পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SV রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার পরে মৃতদেহকে বিনা শবাধারেই গোরের মধ্যে রাখা হয়; অল্প পরিমাণে এক পাশে কাৎ করিয়া শোয়ানো হয়, যাহাতে মুখ মক্কার দিকে ফিরিয়া থাকে। দেহের উপর অল্প মাটি ফেলা হয় এবং জনতা মৃতব্যক্তির বাড়িতে ফিরিয়া যায়। অনুষ্ঠানের সময় পরিবারের স্ত্রীলোকেরা একত্র হয় এবং বিনা ব্যাঘাতে নিতান্ত অমানুষিক চীৎকার ও বীভৎস উচ্চধ্বনি করিতে থাকে। বস্তুত মৃত্যুর পর হইতেই বরাবর তাহারা এইরূপ কাণ্ড করিয়া আসিতেছে। অনূ্যন আটটি দীর্ঘ দিন ধরিয়া তাহারা অধ্যবসায়সহকারে এই ক্লান্তিকর কণ্ঠচালনা করিয়া থাকে। S \s ভাষা মনুষ্যজাতির কেবলমাত্র মহৎ মিলনসাধক নহে, ইহা পরম বিভাগকারীও বটে। যথা, ব্ৰহ্মদেশে এক জাতি এবং অন্য জাতির মধ্যে তাহদের নিজদেশীয় পর্বতশ্রেণী, নিবিড় বন, বেগবতী। নদী কিংবা বিশাল সমুদ্র অপেক্ষা ভাষাই প্ৰায় অধিকতর অলঙঘ্য ব্যবধান। ধর্ম এবং জাতিগত প্রথার বাধা অপেক্ষা এই ব্যবধান ভাঙিয়া ফেলা অধিকতর কঠিন। শান-মালভূমিতে কখনো বা একই গ্রামে একই ধর্ম ও প্ৰায় একই রূপ প্রথা লইয়া যে জাতিসকল পাশাপাশি বাস করিতেছে, একজন দোভাষীর সাহায্য ভিন্ন তাহদের মধ্যে কোনো বলা-কহা চলিতে পারে না। নিকোবরাবগের নানা দ্বীপে যে-সকল জাতি-সম্প্রদায় বাস করে, যদিও তাহারা একই মূল-বংশের তথাপি তাহদের আন্তরদ্বৈপিক পণ্যবিনিময়-প্ৰথা হিন্দুস্থানী অথবা ইংরেজির মধ্যস্থতায় সম্পাদিত হয়। যে-সকল আণ্ডামানী জাতিসম্প্রদায় একই দ্বীপে বাস করে তাহারা সঙ্কেতের দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা চালায়। যে Chin জাতিগুলি একটিমাত্র পর্বতমালার দ্বারা বিভক্ত অথবা একই উপত্যকার ভিন্ন অংশে পরস্পরের দৃষ্টিগোচরেই বাস করে, তাহদের মধ্যে ভাষার অনুত্তরণীয় বিচ্ছেদ বর্তমান। Σ 8 Ο যে স্তন্যপায়ী জীব বিশেষ কোনো জৈবক্রিয়ার যন্ত্র হইতে বঞ্চিত হইয়াছে সেই প্ৰাণী সাধারণত বাচিতে পারে না। সে তাহার কোনো অঙ্গ হারাইলে তাহা তাহার পক্ষে সংকটজনক হইয়া উঠে। তাহার। পাকস্থলী অপসারিত হইলে দ্রুত তাহার সাংঘাতিক ফল ঘাঁটিতে পারে। ইহাই বিস্ময়ের বিষয় যে, যে-সকল ক্ষতি অনেক সময়ে সামান্য বলিয়া বোধ হয়, স্তন্যপায়ী জীবের পক্ষে তাহাই প্ৰাণহানিকর হইতে পারে। অঙ্গচ্ছেদ-সম্বন্ধে মৎস্য ও অল্প ঘাতকাতর নহে। কিন্তু কীট এই নিয়মের সুস্পষ্ট ব্যতিক্রম, এবং ইহাই জীবনের প্রতি কীটের আকৃষ্টিপরতা সপ্রমাণ করে। যে-সব হানির দ্বারা উন্নততর শ্রেণীর প্রাণীদের মধ্যে প্রায় অচিরাৎ মৃত্যু ঘটাইতে পারে, অনেক জাতীয় কীট সেইসব হানি অতিক্ৰম করিয়াও বঁচিয়া থাকিতে সমর্থ। S 8S একটি পতঙ্গের জীবনীশক্তি দেখিয়া Doctor Miller-এর মনোযোগ এই বিষয়ে প্রথম বিশেষভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিল। Doctor Miller স্বয়ং বলিয়াছেন- “আলোচ্য পতঙ্গটিকে ধবিয়া যথাবিহিতরূপে ক্লোরোফরম করিয়া আমার একজন সহকারী আমার নিকটে আনিয়াছিলেন। মৃতু্যাকে দ্বিগুণতর সুনিশ্চিত করিবার জন্য তাহার বুকের (thorax) ভিতর দিয়া আমি একটি জ্বলন্ত ভূঁচ প্রবেশ করাইয়া দিয়াছিলাম। চারি দিন পরে একদিন সন্ধ্যাকালে আমি তাহার প্রতি পুনরায় দৃষ্টিপাত করিলাম। তাহাকে আড়ষ্ট এবং মৃত বলিয়া বোধ হইল এবং ভাবিলাম শীঘ্রই এটি আলমারিতে তুলিবার যোগ্য হইবে। পরদিন প্ৰাতে যখন দেখিলাম সে অনেক ডজন ডিম রাত্রির মধ্যে পাড়িয়া রাখিয়াছে, তখন আমার কিরূপ বিস্ময় হইয়াছিল, কল্পনা করিয়া দেখো ।