পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

एखानूबान-फाँी 8○為 চলিতে ও এড়াইয়া যাইতে সে খুবই সমর্থ। সময়ে সময়ে অসতর্ক হইয়া সে হাঙরের শিকার হইয়া পড়ে, কিন্তু আমার মনে হয় ইহা কদাচিৎ ঘটিয়া থাকে। এরূপ এক ঘটনা আমি একবার দেখিয়াছিলাম। প্রশান্ত মহাসাগরে, সম্পূর্ণ এক শান্ত দিনে মান্তলের উপরিস্থিত আমার আশ্রয়স্থান হইতে নীলসমুদ্রের তলে যাহা-কিছু ঘটিতেছে একটি শক্তিশালী দূরবীনের মধ্য দিয়া সেসমস্তই অত্যন্ত পরিষ্কাররূপে দৃষ্টিগোচর হইতেছিল। খুর কাছেই প্ৰকাণ্ড এক কাঠের গুড়ি ভাসিতেছিল। ইহা নিরীক্ষণকালে জমকালো এক সমুদ্ৰশুশুক দেখিতে পাইলাম- ইহার চর্ম হইতে সূর্যকিরণে নীল এবং সোনালি আভা ঠিকরাইতেছে; সে আলস্যভরে লেজ নাড়িতে নাড়িতে কাষ্ঠখণ্ডের সম্মুখ দিয়া চলিয়া যাইতেছে, মনে হয় যেন সে আহার করিয়া পরিতৃপ্ত। > > ○ ঠিক তাহার পশ্চাতে কাষ্ঠখণ্ডের তলদেশ হইতে এক অস্পষ্ট ছায়া নিৰ্গত হইয়া উপরিভাগে উৎক্ষিপ্ত হইল, সেখানে এক ঘূর্ণি এবং আবিলতা দেখা দিল এবং ঐ সৌখিন সমুদ্রজীবটি দুই খণ্ডে বিভক্ত হইয়া গেল, উহার একখণ্ড চতুর হাঙরের গলার মধ্য দিয়া অদৃশ্য হইল। অবশ্য দ্বিতীয় অর্ধাংশও সত্বর প্রথমকে অনুসরণ করিয়া হাঙরের কণ্ঠ দিয়া নামিয়া গেল— এবং তখন শেষোক্ত প্ৰাণীও পুনরায় আপনাকে প্রচ্ছন্ন করিল। আমি লক্ষ্য করিলাম, তিনবার এই হাঙর এইরূপ কৌশলে কৃতকার্য হইল; কিন্তু একমাত্র এই উপলক্ষেই আমি দেখিয়াছিলাম যে, একটি শুশুক চতুরতায় একটি হাঙর-কর্তৃক পরাভূত হইয়াছে। δ ο Σ মধ্যযুগে লোকের এইরূপ বিশ্বাস ছিল যে, এক সহস্র খৃস্টীয় শকে জগতের নিশ্চিত অবসান ঘটিবে। খৃস্টান সমাজ এই বিশ্বাস লইয়াই জীবননির্বাহ করিত এবং যে ব্যক্তি ইহাতে সন্দেহ করিত সে শাস্ত্রদ্রোহী বলিয়া গণ্য হইত। মধ্যযুগের অধিকাংশ আইন ও রাজদত্ত দলিল “জগতের আসন্ন দিনান্তকালে?” এই বাক্যের দ্বারা আরম্ভ করা হইত। দশম শতাব্দীর সমাপ্তি যখন নিকটতর হইয়া আসিল তখন ভয়ের পরিমাণও বাড়িয়া উঠিল। য়ুরোপ যেন তখন তাহার শেষ উইল লিখিয়া সারিল এবং চার্চকে যাহা দান করা হইল তাহার অধিকাংশের তারিখ সেই যুগ হইতেই শুরু। লোকেরা তাহাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিতে ইচ্ছা করিল। তাহারা চার্চকে আপনি সম্পত্তি দিয়া ফেলিল, বস্তুত সে সম্পত্তিতে তাহদের আর অধিক প্রয়োজন থাকার কথা ছিল না; এবং সেই একই কারণে সরকারি সম্পত্তির অধিকাংশই পুরোহিতসম্প্রদায়ের অধিকারে আসিল। কিন্তু এক হাজার সােলও কাটিয়া গেল এবং আমাদের ভূমণ্ডল তাহার কক্ষের চতুর্দিকে আবর্তন বন্ধ করিল না। তখন হইতে জগতের অন্ত সম্বন্ধে ভবিষ্যদবাণী উচ্চারণ করিতে অল্প লোকই সাহস করিয়াছে। ο ο Ν. পুরাকালে লোকেরা ধূমকেতুর সহিত সংঘাতকে ভয় ‘করিত, কিন্তু যখন হইতে এই নভশ্চর পদার্থসকল আমাদের নিকট অধিকতর সুবিদিত হইয়াছে তখন তাহারা আর কাহাকেও ভয় দেখাইতে পারে না। ধূমকেতু কোনো প্রাণীর ক্ষতি করিয়াছে এমন একটি ঘটনারও উল্লেখ করা যাইতে পারে না। তাহাদের পুচ্ছ এত সূক্ষ্ম গ্যাসে নির্মিত যে, বহু সহস্র মাইল পুরু হইলেও তাহা একগ্লাস জলের মতোই স্বচ্ছ। এরপ বিশ্বাস করিবার কারণ আছে যে, এই গ্যাস বেনজইন অথবা পেট্রেলিয়ম বাম্পের দ্বারা গঠিত, কিন্তু ধূমকেতুর যে পুচ্ছ বিমানপথচারী দুই জ্যোতিষ্কের মধ্যবর্তী আকাশের সেতু রচনা করিতে পারে তাহার সমস্ত উপাদান সম্ভবত কয়েকটি মাত্র পিপার সামান্য স্থানের মধ্যে প্রবেশযোগ্য। অতএব পেট্রেলিয়ম-বর্ষণ আশঙ্কা করিবার প্রয়োজন নাই।