পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अigibनों Rà অবশেষে বহুক্ষণ ধরিয়া। এ-গলি ও-গলি সে-গলি করিয়া পুনশ্চ সেই রাজপথে বাহির হইয়া পড়িতেছে, মাঝের হইতে পথ ও পথের কষ্ট বিস্তর বাড়িয়া যাইতেছে। কিন্তু জগতের সমুদয় পথই একই দিকে চলিয়াছে, তবে কোনোটার বা ঘোর বেশি, কোনোটার বা ঘোর কম। এই যা তফাত । ୭୩୭ ମୃ୩ অতএব, পাপ বলিয়া যে একটা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে তাহা নহে। পাপীর যে ধাৰ্মিকের চেয়ে বেশি কিছু আছে তাহা নহে, ধামিকের যতটা আছে পাপীর ততটা নাই এই পর্যন্ত। পাপীর ধর্মবুদ্ধি অচেতন অপরিণত। পাপ অভাব, পাপ মিথা, পাপ মৃত্যু। অতএব আর সকলই থাকিবে, কেবল পাপ থাকিবে না- যেমন অন্ধকার-ঈথর কম্পনাপ্রভাবে উত্তরোত্তর আলোক হইয়া উঠে, তেমনি পাপ চৈতন্যের প্রভাবে উত্তরোত্তর পুণো পরিণত হইতে থাকিবে। 05エ যাহা ধ্রুব তাঁহাই ধর্ম। এই ধুবের আশ্রয়ে আছে বলিয়াই জগতের মৃত্যুভয় নাই। একটি ধ্রুবসূত্রে এই সমস্ত বিশ্বচরাচর মালার মতন গাথা রহিয়াছে। ক্ষুদ্রতম হইতে বৃহত্তম কিছুই সেই সূত্র হইতে বিচ্ছিন্ন নহে, অতএব সকলেই ধর্মের বাধনে বাধা। তবে, সেই বন্ধন সম্বন্ধে কেহ-বা সচেতন কেহ-বা অচেতন। অচেতনের বন্ধনই দাসত্ব, আর সচেতনের বন্ধনই প্ৰেম! 粤 অচৈতন্য আমরা যতখানি অচেতন, ততখানি সচেতন নাহি ইহা নিশ্চয়ই। আমাদেব শরীরের মধ্যে কোথায় কোন যন্ত্র কিরূপে কাজ করিতেছে, তাহার কিছুই আমরা জানি না। একটুখানি যেখানে জানি, সেখানে অনেকখানিই জানি না। শরীরের সম্বন্ধে যাহা খাটে, মনের সম্বন্ধেও ঠিক তাহাই খাটে। আমাদের মনে যে কী আছে তাহা অতি যৎসামান্য পরিমাণে আমরা জানি মাত্র, যাহা জানি না। তাহাই অগাধ । কিন্তু যাহা জানি না। তাহাও যে আছে, ইহা অনেকেই বিশ্বাস করিতে চাহেন না। তাহারা বলেন, মনের কার্য জানা, মনে আছে অথচ জানিতেছি না, এ কথাটাই স্বতে বিরুদ্ধ কথা- এমন স্থলে না-হয় বলাই গোল যে তাহা নাই ! বিজ্ঞান-গ্রন্থে নিম্নলিখিত ঘটনা অনেকেই পড়িয়া থাকিবেন। একজন মুখ দাসী বিকারের অবস্থায় অনগল। লাটিন আওড়াইতে লাগিল। সহজ-অবস্থায় লাটিনের বিন্দুবিসৰ্গও সে জানে না। ক্রমে অনুসন্ধান করিয়া জানা গেল, পূর্বে সে একজন লাটিন পণ্ডিতের নিকট দাসী ছিল। যদিও লাটিন শিখে নাই ও জাগ্ৰত অবস্থায় তাহার লাটিনের স্মৃতি সম্পূৰ্ণ নিদ্রিত থাকে, তথাপি উক্ত পণ্ডিত-কর্তৃক উচ্চারিত লাটিন পদগুলি তাহার মনের মধ্যে সমস্তই বাস করিতেছিল। সকলেই জানেন বিজ্ঞান-গ্রন্থে এরূপ উদাহরণ বিস্তর আছে। বিস্মৃতি আমাদের স্মরণশক্তি অতি ক্ষুদ্র, বিস্মৃতি আতিশয় বৃহৎ। কিন্তু বিস্মৃতি অর্থে তো বিনাশ বুঝায় না। স্মৃতি বিস্মৃতি একই জাতি। একই স্থানে বাস করে। বিস্মৃতির বিকাশকেই বলে স্মৃতি, কিন্তু স্মৃতির অভাবকেই যে বিস্মৃতি বলে তাহা নহে। এই অতি বিপুল বিস্মৃতি আমাদের মনের মধ্যে বাস করিতেছে। বাস করিতেছে মানে কি নিদ্ৰিত আছে, তাহা নহে। অবিশ্রাম কাজ করিতেছে, এবং কোনো কোনোটা স্মৃতিরূপে পরিস্ফুট হইয়া উঠিতেছে। আমাদের রক্তচলাচল অনুভব করিতেছি না বলিয়া যে রক্ত চলিতেছে না, তাহা বলিতে পারি না। পুরুষানুক্রমবাহী কতশত গুণ আমাদের মধ্যে অজ্ঞাতসারে বাস