পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उळल5a 8 ○ সর্বশ্রেষ্ঠ অধীনতাকেই যথার্থ স্বাধীনতা বলে। কেবল মাত্র স্বাতন্ত্র্যাকে শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা বলে না। যথার্থ যে রাজা সে প্রজার অধীন, পিতা সন্তানের অধীন, দেবতা এই জগতের অধীন। অর্থাৎ স্বাধীনভাবে অধীনতাকেই শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা বলে। জড় পদার্থ অধীনভাবে অধীন, মানুষেরা অধীনভাবে স্বাধীন, আর দেবতারা স্বাধীনভাবে অধীন। আমরা যখন মহত্ত্ব লাভ করিব, তখন আমরা জগতের দাসত্ব করিব, কিন্তু সেই দাসত্ব করাকেই বলে রাজত্ব করা। আর স্বতন্ত্র হওয়াকেই যদি স্বাধীন হওয়া বলে তাহা হইলে ক্ষুদ্রতাকেই বলে স্বাধীনতা, বিনাশকেই বলে স্বাধীনতা। আত্মা আত্মগঠন সকল দ্রব্যই যাহা-কিছু নিজের অনুকুল উপযোগী তাহাই আপন শক্তি-প্রভাবে চারি দিক হইতে আকর্ষণ করিতে থাকে, বাকি আর সকলের প্রতি তাহার তেমন ক্ষমতা নাই। নিজেকে যথাযোগ্য আকারে ব্যক্তি ও পরিপুষ্ট করিবার পক্ষে যে-সকল পদার্থ সর্বাপেক্ষা উপযোগী উদ্ভিজশক্তি কেবল তাহাই জল বায়ু মৃত্তিকা হইতে গ্রহণ করিতে পারে, আর কিছুই না। মানুষের জীবনীশক্তিও কিছুতেই আপনাকে উদ্ভিদশরীরের মধ্যে ব্যক্তি করিতে পারে না। সে নিজের চারি দিকে এমন সকল পদার্থই সঞ্চয় করিতে পারে যাহা তাহার নিজের প্রকাশের পক্ষে সর্বাপেক্ষা অনুকুল। মনের মধ্যে একটা পাপেৰ সংকল্প তাহার চারি দিকে সহস্ৰ পাপের সংকল্প আকর্ষণ করিয়া আপনাকে আকারবদ্ধ করিয়া তুলে ও প্রতিদিন বৃহৎ হইতে থাকে। পুণ্যসংকল্পও সেইরূপ। সজীবতার ইহাই লক্ষণ। আমরা যখন একটি প্ৰবন্ধ লিখি, তখন কিছু সেই প্রবন্ধের প্রত্যেক ভাব প্ৰত্যেক কথা ভাবিয়া লিখিতে বসি না। একটা মুখ্য সজীব ভাব যদি আমার মনে আবির্ভূত হয়, তবে সে নিজের শক্তি-প্রভাবে আপনার অনুকুল ভাব ও শব্দগুলি নিজের চারি দিকে গঠিত করিতে থাকে। আমি যে-সকল ভাব কোনোকালেও ভাবি নাই তাহাদিগকেও কোথা হইতে আকর্ষণ করিয়া আনে। এইরূপে সে একটি পরিপূর্ণ প্ৰবন্ধ-আকার ধারণ করিয়া আপনাকে আপনি মানুষ করিয়া তুলে। এইজনা, প্রবন্ধের মর্মস্থিত মুখ্য ভাবটি যত সজীব হয় প্ৰবন্ধ ততই ভালো হয়; নিজীব ভােব আপনাকে আপনি গড়িতে পারে না, বাহির হইতে তাহার কাঠামো গড়িয়া দিতে হয়। এই নিমিত্ত ভালো লেখা লেখকের পক্ষেও একটি শিক্ষা। তিনি যতই অগ্রসর হইতে থাকেন ততই নুতন জ্ঞান লাভ করিতে থাকেন। আত্মার সীমা আমার মনে হয়, মানুষের আত্মাও এইরূপ ভাবের মতো। ভাব নিজেকে ব্যক্ত করিতে চায়। যেটি তাহার নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ বাহ্য বিকাশ তাহাই আশ্রয় করিতে করিতেই তাহার ক্রমাগত পুষ্টিসাধন হয়। আমরা মনের মধ্যে যাহা অনুভব করি। কাৰ্যই তাহার বাহ্য প্রকাশ। এইজন্য আমাদের অধিকাংশ অনুভব কাজ করিবার জন্য ব্যাকুল, আবার কাজ যতই সে করিতে থাকে ততই সে বাডিয়া উঠিতে থাকে। আমাদের আত্মাও সেইরূপ সর্বাপেক্ষা অনুকুল অবস্থায় নিজেকে প্রকাশ করিতে চায়। এবং সেই প্রকাশচেষ্টা-রূপ কাৰ্য্যেতেই তাহার উত্তরোত্তর পুষ্টিসাধন হইতে থাকে। চারিদিকের বাতাস হইতে সে আপনার অনুরূপ ভাবনা কামনা প্ৰবৃত্তি আকর্ষণ করিয়া নিজের আবরণ, নিজের সীমা নিজে রচনা করিতে থাকে। অবশিষ্ট আর কিছুরই উপরে তাহার কোনো প্ৰভুত্ব নাই। আমরা সকলেই বন্ধু বান্ধব ও অবস্থার দ্বারা বেষ্টিত হইয়া একটি.যেন ডিম্বের মধ্যে বাস করিতেছি, ঐটুকুর মধ্য হইতেই আমাদের উপযোগী খাদ্য শোষণ করিতেছি। একটি ব্যক্তিবিশেষকে যখন আমরা দেখি তখন তাহার চারি দিকের