পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ Sb” রবীন্দ্র-রচনাবলী চিনেবাজারের জুতোয় বর্ষা কাটানো যায়- কিন্তু আগেকার মতো সে বজ্ৰ বিদ্যুৎ বৃষ্টি বাতাসের মাতামতি দেখি নে। আগেকার বর্ষায় একটা নৃত্য ও গান ছিল, একটা ছন্দ ও তাল ছিলএখন যেন প্রকৃতির বর্ষার মধ্যেও বয়স প্রবেশ করেছে, হিসাবকিতাব ও ভাবনা ঢুকেছে, শ্লেষ্মা শঙ্কা ও সাবধানের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। লোকে বলছে, সে আমারই বয়সের দোষ । তা হবে ! সকল বয়সেরই একটা কাল আছে, আমার সে বয়স গেছে হয়তো । যৌবনের যেমন বসন্ত, বার্ধক্যের যেমন শরৎ, বাল্যকালের তেমনি বর্ষা • বর্ষাকাল ঘরে থাকবার কাল, কল্পনা করবার কাল, গল্প শোনবার কাল, ভাই বোনে মিলে খেলা করবার কাল - বর্ষাকাল বালকের কাল- বর্ষাকালে তরুলতার শ্যামল কোমলতার মতো আমাদের স্বাভাবিক শৈশব স্মৃর্তি পেয়ে ওঠে- বর্ষার দিনে আমাদের ছেলেবেলার কথাই মনে পড়ে। করে দরজা পড়ত, প্ৰকাণ্ড তেঁতুলগাছ তার সমস্ত অন্ধকার নিয়ে নড়ত, উঠোনে একইটু জল দাঁড়াত, ছাতের উপরকার চারটি টিনের নল থেকে স্থূল জলধারা উঠোনের জলের উপর প্রচণ্ড শব্দে পড়ত ও ফেনিয়ে উঠত, চারটে জলধারাকে দিকহন্তীর শুড় বলে মনে হত । তখন আমাদের পুকুরের ধারের কেয়াগাছে ফুল ফুটত (এখন সে গাছ আর নেই)। বৃষ্টিতে ক্ৰমে পুকুরের ঘাটের এক-এক সিঁড়ি যখন অদৃশ্য হয়ে যেত ও অবশেষে পুকুর ভেসে গিয়ে বাগানে জল দাড়াত- বাগানের মাঝে মাঝে বেলফুলের গাছের ঝাঁকড়া মাথাগুলো জলের উপর জেগে থাকত এবং পুকুরের বড়ো বড়ো মাছ পালিয়ে এসে বাগানের জলমগ্ন গাছের মধ্যে খেলিয়ে বেড়াত, তখন হাঁটুর কাপড় তুলে কল্পনায় বাগানময় জলে দাপাদাপি করে বেড়াতেম। বর্ষার দিনে ইস্কুলের কথা মনে হলে প্ৰাণ কী অন্ধকার হয়েই যেত, এবং বর্ষাকালের সন্ধেবেলায় যখন বারান্দা থেকে সহসা গলির মোড়ে মাস্টােরমহাশয়ের ছাতা দেখা দিত। তখন যা মনে হত তা যদি মাস্টারমশায় টের পেতেন তা হলে —“বর্ষার চিঠি’, বালক, শ্রাবণ ১২৯২, পৃ. ১৯৬-৯৮ জীবনের টুকরা স্মৃতিকথা রবীন্দ্রসাহিত্যের নানাস্থানে ছড়ানো আছে। উহার মধ্যে চিঠিপত্রাদি বাদে শেষ দিকের রচনা- লিপিকা (প্রথমাংশ), সে, ছড়ার ছবি, আকাশপ্ৰদীপ, ছেলেবেলা, গল্পসল্প, এই কয়খনি গ্ৰন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । ‘জীবনস্মৃতি সম্পাদনকার্যে ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী ও প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় আমাদের বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু পত্র এবং জ্ঞানদানন্দিনীদেবীর আত্মচরিতের পাণ্ডুলিপি আমরা ইন্দিরাদেবীর সৌজন্যে ব্যবহার করিতে পাইয়াছি। এই কার্যে ব্যবহৃত অন্যান্য নানা গ্রন্থের মধ্যে নিম্নোল্লিখিত গ্রন্থগুলি উল্লেখযোগ্য : - শ্ৰীমন্মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী তুতীয় সংস্করণ, ১৯২৭] —সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পত্রাবলী —প্রিয়নাথ শাস্ত্রী -প্ৰকাশিত মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১৬] -অজিতকুমার চক্রবর্তী বঙ্গভাষার লেখক। [১৩১১] —হরিমোহন মুখোপাধ্যায়-সম্পাদিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি [ফায়ুন ১৩২৬] —বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় জ্যোতিরিন্দ্ৰনাথ [১৩৩৪] —মন্মথনাথ ঘোষ রবীন্দ্র-জীবনী, প্রথম খণ্ড [১৩৪০] —প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্ৰকথা {১৩৪৮] - খগেন্দ্ৰনাথ চট্টোপাধ্যায় -সংকলিত সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা, খণ্ড ২২ [মাঘ ১৩৪৯] -ব্ৰজেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস