পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 So রবীন্দ্র-রচনাবলী > > ○ কিন্তু অন্যসকল বিপত্তি আছে। আমাদের জীবিতকালের মধ্যেই দেখিয়াছি বাহিরের কোনো কারণ বাতিরেকেও আমাদের ভূমণ্ডল বিদীর্ণ হইয়াছে। ১৮৮৩ খৃস্টাব্দে আগস্ট মাসে সুণ্ড দ্বীপে কারাগাতোয়া-নামক একটি ক্ষুদ্র জ্বালামুখীর সমুদ্রতলবতী একটি স্থানে এইরূপ ঘটিয়া অগ্নিময় গর্তের মধ্যে সমুদ্রজলের প্রবেশপথ হইয়াছিল। অগ্নিগহবর সমুদ্রকে মেঘলোকে উৎক্ষিপ্ত করিয়া দিয়াছিল; তাহাতে প্ৰকাণ্ড তরঙ্গ সৃষ্ট হইয়া তাহা তটভূমিতে এক শত ফুট উর্ধেব উদ্ভুিত হইয়াছিল। তাহা জ্বালামুখীর নিকটবতী সমস্ত শহর ধ্বংস করিয়া দিয়াছিল এবং পঞ্চাশ হাজার মানুষকে জলমগ্ন রিয়াছিল। ইহাই পঞ্চাশ হাজার লোকের পক্ষে জগতের অবসান, এবং সেই অবসান সম্পূর্ণ প্ৰতীক্ষিতভাবেই আসিয়াছিল! এই আপৎপাতের বেগকে বহুগুণিত করিয়া কল্পনা করা যাক- মনে করা যাক হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের Mounio Los -নামক পৃথিবীর প্রবলতম দহমান জ্বালামুখী সহসা প্যাসিফিক মহাসাগরে নিমজিত হইয়াছে; তাহা হইলে এমন এক তরঙ্গ সহজেই উঠিতে পারে যাহা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বহু জনসমূহকে ডুবাইয়া দিতে পারে। ইহা বিনা ঘোষণায় কালই, এমন-কি, আজই ঘটিতে পারে। Y S 8 জাপানে চাউল-লুণ্ঠন-ঘটিত গুরুতর দাঙ্গায় পর্যবসিত যে খাদ্যসমস্যা গত কয়দিনের টেলিগ্রামে বর্ণিত হইয়াছে তাহা নুতন ব্যাপার নহে; কারণ বাণিজ্যের শ্ৰীবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি প্রধান আহার্য দ্রব্য পাওয়া কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। মে মাসের শেষভাগে য়োকোহামার একজন পত্ৰলেখক তাহার লিখিত পত্রে নির্দেশ করিয়ছেন যে, বিদেশী চাউল আমদানী ও সংগত মূল্যে উহার বিক্রয় নিয়ন্ত্রিত করার জন্য জাপান গভর্নমেন্ট কতকগুলি বহুপল্লবিত নিয়মপত্র বাহির করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। SS G. তিনি বলিয়াছিলেন। সচরাচর জাপানের প্রয়োজনীয় সমস্ত চাউল প্ৰায় জাপানেই উৎপন্ন হইয়া থাকে, এবং বিদেশী চাউল-সম্বন্ধে বরাবর জাপানের একটি প্রবল বিরুদ্ধ সংস্কার আছে। যাহা হউক ইদানীং জনসংখ্যার বৃদ্ধি-বশত চাউলের খরচ চাউলের জোগানকে অতিক্রম করিয়াছে। তবুও আমদানি করা আহাৰ্য-দ্রব্যে জাপানের আবশ্যকতা অপেক্ষাকৃত অল্প। কারণ, কোরিয়া ও হােক্কেডোর অনেক স্থান এখনো অনাবাদী পড়িয়া আছে এবং দক্ষিণ মাথুরিয়াও জাপানের একটি বৃহৎ শস্যস্থলী। কিন্তু গত কয়েক বৎসর ধরিয়া চাউল-উৎপাদন অপেক্ষা অধিকতর লাভজনক নিষ্কাশনপথে জাপানি শক্তি ধাবিত হইয়াছে। Σ δ No কল্পনা করা যাক, আমাদের পদাতিক সৈন্যের একদল বিশ্রামের জন্য গর্তগড়ের বাহিরে আসিয়াছে। মাটির আঁকাবঁকা ফাটল বাহিয়া দুই মাইল হাটিয়া একটি গ্রামের নিকটে তাহারা উপরিতলে পৌঁছিয়াছে। গ্রামের পূর্বদিকের দেওয়ালকয়টিতে অনেকগুলি ছিদ্র আছে, কিন্তু গ্রামখানির একেবারে ধ্বংস হয় নাই। গ্রামের প্রধান রাস্তায় যখন সৈন্যদল প্ৰবেশ করিল ঠিক সেই সময় কয়েকটি জার্মান কামান, ঐখানে কোথাও ব্রিটিশ কামান না থাকা সত্ত্বেও আন্দাজে শেল নিক্ষেপ করিয়া গ্ৰামময় তাহার সন্ধান করিতেছে। আরো অনেক শেল গ্রাম ছাড়াইয়া রাস্তার উপর বেশ একটু ঘন ঘন পড়িতেছে। এই রাস্তা ধরিয়াই সৈন্যদলকে এক মাইল দুই মাইল দূরে ভাঙা বাড়ির মাটির তলের কুটুরিতে তাহদের যথানির্দিষ্ট বাসায় পৌঁছিতে হইবে। গ্রামের রাস্তা গ্রামখানির সম্মুখভাগের সঙ্গে সমান্তরাল রেখায় উত্তর হইতে দক্ষিণ পর্যন্ত চলিয়া গিয়াছে। যে পর্যন্ত না বর্ষণের ঝড় সাঙ্গ হয়, সে পর্যন্ত রাস্তার পূর্বদিকে বাড়িগুলির নিরাপদ ভাগে সৈন্যদিগকে লাইন ভঙ্গ করিয়া বিশ্রাম করিবার জন্য দলপতি আদেশ করিলেন।