পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O\y) রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ভাঙা এক ভিত্তি-’পরে ফুল শুভ্ৰবাস, চারি দিকে শুভ্ৰদল করিয়া বিকাশ মাথা তুলে. চেয়ে দেখে সুনীল বিমানে অমর আলোকময় তপনের পানে ; ছোটাে মাথা দুলাইয়া কহে ফুল গাছে, “ লাবণ্য-কিরণ-ছটা আমারো তো আছে!” “লক্ষান্তরেহার্কশ্চ জলেষ পদ্মঃ" ইহাদের মধ্যেও ঐকা! সুন্দর আথনি সুন্দর এবং অনাকে সুন্দর করে। কারণ, সৌন্দর্য হৃদয়ে প্ৰেম জাগ্ৰত করিয়া দেয় এবং প্রেমই মানুষকে সুন্দর করিয়া তুলে। শারীরিক সৌন্দৰ্যও প্রেমে যেমন দীপ্তি পায় এমন আর কিছুতে না। মানুষের মিলনে যেমন প্ৰেম আছে, পশুদের মিলনে তেমন প্ৰেম নাই, এইজনা বোধ করি, পশুদের অপেক্ষা মানুষের সৌন্দৰ্য পরিস্ফুটতর। যে মানুষ ও যে জাতি পাশব, নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, সে মানুষের ও সে জাতির মুখশ্ৰী সুন্দর হইতে পারে না। দেখা যাইতেছে, দয়ায় সুন্দর করে, প্রেমে সুন্দর করে, হিংসায় নিষ্ঠুরতায় সৌন্দর্যের ব্যাঘাত জন্মায়। জগতের অনুকূলতাচরণ করিলে সুন্দর হইয়া উঠি ও প্রতিকূলতা করিলে জগৎ আমাদের গালে কদৰ্যতার চুনকালি মাখাইয় তাহার রাজপথে ছাডিয়া এ শাস্তি বভের সীমানা নয়। আমাদের নিজের মধ্যে সৌন্দর্যের নূ্যনত থাকিলে, আমরা জগতের সৌন্দৰ্য্য-রাজ্যে প্রবেশাধিকার পাই না, ধরণীর ধূলা কাদার মধ্যে লুটাইতে থাকি। শব্দ শুনি, গান শুনি না; চলফিরা দেখিতে পাই, নৃতা দেখিতে পাই না: আহার করিয়া পেট ভবাই, কিন্তু সুস্বাদ কাহাকে বলে জানি না। জগতের যে অংশে কারাগার সেইখানে গর্ত খুভিয়া অত্যন্ত নিরাপদে বৈষয়িক কেঁচো হইয়া বুড়া বয়স পর্যন্ত কাটাইয়া দিই, মৃত্তিকার তলবাসী চক্ষুবিহীন কুমিদের সহিত কুটুম্বিতা করি, ও তাহাদের সহিত জডিত বিজড়িত হইয়া স্তুপাকারে নিদ্ৰা দিই। উদার এই কৃমিরাজ্য হইতে উদ্ধার পাইয়া আমরা সূর্যালোকে আসিতে চাই ; কে আনিবে ? সৌন্দর্য স্বয়ং। কারণ, অশরীর প্ৰেম সৌন্দর্যে শরীর ধারণ করিয়াছে। প্ৰেম যেখানে ভাব, সৌন্দর্য সেখানে তাহার অক্ষার; প্ৰেম যেখানে হৃদয়, সৌন্দয সেখানে গান; প্ৰেম যেখানে প্ৰাণ, সৌন্দৰ্য্য সেখানে শরীর; এইজন্য সৌন্দর্যে প্ৰেম জাগায় এবং প্রেমে সৌন্দর্য জাগাইয়া তুলে । কবিদের কী কাজ এইবার দেখা যাইতেছে। সে আর কিছু নয়, আমাদের মনে সৌন্দর্য উদ্রেক কবিয়া দেওয়া। উপদেশ দিয়া তত্ত্বনির্ণয় করিয়া প্ৰকৃতিকে মৃতদেহের মতো কাটাকুটি করিয়া এ উদ্দেশ্য সাধন করা যায় না। সুন্দরই সৌন্দর্য উদ্রেক করিতে পারে। বৈষয়িকেরা বলেন ইহাতে লাভটা কী ? কেবলমাত্র একটি সুন্দর ছবি পাইয়া, বা সুন্দর কথা শুনিয়া উপকার কী হইল ?? কী জানিলাম ? কী শিক্ষা লাভ