পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 রবীন্দ্র-রচনাবলী আলোকে আজ যাত্রায় বাহির হইবে- জাতীপুষ্পসুগন্ধি বানান্ত হইতে সজল বাতাসে আহবান আসিল(कान् शब्रादिठान बनिग्रां आए क्श्यूशन निछायड थठीकी ! »OR) 冲° ইংরেজের সাহিত্যে শরৎ প্রৌঢ় । তার যৌবনের টান সবটা আলগা হয় নাই, ও দিকে তাকে মরণের টান ধরিয়াছে; এখনো সব চুকিয়া যায় নাই কেবল সব বরিয়া যাইতেছে। একজন আধুনিক ইংরেজ কবি শরৎকে সম্ভাষণ করিয়া বলিতেছেন, “তোমার ঐ শীতের আশঙ্কাকুল গাছগুলাকে কেমন যেন আজ ভূতের মতো দেখাইতেছে ; হায় রে, তোমার ঐ কুঞ্জবনের ভাঙা হাট, তোমার ঐ ভিজা পাতার বিবাগি হইয়া বাহির হওয়া ! যা অতীত এবং যা আগামী তাদের বিষয় বাসরশয্যা তুমি রচিয়াছ। যা-কিছু ক্রিয়মাণ তুমি তাদেরই বাণী, যত কিছু গাঁতস্য শোচনা তুমি তারই অধিদেবতা।’ কিন্তু এ শরৎ আমাদের শরৎ একেবারেই নয়, আমাদের শরতের নীল চোখের পাতা দেউল-হওয়া যৌবনের চােখের জলে ভিজিয়া ওঠে নাই। আমার কাছে আমাদের শরৎ শিশুর মূর্তি ধরিয়া আসে। সে একেবারে নবীন। বর্ষার গর্ভ হইতে এইমাত্র জন্ম লইয়া ধরণী-ধান্ত্রীর কোলে শুইয়া সে হাসিতেছে। তার কঁচা দেহখানি ; সকালে শিউলি ফুলের গন্ধটি সেই কাঁচিগায়ের গন্ধের মতো। আকাশে আলোকে গাছেপালায় যা-কিছু রঙ দেখিতেছি সে তো প্ৰাণেরই রঙ, একেবারে তাজা । প্রাণের একটি রঙ আছে। তা ইন্দ্ৰধনুর গাঁঠ হইতে চুরি করা লাল নীল সবুজ হলদে প্রভৃতি কোনাে বিশেষ রঙ নয়; তা কোমলতার রঙ । সেই রঙ দেখিতে পাই ঘাসে পাতায়, আর দেখি মানুষের গায়ে। জন্তুর কঠিন চর্মের উপরে সেই প্রাণের রঙ ভালো করিয়া ফুটিয়া ওঠে নাই, সেই লজ্জায় প্রকৃতি তাকে রঙ-বেরঙের লোমের ঢাকা দিয়া ঢাকিয়া রাখিয়াছে। মানুষের গা-টিকে প্রকৃতি অনাবৃত করিয়া চুম্বন করিতেছে। যাকে বাড়িতে হইবে তাকে কড়া হইলে চলিবে না, প্রাণ সেইজন্য কোমল। প্রাণ জিনিসটা অপূর্ণতার মধ্যে পূর্ণতার ব্যঞ্জনা। সেই ব্যঞ্জনা যেই শেষ হইয়া যায় অর্থাৎ যখন যা আছে কেবলমাত্র তাই আছে, তার চেয়ে আরো কিছুর আভাস নাই তখন মৃত্যুতে সমন্তটা কড়া হইয় ওঠে, তখন লাল নীল সকল রকম রঙই থাকিতে পারে কেবল প্ৰাণের রঙ থাকে না । শরতের রঙটি প্রাণের রঙ। অর্থাৎ তাহা কঁচা, বড়ো নরম। রৌদ্রটিকঁচা সোনা, সবুজটি কাঁচ, নীলট তাজা । এইজন্য শরতে নাড়া দেয় আমাদের প্রাণকে, যেমন বর্ষায় নাড়া দেয় আমাদের ভিতর-মহলের হৃদয়কে, যেমন বসন্তে নাড়া দেয়। আমাদের বাহির-মহলের যৌবনকে । বলিতেছিলাম শরতের মধ্যে শিশুর ভাব। তার এই হাসি, এই কান্না । সেই হাসিকান্নার মধ্যে কার্যকারণের গভীরতা নাই, তাহা এমনিহালকাভাবে আসে এবং যায় যে কোথাও তার পায়ের দাগটুকু পড়ে ঢেউয়ের উপরটাতে আলোছায়া ভাইবোনের মতো যেমন কেবলই দুরন্তাপনা করে অথচ কোনো दूर नीं । ছেলেদের হাসিকান্না প্রাণের জিনিস, হৃদয়ের জিনিস নহে। প্রাণ জিনিসটা ছিপের নীেকার মতো দুটিয়া চলে তাতে মাল বোঝাই নাই; সেই চুটিয়া চলা প্ৰাণের হাসি-কান্নার ভার কম। হৃদয় জিনিসটা বোঝাই নীেকা, সে ধরিয়া রাখে, ভক্লিয়া রাখে- তার হাসিকান্না চলিতে চলিতে করাইয়া ফেলিবার মতো নয় । যেমন ঝরনা, সে চুটিয়া চলিতেছে বলিয়াই ঝলমল করিয়া উঠিতেছে। তার মধ্যে ছায়া-আলোর কোনো বাসা নাই, বিশ্ৰাম নাই। কিন্তু এই কারনাই উপত্যকায় যে সরোবরে গিয়া পড়িয়ছে, সেখানে আলো যেন তলায় ডুব দিতে চায়, সেখানে ছায়াজলের গভীর অন্তরঙ্গ হইয়া উঠে। সেখানে অৱতার ধ্যানের আসন।