পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>○や রবীন্দ্র-রচনাবলী চলে। উত্তাপ যদি সর্বত্র একাকার হইয়া যায়, তাহা হইলে হাওয়া খেলায় না, নদী বহে না, প্ৰাণ টেকে না। একাকার হইয়া যাওয়ার অর্থই পঞ্চােত্ব পাওয়া। অতএব আমাদের সাহিত্য যদি বাচিতে চায়, তবে ভালো করিয়া বাংলা হইতে শিখুক । ভাবের ভাষার অনুবাদ চলে না। ছাচে ঢালিয়া শুষ্ক জ্ঞানের ভাষার প্রতিরূপ নির্মাণ করা যায়। কিন্তু ভাবের ভাষা হৃদয়ের স্তন্য পান করিয়া, হৃদয়ের সুখদুঃখের দোলায় দুলিয়া মানুষ হইতে থাকে। সুতরাং ত্যাহার জীবন আছে। ছাচে ঢালিয়া তাহার একটা নিজীব প্রতিমা নির্মাণ করা যাইতে পারে, কিন্তু তাহা চলিয়া ফিরিয়া বেড়াইতে পারে না, ও হৃদয়ের মধ্যে পাষাণভোরের মতো চাপিয়া পডিয়া, থাকে। Force of gravitationকে ভারাকর্ষণ শক্তি বলিলে কিছুই আসে যায় না। কিন্তু ইংরাজিতে liberty ও freedom শব্দে যে ভাবটি মনে আসে, বাংলায় স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য শব্দে ঠিক সে ভাবটি আসে না- কোথায় একটুখানি তফাত পড়ে। ইংরাজিতে GR <r 'free as mountain air", আমরা যদি সেইখানে বলি “পর্বতের বাতাসের মতো স্বাধীন”, তাহা হইলে কি কথাটা প্ৰাণের মধ্যে প্রবেশ করে? আমরা আজকাল ইংরাজির ভাবের ভাষাকে বাংলায় অনুবাদ করিতেছি— মনে করিতেছি ইংরাজি ভাবটি বুঝি ঠিক বজায় রাখিলাম- কিন্তু তাহার প্রমাণ কী আমাদের সাহিত্যে এখন ইংরাজি-ওয়ালারা যাহা লেখেন, ইংরাজি-ওয়ালারাই তাহা পড়েন, ভাবগুলিকে মনে মনে ইংরাজিতে অনুবাদ করিয়া লন- ‘তাঁহাদের যাহা-কিছু ভালো লাগে, ইংরাজিব সহিত মিলিতেছে মনে করিয়া ভালো লাগে। কিন্তু যে ব্যক্তি ইংরাজি বুঝে না সে ব্যক্তিকে ঐ লেখা পড়িতে দাও, কথাগুলি তাহার প্রাণের মধ্যে যদি প্ৰবেশ করিতে পারে তবেই বুঝিলাম যে, ইয়া, ইংরাজি ভাবটা বাংলা হইয়া দাড়াইয়াছে। নহিলে অনুবাদ করিলেই যে ইংরাজি বাংলা হইয়া যাইবে, এমন কোনো কথা নাই ; অতএব, বাংলা ভাব ও ভাবের ভাষা যতই সংগ্ৰহ করা যাইবে ততই যে আমাদের সাহিত্যের উপকার হইবে তাহাতে আর সন্দেহ নাই। এই নিমিত্তই সংগীত-সংগ্রহের প্রকাশক বঙ্গসাহিত্যানুরাগী সকলেরই বিশেষ কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন। Universal Love প্রভৃতি বড়ো বড়ো কথা বিদেশীদের মুখ হইতে বড়োই ভালো শুনায়, কিন্তু ভিখারীরা আমাদের দ্বারে দ্বারে সেই কথা গাহিয়া বেড়াইতেছে, আমাদের কানে পৌঁছায় না কেন ?— “আয় রে আয়, জগাই মাধ্যই আয়! হরিসংকীর্তনে নাচিবি যদি আয়। ওরে মার খেয়েচি, নাহয় আরো খাব ওরে তবু হারির নামটি দিব আয়! ওরে মেরেছে কলসীর কানা, তাই বলে কি প্ৰেম দিব না। আয়!” বাউল বলিতেছে "G (2N R83CS (GM N5OS 3 | আত্মসুখীর মিছে সে প্রেমের আশয়।” গোড়াতেই মারা চাই। আত্মহত্যা না করিলে প্রেম করা হয় না। (পূর্বেই আর একটি গানে বলা হইয়াছে— “যার আমি মরেছে, তার সাধন হয়েছে। কোটি জন্মের পুণ্যের ফল তার উদয় হয়েছে।)” তার পরে বলিতেছে “G ze s 9e 9f (23NIER V: EGKS R Q VE II” যে মরে তার আর মরণের ভয় থাকে না । জগৎকে সে ভালোবাসে, এইজন্য সে জগৎ হইয়া যায়, সে একটি অতি ক্ষুদ্র “আমি” মাত্র নহে, যে, যমের ভয় করিবে- সে সমান্ত বিশ্বচরাচর।