পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঔপনিষদ ব্ৰহ্ম Ꭹ Ꮹ Ꮹ শর যেমন লক্ষোর মধ্যে প্রবেশ করিয়া আচ্ছন্ন হইয়া যায় সেইরূপ ব্ৰহ্মের মধ্যে তন্ময় হইয়া যাইবে। উপমাটি যেমন সরল, উপমার বিষয়গত কথাটি তেমনি গভীর। এখন সে অরণ্য নাই, সে ধনুঃশর নাই; এখন নিরাপদ নগরনগরী অপরূপ অস্ত্রশস্ত্ৰে সুরক্ষিত। কিন্তু সেই আরণ্যক ঋষিকবি যে সত্যকে সন্ধান করিয়াছেন সেই সত্য আদ্যকার সভ্য যুগের পক্ষেও দুর্লভ। আধুনিক সভ্যতা কামান-বন্দুকে ধনুঃশরকে জিতিয়াছে কিন্তু সেই কত শত শতাব্দীর পূর্ববতী ব্ৰহ্মজ্ঞানকে পশ্চাতে ফেলিতে পারে নাই। সমস্ত প্রত্যক্ষ পদার্থের মধ্যে তাঁদে তৎ সত্যং, সেই- যে একমাত্র সত্য, যদি অণুভ্যোণুচ, যাহা অণু হইতেও অণু, অথচ যস্মিন লোকা নিহিতা লোকিনশ্চ, যাহাতে লোক-সকল এবং লোকবাসী-সকল নিহিত রহিয়াছে, সেই অপ্রত্যক্ষ ধ্রুব সত্যকে শিশুতুল্য সরল ঋষিগণ অতি নিশ্চিতরূপে জানিয়াছেন। তদমুতং, তাহাকেই তাহারা অমৃত বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন এবং শিষ্যকে ডাকিয়া বলিয়াছেন তদ্ভাবগতেন চেতসা, তদ্ভাবগত চিত্তের দ্বারা, তাহাকে লক্ষ করো— তদবেদ্ধব্যং সোম্য বিদ্ধি, তাহাকে বিদ্ধ করিতে হইবে, হে সৌম্য, তাহাকে বিদ্ধ করো! শরবত্তন্ময়ো ভবেৎ। লক্ষ্যপ্রবিষ্ট শরের ন্যায় তাহারই মধ্যে তন্ময় হইয়া যাও। সমস্ত আপেক্ষিক সত্যের অতীত সেই পরম সত্যকে কেবলমাত্র জ্ঞানের দ্বারা বিচার করা সেও সামান্য কথা নহে, শুদ্ধ যদি সেই জ্ঞানের অধিকারী হইতেন তবে তাহাতেও সেই স্বল্পাণী বিরলবসন সরলপ্রকৃতি বনবাসী প্রাচীন আর্য ঋষিদের বৃদ্ধিশক্তির মহৎ উৎকর্ষ প্রকাশ পাইত। কিন্তু উপনিষদের এই ব্ৰহ্মজ্ঞান কেবলমাত্ৰ বুদ্ধিবৃত্তির সাধনা নহে— সকল সত্যকে অতিক্রম করিয়া ঋষি যাহাকে একমাত্র তাদেতৎ সত্যং বলিয়াছেন, প্রাচীন ব্ৰহ্মজ্ঞদের পক্ষে তিনি কেবল জ্ঞানলভা একটি দার্শনিক তত্ত্বমাত্র ছিলেন না— একাগ্রচিত্ত ব্যাধের ধনু হইতে শার যেরূপ প্রবলবেগে প্ৰত্যক্ষ সন্ধানে লক্ষ্যের দিকে ধাবমান হয়, ব্ৰহ্মর্ষিদের আত্মা সেই পরম সত্যের মধ্যে প্ৰবেশ করিয়া তন্ময় হইবার জন্য সেইরূপ আবেগের সহিত ধাবিত হইত। কেবলমাত্র সত্যনিরূপণ নহে, সেই সত্যের মধ্যে সম্পূৰ্ণ আত্মসমর্পণ। তাহদের লক্ষ্য ছিল। BBBBSS SBDD DDS SBBBLL KK DBBDDS DBDBBD DuBDS DBD BB BuuBD BDSBB BBB BD অধিকার কবিয়া নাই, তাহাকে আশ্রয় করিয়াই আমাদের আত্মার অমরত্ব। এইজন্য সেই অমৃত পুরুষ ছাডিয়া আমাদের আত্মার অন্য গতি নাই ঋষিরা ইহা প্ৰত্যক্ষ জানিয়াছেন এবং বলিয়াছেন স যঃ অনাম আত্মনঃ প্ৰিয়ং ব্ৰবাণং ব্ৰয়াৎ। অর্থাৎ, যিনি পরমাত্মা ব্যতীত অনাকে আপনার প্ৰিয় করিয়া বলেন- প্ৰিয়ং রোৎস্যতীতি- তাহার প্রিয় বিনাশ পাইবো! যে সতী আমাদের জ্ঞানের পক্ষে সকল সত্যের শ্রেষ্ট, আমাদের আত্মার পক্ষে তাহাই সকল প্ৰিয়ের প্ৰিযতম।-- তদে তৎ প্ৰেয়ঃ পুত্ৰাৎ প্রেয়ো বিত্তাৎ প্রেয়োহনাত্মাৎ সর্ববস্মাৎ অন্তরতরাং যদায়মাত্মা। এই-যে সর্বাপেক্ষা অন্তরতর পরমাত্মা ইনি আমাদের পুত্র হইতে প্রিয়, বিত্ত হইতে প্রিয়, অন্য সকল হইতে প্রিয়। তিনি শুষ্ক জ্ঞানমাত্র নহেন, তিনি আমাদের আত্মার প্ৰিয়তম। আধুনিক হিন্দুসম্প্রদায়ের মধ্যে যাহারা বলেন ব্ৰহ্মকে আশ্রয় করিয়া কোনো ধর্ম সংস্থাপন হইতে পারে না, তাহা কেবল তত্ত্বজ্ঞানীদের অবলম্বনীয়, তাহারা উক্ত ঋষিকাব্য স্মরণ করবেন। ইহা কেবল বাক্যমাত্র নহে- প্রীতিরসকে অতি নিবিড় নিগৃঢ় রূপে আস্বাদন করিতে না পারিলে এমন উদার উন্মত্ত ভাবে এমন সরল সবল কণ্ঠে প্ৰিয়ের প্ৰিয়ত্ব ঘোষণা করা যায় না। তদেতৎ প্ৰেয়ঃ পুত্রাৎ প্রেয়ো বিত্তাং প্রেয়োহনাত্মাৎ সর্ববস্মাৎ অম্ভরতরাং যদয়মাত্মা- ব্ৰহ্মার্ষি এ কথা কোনো ব্যক্তিবিশেষে বদ্ধ করিয়া বলিতেছেন না; তিনি বলিতেছেন না, যে, তিনি আমার নিকট আমার পুত্র হইতে প্রিয়, বিত্ত হইতে প্রিয়, অন্য সকল হইতে প্রিয়- তিনি বলিতেছেন আত্মার নিকটে তিনি সর্বাপেক্ষা অন্তরতর- জীবাত্মামাত্রেরই নিকট তিনি পুত্র হইতে প্রিয়, বিত্ত হইতে প্রিয়, অন্য সকল হইতে প্ৰিয়- জীবাত্মা যখনই তাহাকে যথার্থীরাপে উপলব্ধি করে তখনই বুঝিতে পারে তাহা