পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহজ পাঠ 890 সঙ্গে ছিল লুচি, আলুর দম আর পাঠার মাংস। তাই খেলেন। আক্রম খেলো চাটুনি দিয়ে রুটি। তখন বেলা পড়ে আসছে। গাছের ফাক দিয়ে বাকা হয়ে রৌদ্র পড়ে। প্ৰকাণ্ড অর্জন গাছের উপর কতকগুলো বান্দর; তাদের লম্বা ল্যাজ কুলছে। শক্তিবাবু কিছু দূরে গিয়ে দেখলেন, একটা ছোটাে সোতা। তাতে এক হাঁটুর বেশি জল হবে না। তার ধারে বালি। সেই বালির উপর বড়ো বড়ো থাবার দাগ। নিশ্চয় বাঘের থাবা। শক্তিবাবু ভাবতে লাগলেন, কী করা কর্তব্য। অঘান মাসের বেলা। পশ্চিমে সূৰ্য অস্ত গেল। সন্ধ্যা হতেই ঘোর অন্ধকার। কাছে তেঁতুল গাছ। তার উপরে দুজনে চড়ে বসলেন। গাছের গুড়ির সঙ্গে চাদর দিয়ে নিজেদের বাধলেন। পাছে ঘুম এলে পড়ে যান। কোথাও আলো নেই। তারা দেখা যায় না। কেবল অসংখ্য জোনাকি গাছে গাছে জ্বলছে। prinä একটু নিদ্রা এসেছে এমন সময় হঠাৎ ধুপ করে একটা শব্দ হওয়াতে চমকে জেগে উঠলেন। দেখলেন। কখন বাধন আলগা হয়ে আক্রম নীচে পড়ে গেছে। শক্তিনাথ তাকে দেখতে তাড়াতাড়ি নেমে এলেন। হঠাৎ দেখেন, কাছেই অন্ধকারে দুটাে চোখ জ্বলজ্বল করছে। কী সর্বনাশ! এ তো বাঘের চোখ। বন্দুক তোলবার সময় নেই। ভাগ্যে দুজনের কাছে দুটাে বিজলি বাতির মশাল ছিল। সে-দুটাে যেমনি হঠাৎ জ্বালানাে অমনি বাঘ ভয়ে দৌড় দিলে। সে-রাত্রি আবার দুজনের গাছে কাটল। পরের দিন সকাল হল। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা মেলে না, যতই চলেন জঙ্গল বেড়ে যায়। গায়ে কাটার আঁচড় লাগে। রক্ত পড়ে। খিদে পেয়েছে। তেষ্টা পেয়েছে। এমন সময় মানুষের গলার শব্দ শোনা গেল। এক দল কাঠারিয়া কাঠ কাটতে চলেছে। শক্তিবাবু বললেন- তোমাদের ঘরে নিয়ে চলো। রাস্তা ভুলেছি। কিছু খেতে দাও। নদীর ধারে একটা ঢিবির পরে তাদের কুঁড়ে ঘর। গোলপাতা দিয়ে ছাওয়া। কাছে একটা মস্ত বটগাছ। তার ডাল থেকে লম্বা কুরি নেমেছে r সেই গাছে যত রাজ্যের পাখির বাসা। কাঠুরিয়ারা শক্তিবাবুকে আক্রমকে যত্ন ক'রে খেতে দিলে। তালপাতার ঠোঙায় এনে দিলে চিড়ে আর বনের মধু। আর দিলে ছাগলের দুধ। নদী থেকে ভাড়ে ক’রে এনে দিলে জল। রাত্রে ভালো ঘুম হয় নি। শরীর ছিল ক্লান্ত । শক্তিবাবু বটের ছায়ায় শুয়ে ঘুমোলেন। বেলা যখন চার প্রহর তখন কাঠুরিয়াদের সর্দার পথ দেখিয়ে নীেকোয় তাদের পৌঁছিয়ে দিলে। শক্তিবাবু দশ টাকার নোট বের ক'রে বললেন, বড়ো উপকার করেছ, বকশিশ লও। সর্দার হাতজোড় ক’রে বললে, মাপ করবেন, টাকা নিতে পারব না- নিলে অধৰ্ম হবে। এই বলে নমস্কার ক’রে সর্দার চ’লে গেল। একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিানু “ চেয়ে দেখো” “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিনু । চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা, কড়িতে, ইটে-গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা। চলিয়াছে দুদ্দাড় জানালা দরজা। রাস্তা চলেছে যত অজগর সাপ, পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ ধাপ। দোকান বাজার সব নামে আর উঠে, ছাদের গায়েতে ছাদ মরে মাথা কুটে । হাওড়ার ব্রিজ চলে মস্ত সে বিছে, হ্যারিসন রোড চলে তার পিছে পিছে। মনুমেন্টের দোল যেন ক্ষাপা হাতি শূন্যে দুলায়ে শুড় উঠিয়াছে মাতি। অঙ্কের বই ছোটে, ছোটে ব্যাকরণ।