পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS br রবীন্দ্র-রচনাবলী অতএব ভ্রমের কারণ মন হ্যহতে দূর করিয়া সেই ব্যক্তিগত অপমানজ্বালা বিস্মৃত হইয়া আমরা যদি স্থিরচিত্তে প্ৰণিধান করিয়া দেখি তবে ইহা নিশ্চয় স্বীকার করিতে হইবে যে ইংরাজ গবর্মেন্টের নিকট হইতে আমরা এত বহুল সুফল লাভ করিয়াছি যে তাহার নিঃস্বাৰ্থ উপকারিতা সম্বন্ধে অবিশ্বাস করা আমাদের পক্ষে কৃতঘ্নতা মাত্র। অতএব সকলেই বলিবেন ভারতশাসনের মুখ্য উদ্দেশ্য ভারতবর্ষেরই উন্নতি। আমাদেরই সুবিধা, আমাদেরই কাজ! সেই আমাদের কাজের জন্য আমাদের লোকের সাহায্য প্রার্থনীয় হইয়াছে। সহজেই মনে হয় আমরা বাছিয়া দিলে কাজটাও ভালো হইবে, আমাদের মনেরও সন্তোষ হইবে। এই সন্তোষ পদার্থটি কিছু উপেক্ষার যোগ্য নহে। ইহাতে কাজ যেমন অগ্রসর করিয়া দেয় এমন আর কিছুতে নহে। রুচিপূর্বক আহার করিলে তবে পরিপাকের সহায়তা হয়। কার্যসাধনের সঙ্গে সঙ্গে সম্ভোষসাধনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক, নতুবা উপকারের গ্রাসও গলাধঃকরণ করা কঠিন হইয়া উঠে এবং তাহ অন্তরে অন্তরে অন্তর্দংশ বেদনা আনয়ন করে। কিন্তু আমাদের বিরোধী পক্ষীয় ইংরাজি সম্পাদকেরা অতিরিক্ত বুদ্ধিপ্রভাবে বলিতেছেন যে, ভারতবর্ষীয়েরা প্ৰাচ্যজাতীয়, অতএব তাহদের হন্তে মন্ত্রি-অভিষেকের ভার দিলে তাহারা নিজেই অসন্তুষ্ট হইবে। আমাদের ইংরাজি সম্পাদক মহাশয় যদি আমার ধৃষ্টতা মার্জনা করেন তো নিৰ্ভয় হইয়া একটা কথা বলি। আমার বিশ্বাস আছে হাস্যরসকুতুহলী ইংরাজ জাতি হাস্যাম্পদ হইতে একান্ত ডরাইয়া থাকেন। কিন্তু উপস্থিতক্ষেত্রে তাহার আশ্চর্য ব্যতিক্রম দেখা যাইতেছে। যখন সমস্ত ভারতবর্ষ কনগ্রেসযোগে ইংলন্ডের নিকটে নিবেদন করিতেছেন যে স্বাধীন মন্ত্রিনিয়োগের অধিকারই তাহদের সর্বপ্রধান প্রার্থনা এবং সেই অধিকার প্রাপ্ত হইলেই তাহাদের প্রধান অসন্তোষের কারণ দূর হইবে, তখন কোন লজ্জায় হাস্যরসাতত্ত্বের সমুদয় নিয়ম বিস্মৃত হইয়া ইংলন্ডবাসী সম্পাদক এ কথা বলেন যে, এই গৌরবজনক অধিকার লাভে সফল হইলেই প্রাচ্য ভারতবর্ষ অসন্তুষ্ট হইবে! এ বিষয়ে পূর্ব-পশ্চিমের কোনো মতভেদ থাকিতে পারে না যে, ব্যথিত ব্যক্তি নিজের বেদনা যতটা বোঝে, স্বয়ং ইংরাজ সম্পাদকও 。ऊ5 66न् व् ! অতএব আমাদের সন্তোষ অসন্তোষের সম্বন্ধে আমরাই প্রামাণ্য সাক্ষী; ইংরাজ সম্পাদকের প্রতিবাদ এ স্থলে কিঞ্চিৎ অসংগত বলিয়া মনে হয়। তাহারা বলেন যুদ্ধপ্রিয় জাতিরা এই মত্রি-অভিষেক-প্রথায় ক্ষুব্ধ হইবেন। কেন হইবেন? তাহদের অধিক পরিমাণে তেজ আছে বলিয়াই কি তাহারা রাজনীতিক্ষেত্রে অধিকতর স্বাধীনতা চাহেন না? স্বাধীন অধিকার কি তবে কেবল যুদ্ধপ্রিয় জাতির পক্ষেই অরুচিকর ? আমরা যুদ্ধপ্রিয় নহি, কিন্তু অনুমান করি যোদ্ধজাতির প্রতি এরাপ কলঙ্ক আরোপ করা সম্পূর্ণ অমূলক ও অন্যায়। তবে যদি এ কথা বলো, আমাদের যোদ্ধজাতীয়েরা এখনো এতটা দূর বাকপটুতা লাভ করেন নাই যাহাতে করিয়া মন্ত্রিসভায় বসিয়া পরামর্শ দান করিতে পারেন, সুতরাং সেখানে আসন অধিকার করিতে তাহারা সক্ষম হইবেন না এবং সক্ষম-শ্ৰেণীয়দের প্রতি তাহদের অসুয়ার উদ্ৰেক হইবেতাহার আর কী প্রতিবাদ করিব? এ কথা কতকগুলি সংকীর্ণ হৃদয়ের ক্ষুদ্রকল্পনাপ্রসূত। ইহাতে আমাদের বীরজাতিদিগকে অপমান করা হয়। তাহদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তি নাই এবং তাহদের জাতীয়েরা যোগ্য ব্যক্তিকে চিনিতে পারে না, দুই-চারিজন ইংরাজের মুখের কথাকে। ইহার প্রমাণ বলিয়া क्षेत्रों यांठ °ांद्र नीं। আরেকটা কথা জিজ্ঞাসা করি।- ইংরাজের সুশাসনে আমাদের যোদ্ধৃবর্গের যুদ্ধ করিবার অবসর কোথায়? অতএব যখন যুদ্ধগীেরবের দ্বার রুদ্ধ, তখন কি স্বভাবতই জাতীয় রাজনৈতিক গীেরবের প্রতি তাহদের হৃদয় আকৃষ্ট হইবে না? যদি সত্য না হয় তবে যে-কোনো উপায়ে হীেক জাতিস্বভাবসুলভ যুদ্ধলালসা হইতে তাহদের চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করিয়া রাজ্যচালন ও শান্তিকার্যের মধ্যে তাহাদের গৌরবম্পহা৷ চরিতার্থ করিতে দিবার চেষ্টা করা কি রাজপুরুষেরা উচিত জ্ঞান করেন না ?