পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্ত্রি-অভিষেক ᎩᏔᎼᏳ আমার জিজ্ঞাস্য কেবল এই যে, আমাদের অপেক্ষা গবর্মেন্টের অর্থাৎ দুই-চারি জন ইংরাজের এ বিষয়ে অধিক অভিজ্ঞতা কোথায়? আমাদের শিক্ষিতসাধারণে র্যাহাদিগকে বড়োলোক বলিয়া জানেন তাহাদের অবশ্য কিছু-না-কিছু যোগ্যতা আছেই। কিন্তু গবর্মেন্ট র্যাহাদিগকে বড়োলোক বলিয়া জানেন, তাহদের বিপুল ঐশ্বর্য, বৃহৎ শিরোপা বা অতিবিনীত সেলামের ক্ষমতা থাকিতে পারে, কিন্তু যথার্থ যোগ্যতা না থাকিতেও পারে। তেমন অত্যাবশ্যক মনে করেন না, সুতরাং নির্বাচনের সময় যথেষ্ট সাবধান ও বিবেচনার সহিত কাজ করা তাহারা অনেকটা বাহুল্য বোধ করিতে পারেন। কিন্তু আমাদের ভাব ঠিক তাহার বিপরীত। গবর্মেন্টকে বাস্তবিক সুপরামর্শ দিয়া দেশের হিতসাধন করিতে হইবে এবং স্বজাতির যোগ্যতা প্রমাণ করিয়া গৌরব লাভ করিব, এই আমাদের উদ্দেশা, কেবলমাত্র সভাগৃহের শোভাসম্পাদনে আমাদের কোনো ফল নাই, স্বাৰ্থ নাই। সুতরাং নির্বাচনের সময় আমাদিগকে সবিশেষ বিবেচনার সহিত কাজ করিতে হইবে। পারেন, আমাদের নির্বাচিত প্ৰতিনিধির সে আশা নাই, সুতরাং খুব মজবুত দেখিয়াই লোক বাছিতে হইবে। অতএব আমাদের হাতে যোগ্য লোক বাছাই হইবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অর্থাৎ, গ্রামা ভাষায় যাহাকে “গরাজ্য” বলে তাহার দ্বারা সংসারের অধিকাংশ কাজ হইয়া থাকে { মন্ত্রিসভায় দেশীয় লোক নির্বাচন কবিতে গবর্মেন্টের কোনো গরজ দেখা যাইতেছে না। অর্ধ অনিচ্ছার সহিত তাহারা একটা আপসে মীমাংসা করিতে চাহেন। লর্ড ক্রস বলেন যদি ভারতশাসনকর্তারা ইচ্ছা! করেন তো নিজে গুটিকতক দেশীয় লোক নির্বাচন করিয়া মন্ত্রীসংখ্যা কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি করিতে পারেন। আমাদের ভারতরাজকর্মচারীগণও এ বিষয়ে যে বিশেষ উৎসাহ প্ৰকাশ করিতেছেন তাহা বলিতে পারি। | অতএব যখন দেশীয় মন্ত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি করিতে গবর্মেন্টের কিছুমাত্র গরজ নাই, অর্থাৎ তাহদের মতে দুই-চারিটা দেশী লোককে ডাকিলেও চলে, না ডাকিলে হয়তো আরো ভালো চলে, তখন তাহদের হাতে নির্বাচনের ভার কোন সাহসে দিই! গরজ আমাদেরই। অতএব আমরাই যথার্থ নির্বাচনের অধিকারী। এমন দুরাশাও আমরা করিতেছি না যে, আমাদের প্রতিনিধিদের হস্তে রাজক্ষমতা থাকিবে। তাহারা কেবল নিবেদন করিবেন মাত্র; বিচারের ভার, কার্যের ভার তোমাদের। আমরা কেবল জানাইতে চাহি ও জানিতে চাহি। তোমরা আমাদের উপর আইন খাটাইবে। আমরা আমাদের গায়ের মাপ দিতে চাহি। দেখাইতে চাহি কোথায় কষাকষি করিলে আমাদের নিশ্বাস রোধ হইয়া আসে, এবং কোথায় ঢ়িলা হইলে আমাদের অনাবশাক বায়বাহুলা ও আরামের ব্যাঘাত হয়। অতএব আমাদেরই লোক যদি না পাঠাইলাম। তবে আমাদের আবশ্যক কে জানাইবে ? তোমরা যাহাকে নির্বাচন করিয়া সম্মানিত কর সে স্বভাবতই কিয়ৎ পরিমাণে তোমাদের অঙ্গভঙ্গির অনুকরণ করে ও তোমাদেরই ধ্বনিকে প্ৰতিধ্বনিত করে মাত্ৰ। তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কথা জানাইতে সহজে তাহার প্রবৃত্তি হইতেই পারে না। এ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে গেলে একটি প্রশ্নের মীমাংসা আবশ্যক। তোমরা যে অতিরিক্ত আরো গুটিকতক দেশীয় লোক মন্ত্রিসভায় আহবান করিতেছ। তাহার উদ্দেশ কী? আমাদের অভাব, আমাদের আবশ্যক, আমাদের লোকের মুখে আরো ভালো কবিয়া জানিতে চাও। ইহা ছাড়া দেশীয় মন্ত্রিবৃদ্ধির আর কোনো যুক্তিসংগত কারণ থাকিতে পারে না। যদি বাস্তবিক সেই উদ্দেশ্যই থাকে। তবে সহজেই বুঝিতে পরিবে তোমাদের নির্বাচনে তাহা সম্পূৰ্ণ সাধিত হইবার সম্ভাবনা অল্প, এবং আমাদের নির্বাচনেই সেই উদ্দেশ্য বাস্তবিক সফল হইবে। আগে একটা উদ্দেশ্য পরিষ্কাররূপে স্থির করো, তার পরে সে উদ্দেশ্য কিসে সিদ্ধ হইবে বিবেচনা করিয়া দেখো।