পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্ৰহ্মমন্ত্র S. 89 মানবপ্রকৃতির নিজগুণেই গ্রাম পাচলি অপেক্ষা বাল্মীকির কাব্যকে রমণীয় বলিয়া জ্ঞান করিবে। তেমনি যে ঋষি ব্ৰহ্মের অমৃত্যরস আস্বাদন করিয়াছেন, যিনি তাহাকে পৃথিবীর অন্য সকল হইতেই প্রিয় বলিয়া জানিয়াছেন তিনি ইহা সহজেই বুঝিয়াছেন যে ব্ৰহ্ম স্বভাবতই আত্মার পক্ষে সর্বাপেক্ষা প্রতিদায়ক- ব্রহ্মের প্রকৃত পরিচয় পাইবামাত্র আত্মা স্বভাবতই তাহাকে পুত্র বিত্ত ও অন্য সকল হইতেই প্ৰিয়তম বলিয়া বরণ করে। ব্ৰহ্মের সহিত এই পরিচয় যে কেবল আত্মার আনন্দসাধনের জন্য তােহা নহে, সংসারযাত্রার পক্ষেও তাহা না হইলে নয়। ব্ৰহ্মকে যে ব্যক্তি বৃহৎ বলিয়া না জানিয়া সংসারকেই বৃহৎ বলিয়া জানে, সংসারযাত্রা সে সহজে নির্বাহ করিতে পারে না— সংসার তাহাকে রাক্ষসের ন্যায় গ্ৰাস করিয়া নিজের জঠরানলে দগ্ধ করিতে থাকে! এইজনা ঈশোপনিষদে লিখিত হইয়াছে ঈশা বাস্যমিদং সৰ্ববং যৎকিঞ্চি জগতাং জগৎ ঈশ্ববের দ্বারা এই জগতের সমস্ত যাহা কিছু আচ্ছন্ন জানিবে এবং 6ठन उI(सन् 5छेशी भी १५: कनाशिक्षन६ তাহার দ্বারা যাহা দত্ত, যাহা কিছু তিনি দিতেছেন, তাহাই ভোগ করিবে- পরের ধনে লোভ করিবে সংসারযাত্রার এই মন্ত্র। ঈশ্বরকে সর্বত্র দর্শন করিবে, ঈশ্বরের দত্ত আনন্দ-উপকরণ উপভোগ করিবে, লোভের দ্বারা পরকে পীড়িত করিবে না ; যে ব্যক্তি ঈশ্বরের দ্বারা সমস্ত সংসারকে আচ্ছন্ন দেখে সংসার তাহার নিকট একমাত্ৰ মুখ্যাবস্তু নহে- সে যাহা ভোগ করে তাহা ঈশ্বরের দান বলিয়া ভোগ করে- সেই ভোগে সে ধর্মের সীমা লঙঘন করে না- নিজের ভোগমত্ততায় পরকে পীড়া দেয় না। সংসারকে যদি ঈশ্বরের দ্বারা আবৃত না দেখি, সংসারকেই যদি একমাত্র মুখা লক্ষ বলিয়া জানি, তবে সংসারসূখের জন্য আমাদের লোভের অন্ত থাকে না, তবে প্রতোক তুচ্ছ বস্তুর জন্য হানাহানি কড়াকড়ি পডিয়া যায়, দুঃখ হলাহল মথিত হইয়া উঠে ! এইজনা সংসারীকে একান্ত নিষ্ঠার সহিত সর্বব্যাপী ব্ৰহ্মকে অবলম্বন করিয়া থাকিতে হইবে, কারণ, সংসারকে ব্ৰহ্মের দ্বারা বেষ্টিত জানিলে এবং সংসারের সমস্ত ভোগ ব্ৰহ্মের দান বলিয়া জানিলে তবেই কল্যাণের সহিত সংসারযাত্ৰা নির্বাহ সম্ভব হয়। পবের শ্লোকে বলিতেছেন :- কুর্ববন্নেবেহ কৰ্ম্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ এবং তুয়ি নানা থেতোহস্তি ন কৰ্ম্ম লিপ্যতে নরে। কর্ম করিয়া শত বৎসর ইহলোকে জীবিত থাকিতে ইচ্ছা করিবে- হে নর, তোমার পক্ষে ইহার আর অন্যথা নাই, কমে লিপ্ত হইবে না। এমন পথ নাই! কর্ম কবিতেই হইবে এবং জীবনের প্রতি উদাসীন হইবে না, কিন্তু ঈশ্বর সর্বত্র আচ্ছন্ন করিয়া আছেন ইহাই স্মরণ করিয়া কর্মের দ্বারা জীবনের শতবর্ষ যাপন করিবে। ঈশ্বর সর্বত্র আছেন অনুভব করিয়া ভোগ কবিতে হইবে এবং ঈশ্বর সর্বত্র আছেন অনুভব করিয়া কর্ম করিতে হইবে। সংসারের সমস্ত কর্তব্য পরিত্যাগ করিয়া কেবল ব্ৰহ্মে নিরত থাকা তাহাও ঈশোপনিষদের উপদেশ NS অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যে অবিদ্যামুপাসতে। ততো ভূয় ইব তে তমো যা উ বিদায়াং রতাঃ। যাহারা কেবলমাত্র অবিদ্যা অর্থাৎ সংসারকর্মেরই উপাসনা করে তাহারা অন্ধতমাসের মধ্যে প্রবেশ করে, তদপেক্ষা ভূয় অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করে যাহারা কেবলমাত্র ব্ৰহ্মবিদ্যায় নিরত। ঈশ্বর আমাদিগকে সংসারের কর্তব্য কর্মে স্থাপিত করিয়াছেন। সেই কর্ম যদি আমরা ঈশ্বরের কর্ম বলিয়া না জানি, তবে পরমার্থের উপরে স্বাৰ্থ বলবান হইয়া উঠে এবং আমরা অন্ধকারে পতিত হই।