । প্ৰস্তুত করিতেছে। মানুষের এই বৃহৎ চেষ্টাই আজ মুসলমানের দ্বারে এবং হিন্দুর দ্বারে আঘাত করিতেছে। আমরা এতদিন পুরাপুরি পাশ্চাত্য শিক্ষা পাইতেছিলাম। এ শিক্ষা যখন এ দেশে প্রথম আরম্ভ হইয়াছিল তখন সকল প্রকার প্রাচ্যবিদ্যার প্রতি তাহার অবজ্ঞা ছিল ! আজ পর্যন্ত সেই অবজ্ঞার মধ্যে আমরাও বাড়িয়া উঠিয়ছি। তাহাতে মাতা সরস্বতীর ঘরে গৃহবিচ্ছেদ ঘটিয়াছে। তঁহার পূর্বমহলের সন্তানেরা পশ্চিম-মহলের দিকের জানলা বন্ধ করিয়াছে এবং পশ্চিম-মহলের সন্তানেরা পুবে হাওয়াকে জঙ্গলের অস্বাস্থ্যকর হাওয়া জ্ঞান করিয়া তাহার একটু আভাসেই কান পর্যন্ত মুড়ি দিয়া বসিয়াছেন। ইতিমধ্যে ক্রমশই সময়ের পরিবর্তন ঘটিয়াছে। সর্বত্রই প্রাচ্য বিদ্যার অনাদর দূর হইতেছে। মানবের জ্ঞানের বিকাশে তাহারও প্রয়োজন সামান্য নহে। সে পরিচয় প্রতিদিন পাওয়া যাইতেছে। অথচ, আমাদের বিদ্যাশিক্ষার বরাদ্দ সেই পূর্বের মতোই রহিয়া গিয়াছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল আমাদেরই বিদ্যার উপযুক্ত স্থান নাই। হিন্দুমুসলমান-শাস্ত্ৰ অধ্যয়নে একজন জর্মন ছাত্রের যে সুবিধা আছে আমাদের সে সুবিধা নাই। এরূপ অসম্পূর্ণ শিক্ষালাভে আমাদের ক্ষতি করিতেছে সে বােধ যে আমাদের মনে জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে, তাহা এখনকারই কালের ধর্মবিশত ; আমরা যদি কেবল পশ্চিমের পড়া পাখি হইয়া শেখা বুলি আওড়াই তবে তাঁহাতে রাস্তার লোকের ক্ষণকালীন বিস্ময় ও কৌতুক উৎপাদন করিবে: মাত্র, পৃথিবীর তাহাতে কোনাে লাভ নাই। আমরা নিজের বাণীকে লাভ করিব, সমস্ত মানব আমাদের কাছে এই প্ৰত্যাশা করিতেছে। সেই প্রত্যাশা। যদি পূর্ণ করিতে না পারি। তবে মানুষের কাছে আমাদের কোনো সম্মান নাই। এই झा का श्या अश्या आकाळ काव्या श्या झाल्या आगीळ রতে হইবে । অল্পদিন হইতে আমাদের দেশে বিদ্যাশিক্ষার উপায় ও প্ৰণালী পরিবর্তনের যে চেষ্টা চলিতেছে সেই চেষ্টার মূলে আমাদের এই আকাঙক্ষা রহিয়াছে। চেষ্টা যে ভালো করিয়া সফলতা লাভ করিতে পারিতেছে না তাহারও মূল কারণ আমাদের এতকালের অসম্পূর্ণ শিক্ষা। আমরা যাহা ঠিকমত পাই নাই তাহা দিতে চেষ্টা করিয়াও দিতে পারিতেছি না । 嘲 আমাদের স্বজাতির এমন কোনো একটি বিশিষ্টতা আছে যাহা মূল্যবান, এ কথা সম্পূর্ণ অশ্রদ্ধা করেন এমন লোকও আছেন, তাহদের কথা আমি একেবারেই ছাড়িয়া দিতেছি। 更 এই বিশিষ্টতাকে স্বীকার করেন। অথচ ব্যবহারের বেলায় তাহাকে নানাধিক অগ্রাহ্য করিয়া থাকেন এমন লোকের সংখ্যা অল্প নহে। তঁহদের মধ্যে অনেকে হয়তো আহিকতৰ্পণও করেন এবং শাস্ত্ৰালাপেও পটু কিন্তু জাতীয় আদর্শকে তাহারা অত্যন্ত আংশিকভাবে গ্রহণ করেন এবং মুখে যতটা করেন কাজে ততটা করেন না। ইহারা নিজেরা যে বিদ্যালয়ে পড়া মুখস্থ করিয়া আসিয়াছেন তাহাকে বেশিদূর ছাড়াইয়া যাইতে ভরসা করেন না । আর-একদল আছেন তাহারা স্বজাতির বিশিষ্টতা লইয়া গীেরব করেন। কিন্তু এই বিশিষ্টতাকে তাহারা অত্যন্ত সংকীর্ণ করিয়া দেখিয়া থাকেন। যাহা প্রচলিত তাহাকেই তাহারা বড়ো আসন দেন, যাহা চিরন্তন তাহাকে নহে। আমাদের দুৰ্গতির দিনে যে বিকৃতিগুলি অসংগত হইয়া উঠিয়া সমস্ত মানুষের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ঘটাইয়াছে, খণ্ড খণ্ড করিয়া আমাদিগকে দুর্বল করিয়াছে এবং ইতিহাসে বারবার করিয়া কেবলই আমাদের মাথা হেঁট করিয়া দিতেছে, তাহারা তাহাদিগকেই আমাদের বিশেষত্ব বলিয়া তাহদের প্রতি নানাপ্রকার কাল্পনিক গুণের আরোপ করিবার চেষ্টা করিতেছেন। ইহার কালের আবর্জনাকেই স্বজাতির প্রকৃত পরিচয় মনে করিয়া তাহাকেই চিরস্থায়ী করিবার চেষ্টা করবেন এবং দূষিত বম্পের