পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় \ኃbr፩ কর্মবীরদের জীবন কর্মকে জন্ম দেয়, আবার সেই কর্মর্তমহাদের জীবনকে গঠিত করে । আমি ইহা আজ বেশ করিয়া জানিয়াছি যে, কবির জীবন যেমন কাব্যকে প্ৰকাশ করে কাব্যও তেমনি কবির জীবনকে রচনা করিয়া চলে । আমার হাতে আমারই রচিত অনেকগুলি পুরাতন চিঠি ফিরিয়া আসিয়াছে’- বৰ্তমান প্রবন্ধে মাঝে মাঝে আমার এই চিঠিগুলি হইতে কোনো কোনো অংশ উদ্ধৃত করিব। আজ এই চিঠিগুলি পড়িতে পড়িতে ১৮৯৪ সালে লিখিত এই কাটি কথা হঠাৎ চোখে পড়িল - ‘আমি আমার সৌন্দৰ্য-উজ্জ্বল আনন্দের মুহুর্তগুলিকে ভাষার দ্বারা বারংবার স্থায়িভাবে মূর্তিমান করাতেই ক্রমশই আমার অন্তজীবনের পথ সুগম হয়ে এসেছে। সেই মুহুর্তগুলি যদি ক্ষণিক সম্ভোগেই ব্যয় হয়ে যেত তা হলে তারা চিরকালই অস্পষ্ট সুদূর মরীচিকার মতো থাকত, ক্রমশ এমন দৃঢ়বিশ্বাসে এবং সুস্পষ্ট অনুভূতির মধ্যে সুপরিস্ফুট হয়ে উঠত না । অনেকদিন জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাতসারে ভাষার দ্বারা চিহ্নিত করে এসে জগতের অন্তর্জগৎ, জীবনের অন্তজীবন, মোহগ্ৰীতির দিব্যত্ব আমার কাছে আজ আকার ধারণ করে উঠছে- নিজের কথা আমার নিজেকে সহায়তা করেছে- অন্যের কথা থেকে আমি এ জিনিস কিছুতে পেতুম না ।” এই রকমে পদ্মের বীজকোষ এবং তাহার দলগুলির মতো একত্রে রচিত আমার জীবন ও কাব্যগুলিকে একসঙ্গে দেখাইতে পারিলে সে চিত্র ব্যর্থ হইবে না । কিন্তু তেমন করিয়া লেখা নিতান্ত সহজ নহে। তেমন সময় এবং স্বাস্থ্যের সুযোগ নাই, ক্ষমতাও আছে কিনা সন্দেহ করি । এখন উপস্থিতমত আমার জীবন ও কাব্যকে জড়াইয়া একটা রেখাটােনা ছবির আভাসপাত করিয়া যাইব । যে-সকল পাঠক ভালোবাসিয়া আমার লেখা পড়িয়া আসিয়াছেন তাহাদের কাছে এটুকুও নিতান্ত নিম্বফল হইবে না । আমার লেখা র্যাহারা অনুকূলভাবে গ্রহণ করেন না তঁহারাও সম্মুখে বর্তমান আছেন কল্পনা করিলে তাহাদের সন্দিগ্ধ দৃষ্টির সম্মুখে সংকোচে কলম সরিতে চায় না- অতএব এই আত্মপ্রকাশের সময় তাহাদিগকে অন্তত মনে মনেও এই সভাক্ষেত্রের অন্তরালে রাখিলাম বলিয়া তাহারা আমাকে ক্ষমা করিবেন । আরম্ভেই একটা কথা বলা আবশ্যক চিরকালই তারিখ সম্বন্ধে আমি অত্যন্ত কাচা । জীবনের বড়ো বড়ো ঘটনারও সন-তারিখ আমি স্মরণ করিয়া বলিতে পারি না ; আমার এই অসামানা বিস্মরণশক্তি নিকটের ঘটনা এবং দূরের ঘটনা, ছােটাে ঘটনা এবং বড়ো ঘটনা, সর্বত্রই সমান অপক্ষপাত প্ৰকাশ করিয়া থাকে। অতএব আমার এই বর্তমান রচনাটিতে সুরের ঠিকানা যদি-বা থাকে, তালের ঠিকানা না থাকিতেও পারে। প্রথমে আমার রাশিচক্র ও জন্মকালটি ঠিকুজি ** হইতে নিম্নে উদধূত করিয়া দিলাম।-- à Y Abro o S8 \p S A \po কৃষ্ণা ত্ৰয়োদশী সোমবার ১৯। রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত পারিবারিক পুরাতন খাতায় প্রাপ্ত রাশিচক্রটি পরপৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য :