পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

محبر অনুবাদ-চৰ্চা বাংলা হইতে ইংরাজি S বহুকাল পূর্বে Rhodopis নামে একটি সুন্দরী বালিকা তাহার সঙ্গীদের সঙ্গে নীল নদের জলে স্নান করিতেছিল; এমন সময়ে হঠাৎ একটি ঈগল আকাশ হইতে দ্রুত নামিয়া তাহার ছোটাে চটি জুতোজোড়ার একপাটি ছো মারিয়া লইয়া মরুভূমির উপর দিয়া উড়িয়া গেল। মেয়েটি মনের খেদে বলিয়া উঠিল, “মাগো! আমার বিমাতা কী না জানি বলিবেন!” সেই মুহূর্তেই অত্যন্ত রুষ্টমুখে তাহার বিমাতা স্বয়ং সেইখানে আসিলেন। তিনি বলিলেন, “চলিয়া এসো। তুমি হুই কুম্ভকারের কােছ হইতে যে কলসী কিনিয়াছিলে, সেটা ফাট; রাজার কাছে নালিশ করিতে যাইতে হইবে।” ঈজিপ্টের মহারাজ সে সময়ে মেফিস-নামক প্রাচীন নগরে তাহার দরবার করিতেছিলেন এবং সেখানে সকলেই বড়ো আমোদে ছিল, কারণ রাজা তখন যুদ্ধ হইতে সদ্য ফিরিয়া আসিয়াছেন। তিনি তাহার বাগানে একটি বৃদ্ধ পুরোহিতের সহিত কথা কহিতেছিলেন, এমন সময়ে শেষোক্ত ব্যক্তি কহিলেন, “যুদ্ধ যখন শেষ হইয়া গেল, তখন এবার তুমি সুস্থির হইয়া বিবাহ করিতে পারো।” ܔ রাজা উত্তর করিলেন, “আমার মতো একজন সাদাসিন্দা সৈনিক কী করিয়া যোগ্য কন্যা বাছিয়া লাইবার আশা করিতে পারে? আহা, যদি দেবতা একটা কোনো নিদর্শন দিতেন!” ঠিক সেই সময়ে ঈগলটি আসিল এবং চটিজুতা রাজার কোলের উপর ফেলিয়া দিল। ইহা তঁহার প্রার্থনার উত্তর মনে করিয়া রাজা বলিলেন, “আমি যদি সত্যই ফেরেয়ো (Pharaoh) হই, তবে যে কুমারী এই জুতাটি পরিতে পারে তাহাকে আমি বিবাহ করিব।” রাজদরবারের সকল মহিলা চেষ্টা করিল, কিন্তু চেষ্টা ব্যৰ্থ হইল, কেহই সফলকাম হইল না। যখন এই সম্মানের জন্য শেষ প্রাথিনী হতাশ হইয়া চেষ্টা ত্যাগ করিতে উদ্যত হইয়াছে এমন সময়ে একটি স্ত্রীলোক ভিড়ের মধ্য দিয়া ঠেলিয়া পথ করিয়া ভিতরে উপস্থিত হইল এবং তাহার সঙ্গে একটি ছোটাে বালিকা আসিল। অবশ্য তাহারাই, রডপিস এবং তাহার বিমাতা। \9) রডপিস বলিয়া উঠিল, “কেন, মা, ঐ তো আমার হারানো জুতা!” সভাসদের দল একেবারে নিঃশব্দ; কেননা তাহারা ভাবিতে লাগিল, ইহার পরে না জানি কী ঘটে। ইহার মধ্যে অসামান্য কিছু আছে, এ কথা একটুও না ভাবিয়া ঐ চারুমুখী কন্যাটি নিতান্ত সহজে জুতার মধ্যে পাগলাইয়া দিল এবং ইহার সঙ্গে জুড়ি মেলে এমন একটি পাটি তাহার জেব হইতে বাহির করিল। যখন রডপিসের হাত ধরিয়া রাজা বলিলেন “ফোরেয়োর বাকা কখনো ব্যর্থ হইতে পারে না”, তখন অন্য সুন্দরী কন্যাদের মধ্যে একটি ক্রুদ্ধ গুঞ্জনধ্বনি ফিরিতে লাগিল। যথাসময়ে ইহাকেই রাজা পত্নীরূপে গ্ৰহণ করিলেন। গল্প চলিত আছে যে, রডপিস মাধুর্য ও সাধবীতার জন্য র্তাহার স্বামীর এত একান্ত প্রিয় হইয়াছিলেন যে, তৃতীয় পিরামিড নামে বিদিত পিরামিডটি একদা রডপিসের সমাধিরূপে ব্যবহৃত হইবে বলিয়া, মহিষীর জীবিতকালেই রাজা তাহা নির্মাণ করাইয়াছিলেন।