পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী লইয়া যাইব।” চতুর্থ এক ব্যক্তি আমার কানে কানে বলিল, “মহাশয়, Momus-এর সঙ্গে আসুন, আমিই মোমস। ছয় সূতে পরা দমে বিয়ারিজে।” আমার চারি দিকে আর সকলে “পাচ সৃ” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। “দেখুন মহাশয়, সুন্দর গাড়িখানি- বিয়ারিজের সুলতান; পােচ সূতে এক 部门 SS যে আমার সঙ্গে প্ৰথম কথা বলিয়াছিল এবং আমার ডান হাত ধরিয়াইছিল। সেই শেষকালে সকল কোলাহলের উপরে গলা চড়াইল। সে বলিল, “সাহেব, আমিই আপনার সঙ্গে প্রথম কথা বলিয়াছি আমাকেই পছন্দ করা উচিত।” অন্য গাড়োয়ানেরা চীৎকার করিয়া উঠিল, “ও পনেরো স চায়।” লোকটি অনায়াসে উত্তর করিল, “মহাশয়, আমি তিন সূ চাই।” নিবিড় নিঃশব্দত বিরাজ করিতে লাগিল। লোকটি বলিল, “আমিই সাহেবের সঙ্গে প্ৰথম কথা বলিয়াছিলাম।” তাহার পরে যখন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা অবাক হইয়া গেছে সেই সুযোগে সে তাড়াতাড়ি নিজের গাড়ির দরজা খুলিল, আমি প্রকৃতিস্থ হইবার সময় পাইবার পূর্বেই আমাকে ভিতরে ঠেলিয়া দিল, দরজাটা আবার বন্ধ করিল, কোচু বাক্সে চড়িয়া বসিল এবং দ্রুত ঘোড়া ছুটাইয়া চলিল। >bro গাড়িখানা সম্পূর্ণ নূতন এবং বেশ ভালো; ঘোড়াগুলি অতি উৎকৃষ্ট। অর্ধ ঘণ্টার ও অল্প সময়ে আমরা বিয়ারিক্তে আসিয়া পড়িলাম। সেখানে পৌঁছিয়া, সস্তা চুক্তির সুবিধা গ্ৰহণ করিতে অনিচ্ছক ছিলাম বলিয়া আমি টাকার থলি হইতে পনেরোটি সু লইলাম এবং গাড়োয়ানকে তাঁহাই দিলাম। আমি চলিয়া যাইতে উদ্যত ছিলাম, কিন্তু সে আমার হাত ধরিল। সে বলিল, “মহাশয়, আমার প্রাপ্য মাত্র তিন সূ!” আমি উত্তর করিলাম, “হাঃ! তুমি আমাকে প্রথমে পনেরো স বলিয়াছিলে। পনেরো সুই দিব।” “মোটেই না। সাহেব! আমি বলিয়ছিলাম আপনাকে তিন সূ'তে লইবা, সুতরাং ভাড়া তিন সু!” যাইতে বলিলাম, “লোকটা খাটি বটে!” অন্যান্য যাত্রীরাও আমার মতো তিন সূ মাত্রই দিয়াছিল। > br> সারাদিন সমুদ্রতীরে ঘুরিয়া বেড়াইবার পর সন্ধ্যা হইয়া আসিল এবং আমি Bayonne-L FFo. কথা চিন্তা করিতে লাগিলাম। আমি ক্লান্ত হইয়া পড়িয়ছিলাম এবং যে উৎকৃষ্ট যান ও সাধু সারথি আমাকে সেখানে পৌঁছাইয়া দিয়াছিল তাহারই কথা স্মরণ করিয়া আমি বিশেষ কিছু আনন্দ বোধ করিলাম। যখন আমি পুরাতন বন্দর হইতে ফিরিবার মুখে ঢালু। পথে উঠিতেছিলাম তখন সমতল দেশে দূরের ঘড়িগুলিতে আটটা বাজিতেছিল। চারি দিক হইতে যে সব পদাতিক ভিড় করিয়া আসিতেছিল, এবং মনে হইল তাহারা গ্রামের প্রবেশপথে গাড়ি দাড়াইবার জায়গায় যাইতেছে, তাহদের প্রতি কোনো মনোযোগ দিই নাই। সন্ধ্যাটি চমৎকার হইয়াছিল, কয়েকটি তারা যেন গোধূলির নির্মল আকাশ বিদীর্ণ করিতে সুরু করিয়াছিল; শাস্তপ্রায় সমুদ্রে বিপুল তৈলস্তরণের মতো একটি নিস্তেজ অস্বচ্ছ আভা byr NR অন্ধকার নিবিড়ােতর হইয়া উঠিল এবং অকস্মাৎ কোন এক সময়ে Bayonne নগর এবং আমার সরাইখানার চিন্তা আমার ধ্যানের মাঝখানে আসিয়া পড়িল। আমি আবার চলা আরম্ভ করিলাম এবং যে জায়গা হইতে গাড়ি ছাড়ে সেইখানে আসিয়া পৌছিলাম। একটিমাত্র গাড়ি অবশিষ্ট ছিল। ভূমিতলে স্থাপিত একটি প্ৰকাণ্ড লণ্ঠনের আলোকে আমি তাহা দেখিলাম। ইহা চারি জনের সীট-বিশিষ্ট গাড়ি। তিনটি সীট ইতিমধ্যেই অধিকৃত। আমি নিকটস্থ হইতে একটি চীৎকারস্বর উঠিল, “এই যে সাহেব, শীঘ্ৰ