পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অনার্যেচিত ; আর, তিনি ধনপতি নামে বিখ্যাত । প্রাচীন ভারতে ধন-শব্দে বিশিষ্টরূপে গোমেষ্যাদি পশুধনই বুঝাইত । ইহাতেই বুঝিতে পারা যাইতেছে যে, পশুজীবী মোগল তাতার প্রভৃতি জাতিরাই প্রাচীন ভারতের আর্যদিগের ইতিহাসে যক্ষনাম প্রাপ্ত হইয়াছিল। কী পশুহন্তা কিরাত জাতি, কী পশুপালক মোগল জাতি, উভয়েই কৃষিকার্য বিষয়ে সমান অনভিজ্ঞ ছিল। এখন জিজ্ঞাস্য এই যে, ধনুৰ্ভঙ্গের ব্যাপারটিকে কোন প্রকার বিষ্মভঙ্গ বলিব ? কিরাতদিগের পশুঘাতী ধনুৰ্ভঙ্গ বলিব ? না রাক্ষসদিগের বিষদাঁত ভঙ্গ বলিব ? আমার বোধ হয়, প্ৰাচীনকালে ভারতের উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক যোগ-সেতু বর্তমান ছিল ; কেননা লঙ্কাপুরী প্রথমে কুবেরের ছিল, পরে তাহা রাবণ বলপূর্বক হস্তগত করিয়াছিল। রাবণ এবং কুবের যে - একই পিতার পুত্রদ্বয় ইহা কাহারও অবিদিত নাই । এ সম্বন্ধে আর-একটি কথা আমার বলিবার আছে- সেটাও বিবেচ্য। কথাটি এই ; নেপাল প্রদেশে বুদ্ধমন্দির এবং শিবমন্দির পাশাপাশি অবস্থিতি করে । গুর্থীরাও শৈবধর্মাবলম্বী । খুব সম্ভব যে, বৌদ্ধধর্মের প্রাদুর্ভাবকালে বৌদ্ধসাধকেরা হিমালয় প্রদেশে নির্জনে যোগসাধন এবং তপস্যা করিতেন। উমা যেমন উপনিষদের সুনিৰ্মলা ব্ৰহ্মবিদ্যা, পার্বতী তেমনি তন্ত্রশস্ত্রের বিভীষিকাময়ী দশমহাবিদ্যা । ভক্তের দেবতা। যেমন বিষ্ণু, যোগীতপস্বীদিগের দেবতা তেমনি মহাদেব । বৌদ্ধধর্মের প্রাদুর্ভাবকালে বৌদ্ধ সাধকেরা বিশিষ্টরূপে যোগীতপস্বী ছিলেন । মহাদেব সেই-সকল পর্বতবাসী বৌদ্ধ যোগীতপস্বীদিগের আদর্শ-প্রতিমা- এরূপ মনে হওয়া কিছুই বিচিত্র নহে। কয়েক বৎসর পূর্বে ‘বৌদ্ধধর্ম এবং আর্যধর্মের ঘাতপ্রতিঘাত' নামক পুস্তিকায় এই বিষয়টির সম্বন্ধে আমি যাহা সবিস্তারে লিখিয়াছি তাহা সংক্ষেপে এই ; পৌরাণিক শাস্ত্রকারেরা আশ্চর্য নূতন প্রণালীতে বৌদ্ধ বিপ্লবের প্রতিবিধানচেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । র্তাহারা বৌদ্ধ যোগীতপস্বীদিগের আর্য যোগীতপস্বীদিগের দলে টানিয়া লইলেন, আর মহাদেবকে এই-সকল অবৈদিক যোগীতপস্বীদিগের ইষ্টদেবতার পদবীতে আসন গ্ৰহণ করাইলেন । পাছে লোকে মনে করে, যোগীশ্বর মহাদেব বুদ্ধেরই আর-এক অবতার- এই আশঙ্কায় পৌরাণিক শাস্ত্রকারেরা তাহার গলায় পৈতা দিয়া তাহাকে ব্ৰাহ্মণশ্রেষ্ঠ করিয়া গডিয়া লাইলেন । عبر রবীন্দ্রনাথের মোট কথাটির সহিত আমার মতের একটুও অনৈক্য নাই। যে দু-একটি কথা আমি উপরে ইঙ্গিত করিলাম তাহার সহিত ভারতের ইতিহাস-ধারার কথাগুলির সমন্বয় মতে প্ৰবন্ধটির অঙ্গপূরণ করা হইলে ভালো হয়- ইহাই আমার মনোগত অভিপ্ৰায় । আমার বিশ্বাস এই যে, এই সমন্বয়কার্যটি রবীন্দ্রনাথ মনে করিলেই ঈশ্বরপ্রসাদে সর্বাঙ্গসুন্দরীরূপে সুনিষ্পন্ন করিতে পারেন । ** আত্মপরিচয় প্রবন্ধ ছাত্রসমাজের অধিবেশনে সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজ মন্দিরে পঠিত হয় । সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজের পত্রিকা তত্ত্বকৌমুদী এই প্রবন্ধে বিবৃত মতের প্রতিবাদ করেন, রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ব্ৰাহ্ম প্রবন্ধে তাহার প্রত্যুত্তর দেন । হিন্দু ব্ৰাহ্ম “আত্মপরিচয় নামক প্রবন্ধে আমরা এই কথাটি বলিবার চেষ্টা করিয়াছিলাম যে, হিন্দু ব্ৰাহ্মীরা হিন্দুই, অর্থাৎ যে ব্যক্তি হিন্দু সে ব্ৰাহ্ম হইলেও হিন্দু, ব্ৰাহ্ম না হইলেও হিন্দু। ইহাতে তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকার সম্পাদক, মহাশয় লিখিতেছেন যে, যেহেতু আদি ব্ৰাহ্মসমাজ সামাজিক বিষয়ে “উন্নতিশীল ব্ৰাহ্মসমাজের অপেক্ষা অনেক পশ্চাতে পড়িয়াছেন তখন সমগ্ৰ ব্ৰাহ্মসমাজ হিন্দু কি 88 seki, VORMy Yoy»